জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

আল নাহিয়ান খানের ভাইয়ের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীকে নির্যাতনের অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জাবি
প্রকাশিত: ১১:২৭ এএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩

মধ্যরাতে হলের কক্ষে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের ছোট ভাই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আরমান খান যুবর বিরুদ্ধে পিস্তল ঠেকিয়ে এক শিক্ষার্থীকে প্রায় চার ঘণ্টা ধরে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে সংবাদ সম্মেলনে আরমান খান যুবর নির্যাতনের বর্ণনা দেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ইমন।

আরমান খান যুবসহ এ ঘটনায় অন্য অভিযুক্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের ৪২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরাফাত, ৪৫ তম ব্যাচের তুষণসহ নাম না জানা আরেকজন।

এদের মধ্যে আরমান খান যুব ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়ের ছোটভাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১তম ব্যাচের র‌্যাগ রাজাও ছিলেন তিনি। তবে বেশ কয়েকবছর আগে তার ছাত্রত্ব শেষ হলেও বিশেষ প্রভাব খাটিয়ে মওলানা ভাসানী হলের ১২৬ নম্বর কক্ষে একাই থাকছেন যুব। যদিও কক্ষটি চারজনের জন্য বরাদ্দ। কক্ষটিতে নিয়মিত বহিরাগতদের নিয়ে মাদকসেবন ও তুচ্ছ ঘটনায় বহিরাগতদের ধরে এনে নির্যাতনের অভিযোগ আছে যুবর বিরুদ্ধে।

আরও পড়ুন: জবির হলে ছাত্রীকে তিন ঘণ্টা আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ

অন্যদিকে ভুক্তভোগী জাহিদ হাসান ইমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশ অ্যান্ড টেককোলজির ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের (৪৬ তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী। তিনি শাখা ছাত্রলীগে উপ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।

জানা যায়, শাখা ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকলেও ইমন সাভারের রেডিও কলোলি এলাকার শিমুল নামের একটি ভাড়া বাসায় কয়েকবছর ধরে থাকছেন। গত ১৩ আগস্ট বাসা-মালিকের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়। মালিক ইমনকে তার প্রতিপত্তি ও লোকবলের ভয় দেখান এবং দেখে নেওয়ার কথা বলে শাসান। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে ইমন ৯৯৯ এ কল দিয়ে বিষয়টি জানালে ১০ মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। বাসা-মালিক পুলিশের সামনেও তার প্রতিপত্তির ভয় দেখায়। পুলিশ ইমনকে থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন।

সংবাদ সম্মেলনে ইমন বলেন, বাসা মালিকের সঙ্গে কথাকাটি পর ওইদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আরাফাত আমাকে কল দিয়ে বলেন যুব ভাই আমাকে হলে ডেকেছেন। অজানা ভয় থেকে হলে ডেকে নেওয়ার বিষয়টি আমি প্রক্টর স্যারকে জানালে প্রক্টর যুবর সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দেন। পরে রাত ১২টার দিকে বাইক নিয়ে মওলানা ভাসানী হলে আসলে যুব ভাই আমাকে হলের ভেতরে বাইক নিয়ে আসতে বলেন। তার কক্ষে প্রবেশ করা মাত্রই তিনি আমাকে আচমকা মারধর শুরু করেন। অন্যান্য অভিযুক্তরা তাকে মারধরে সহযোগিতা করেন। প্রাথমিক পর্যায়ে আমার নাক ফেটে রক্ত পড়তে থাকে। আরাফাত আমার মুখ বেধে দেন যাতে চিৎকার করতে না পারি। মারধরের এক পর্যায়ে ইয়াবা সেবন করেন যুব। পরে কক্ষে থাকা হাতুড়ি দিয়ে আমার পায়ের আঙ্গুলে কয়েকটি আঘাত করেন যুব। এতে আঙ্গুল ফেটে যায়। মারধরে করতে করতে ক্লান্ত হওয়ায় গোসল করে আসেন যুব। আবারও ইয়াবা সেবন করেন তিনি। এরপর কক্ষে থাকা একটি পিস্তল বের করে আমার পেটে ঠেকান যুব। যাতে বিষয়টি আমি কোনোভাবে বাইরে প্রকাশ না করি। এসময় তার সহযোগীরা আমার শরীরে মদ ঢেলে দেন এবং বলতে থাকেন মারা গেলে বলবে মদ খেয়ে মরেছে। এভাবে রাত প্রায় চারটা পর্যন্ত নির্যাতন করতে থাকেন তারা।

ইমনের ধারণা, তার ও বাসা মালিকের মধ্যে ঘটা তুচ্ছ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে যুবকে লেলিয়ে দিয়েছেন বাসা মালিক।

ইমন আরও বলেন, অপমান ও ক্ষোভে কক্ষ থেকে বের হয়ে হল সংলগ্ন মাঠে আত্মহত্যার চেষ্টা করি। কিন্তু তাৎক্ষণিক মনে হলো স্বীকারোক্তি নিতে জেদাজেদির বিষয়টি কমপক্ষে সোহেল ভাইকে জানানো দরকার। এজন্য সোহেল ভাইকে একাধিকবার কল দিলেও তিনি কল ধরেননি। পরে টলতে টলতে কোনোমতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে গিয়ে বসে পড়ি। সেখানে সকাল হলে সাভারের ভাড়া বাসায় গিয়ে গোসল সেরে প্রক্টরকে ফোন দেই। রাতের ঘটনা বর্ণনা করি। প্রক্টর আমাকে দুপুরে তার বাসায় আসতে বলেন।

ওইদিন দুপুরে প্রক্টরের বাসায় গিয়ে দেখি সেখানে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেলে ভাই উপস্থিত। সোহেল ভাই আমাকে মওলানা ভাসানী হলের গেস্টরুমে গিয়ে রেস্ট নিতে বলেন। আমি প্রক্টরের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ মিললো না। তবে গেস্টরুমে যাওয়ার পরিবর্তে আমি প্রক্টরের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকি। সোহেল ভাই বের হলে তার সঙ্গে এক মিনিট কথা বলার সময় প্রার্থনা করি এবং ক্ষতস্থানগুলো দেখাই।

এ ঘটনার পর সাভার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার দেখাই। পরে যুবর বড় ভাই আল নাহিয়ান খান জয়কে ম্যাসেঞ্জারে বিষয়টি জানাই। তিনি আমাকে দেখা করতে বলেন। তার সঙ্গে দেখা করলে আমার উপস্থিতিতে তিনি শাখা সভাপতি সোহেল ভাইকে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য মুঠোফোনে বলেন। জয় ভাই আরও জানান, যুব তার কথা শোনেন না।

এ ঘটনার আদ্যোপান্ত জানার পরও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসানের নির্লিপ্ত থাকায় আস্থা হারিয়েছেন বলে জানান ইমন। তিনি বলেন, ‘প্রক্টর আমাকে কোন ধরণের সহায়তা তো করলোই না, এমনকি একটি অভিযোগপত্র দেওয়ারও পরামর্শ দেয়নি।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলকে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলেও তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

মওলানা ভাসানী হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক হোসাইন মো. সায়েম বলেন, ওই কক্ষে একজন সাবেক শিক্ষার্থী থাকেন বলে জানি। তার ব্যাপারে ইতোপূর্বেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তবে এই মারধরের বিষয়ে কিছু জানি না। অভিযুক্তদের একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ চেষ্টা করলেও তিনি কল ধরেননি।

প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, আমি একটি মিটিং এ আছি। পরে কথা বলব। তবে পরবর্তীতে তিনি আর কল ধরেননি।

মাহবুব সরদার/আরএইচ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।