শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়
প্রোভিসি-ট্র্রেজারারকে শপথবাক্য পাঠ করালেন শিক্ষার্থীরা!
সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য (প্রোভিসি) অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম ও কোষাধ্যক্ষ (ট্রেজারার) অধ্যাপক ড. ইসমাইল হোসেনকে শপথবাক্য পাঠ করিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন-২ এর কনফারেন্স রুমে এই শপথবাক্য পাঠ করানো হয়।
শিক্ষার্থীদের শপথবাক্য পাঠের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এতে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছেন সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীরা।
তবে অনাকাঙ্ক্ষিত এই পরিস্থিতি তৈরির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শাবিপ্রবি সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিব। তিনি বলেন, ‘যে ভিডিওটা সামনে এসেছে এটি জুলাই বিপ্লবের স্পিরিট (গতি) ধারণ করার জন্য শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিশ্রুতি ও প্রতিজ্ঞা ছিল। কিন্তু এই উদ্দেশ্যকে আরও সুন্দর এবং যথাযথভাবে উপস্থাপন করতে না পারার কারণে মূলত বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।’
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় প্রশাসনিক ভবন-২ এর কনফারেন্স কক্ষে উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান পরবর্তী সভায় তাদের শপথ পাঠ করান শাবিপ্রবি শিক্ষার্থী ও থিয়েটার সাস্টের সভাপতি পলাশ বখতিয়ার।
শপথটি ছিল—‘শুকরিয়া যে, আমরা ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী শাসনের করাল গ্রাস থেকে মুক্তি লাভ করেছি। আজ শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রো-ভিসি ও ট্রেজারার পদে যোগদানের মুহূর্তে ২৪ জুলাইয়ের শহীদদের স-স্বত্বচিত্তে স্মরণ করছি। তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। মহান জুলাই বিপ্লবের মূল লক্ষ্য ও আদর্শকে সমুন্নত রাখতে আমরা শপথ করছি যে, বিপ্লবী সরকার কর্তৃক যে দিক-নির্দেশনা আমরা পেয়েছি এবং জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার বিপ্লবের স্পিরিট ধারণ করে শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসকে শিক্ষার্থীবান্ধব শিক্ষা এবং গবেষণা উন্নয়নে সর্বোচ্চ অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে সচেষ্ট থাকবো। দলীয় লেজুড়বৃত্তিক ছাত্ররাজনীতি মুক্ত ও শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাস গড়ে তোলার জন্য আপসহীনভাবে নিয়োজিত থাকবো। আমাদের বিদ্যা, গবেষণা সৎকাজের মাধ্যমে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাবিপ্রবি দেশের জনগণের এবং বিশ্ববাসীকে আলোর পথ দেখাতে যেন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, তা নিশ্চিত করবো।’
শপথবাক্য পাঠ করানোর সময় ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক আসাদুল্লাহ আল গালিবসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মী তথা শিক্ষার্থীরা উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষকে শপথবাক্য পড়াতে পারেন কি না, তা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সাজেদুল করিম বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময় ছিল। সেখানে জুলাই বিপ্লবের প্রসঙ্গ নিয়ে আলোচনার সময় কনফারেন্স রুমে একটা আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের অনেক ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে আবেগপ্রবণ হয়ে যায়। যে কারণে এ ঘটনা ঘটেছে।’
তিনি বলেন, ‘এটা শপথবাক্য জানতে পারলে আমি কখনো এরকম হতে দিতাম না। এ ঘটনার পর সমন্বয়করা আমাদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেবো।’
আহমেদ জামিল/এসআর/এমএস