তিনদিন ধরে বন্ধ চবির শাটল ট্রেন, ভোগান্তিতে হাজারো শিক্ষার্থী
শাটলে দুর্ঘটনার জেরে লোকোমাস্টারকে হুমকির ঘটনায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। গত বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাতে ওই দুর্ঘটনার পর থেকে চবি ক্যাম্পাসে আর কোনো শাটল চলেনি। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়গামী হাজারো শিক্ষার্থী।
রোববার (১০ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, ষোলশহর স্টেশনে ঘণ্টাখানেক দাঁড়িয়ে আছেন শিক্ষার্থীরা। পরে ট্রেন চলবে না শুনে অনেকে বাসায় ফিরে যান। তবে যাদের জরুরি ক্লাস বা পরীক্ষা রয়েছে তারা বাসে করে ক্যাম্পাসে এসেছেন। শহর থেকে ২৪ কিলোমিটার দূরে ক্যাম্পাস অবস্থিত হওয়ায় বাসে পোহাতে হয়েছে দুর্ভোগ।
আরও পড়ুন: চবিতে রাতের শাটলে ছাদে চড়ে ক্যাম্পাসে ফেরার পথে ১৫ শিক্ষার্থী আহত
এদিকে, শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছিল, রোববার থেকে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকবে। তবে নিরাপত্তার অজুহাতে ট্রেন চালাতে অসম্মতি জানিয়েছেন লোকোমাস্টাররা। তাই ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের জন্য আটটি বাসের ব্যবস্থা করেছে। নগরীর ষোলশহর এলাকা থেকে সকাল ৯টায় পাঁচটি বাস এবং বটতলী থেকে তিনটি বাস বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে ছেড়ে যাবে বলে জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ জাগো নিউজকে বলেন, কাল আমার পরীক্ষা। জরুরি প্রয়োজনে আজকে ক্যাম্পাসে আসতে হয়েছে। যেখানে ৪০ মিনিট লাগার কথা সেখানে আজকে দুই ঘণ্টা লেগেছে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা চাই সব স্বাভাবিক থাকুক। আমাদের শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকুক।
নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ফারজানা রহমান বলেন, দুই ঘণ্টা জ্যাম ঠেলে বাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এসেছি। দুর্ঘটনার পরে আজকে তিনদিন হয়ে গেলো। এখনো প্রশাসন কিছুই স্বাভাবিক করতে পারেনি। এটা লজ্জাজনক।
আরও পড়ুন: চবি উপাচার্যের বাসভবন ও পুলিশ ফাঁড়িতে শিক্ষার্থীদের ভাঙচুর
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (৭ সেপ্টেম্বর) শাটলের ছাদে নুইয়ে থাকা গাছের সঙ্গে বাড়ি খেয়ে শিক্ষার্থী আহতের ঘটনায় ফুঁসে ওঠে চবির সাধারণ শিক্ষার্থীরা। প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী এই দুর্ঘটনায় আহত হন। এই খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পাসের মূল ফটক আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।

এক পর্যায়ে হঠাৎ করেই একজন শিক্ষার্থী মৃত্যুর গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে প্রথমে জিরো পয়েন্টে থাকা পুলিশ বক্সে হামলা চালান। এসময় পুলিশ বক্স পুরোটা ভেঙে ফেলা হয় এবং ভেতরে থাকা চেয়ার টেবিল জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এরপর উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালান। সেখান থেকে তারা পরিবহন দপ্তরের দিকে যান এবং তাণ্ডব চালান। এছাড়া শিক্ষক ক্লাবেও হামলা চালান উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা।
শাটল ট্রেন পুনরায় চলাচলের বিষয়ে চবি প্রক্টর ড. নূরুল আজিম সিকদার বলেন, আমরা ট্রেন চলাচলের বিষয়ে কাজ করছি। তবে চট্টগ্রাম রেলওয়ের লোকমাস্টাররা এখনো ট্রেন চলাচলে রাজি হননি। তাই শিক্ষার্থীদের জন্য আটটি বাস বরাদ্দ রাখা হয়েছে। যথাসময়ে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
আরও পড়ুন: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সহিংসতার ঘটনায় ২ মামলা, আসামি ৯০০
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম হলো শাটল ট্রেন। প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী শহর থেকে ক্যাম্পাসে শাটল ট্রেনে যাতায়াত করেন।
আহমেদ জুনাইদ/এমআরআর/এমএস