২৯ গ্রামের চাওয়া একটি সেতু

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় একটি সেতুর জন্য চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ২৯ গ্রামের কৃষক। কোলঘেঁষা বনপাড়া গোহালা নদীর নাদা গ্রাম অংশে একটি সেতু না থাকায় পাঁচ হাজার ৭২৪ একর জমির চাষাবাদ নিয়ে বিপাকে রয়েছেন তারা। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলে এলেও দেখার যেন কেউ নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মোহনপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী নাদা গ্রামের প্রায় দুই কিলোমিটার দক্ষিণ দিয়ে বয়ে গেছে গোহালা নদী। শুষ্ক মৌসুমে নদীটি ক্ষীণ ধারায় বয়ে গেলেও ভরা বর্ষায় এটি ভয়াল রূপ ধারণ করে। নদীর উত্তর-দক্ষিণে ২১টি গ্রামের তিন হাজার ৩৩১ একর ও পূর্ব-পশ্চিমে আটটি গ্রামের দুই হাজার ৩৯৩ একর ফসলি মাঠ। কিন্তু নদীতে একটি সেতু না থাকায় ২৯ গ্রামের পাঁচ হাজার ৭২৪ একর ফসলি জমি চাষাবাদে বিড়ম্বনার মুখোমুখি হচ্ছেন কৃষকরা।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবার বর্ষায় প্লাবিত হয় বিস্তীর্ণ এই এলাকা। নদীর দক্ষিণ তীরঘেঁষে বৃ-আঙ্গারু, পোতাজিয়া, রাউতারা, বিলচন্দক, কেনাই, চিথুলিয়া, বাড়াবিল, বায়ড়াপাড়া, দত্তপুংলী ও গাছ পুংলী গ্রামের দুই হাজার ৪০৭ একর আবাদি জমি রয়েছে। আবার উত্তর তীরে বলতৈল, আটিয়ারপাড়া, চকপাড়া, এলংজানী ও কোনাবাড়ীসহ ১১টি গ্রামের কৃষকের জমি রয়েছে। এসব জমিতে প্রচুর পরিমাণে সরিষা, ধান, আলু, গম, খিরা, শসা, মাসকালাই ও সবজি উৎপাদন হয়। কিন্তু সেতু না থাকা এবং ৪-৫ কিলোমিটার মেঠো পথ হওয়ায় উৎপাদিত ফসল মাথায় করে বইতে হয়। গরু বা মহিষের গাড়িতে করে ঘরে তুলতে ২৫-৩০ শতাংশ ফসল দিতে হয় ভাড়া হিসেবে।
আরও পড়ুন:
- ১৮ বছরেও সংস্কার হয়নি ভাঙা সেতু, নড়বড়ে সাঁকোয় চলাচল
ড্রামে তৈরি ভাসমান সেতুতে দুঃখ ঘুচলো ২০ হাজার মানুষের
নাদা গ্রামের কৃষক হাফিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘নদী পার হয়ে আমাদের জমি চাষাবাদ করতে অনেক বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কারণ নদীর অপর পারে যাওয়ার জন্য কোনো সেতু নেই। নদী সাঁতরে ওপারে যাওয়া সম্ভব না হওয়ায় জমিগুলো পরিণত হয়েছে এক ফসলি জমিতে। বনপাড়া গোহালা নদীর অংশে সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের।’
নাদা চকরিপুর গ্রামের কৃষক জসমত আলী জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের বিশাল সেতুর দরকার নেই। একটি ফুটওভার ব্রিজের মতো থাকলে ওপারের জমিতে গিয়ে নিয়মিত চাষাবাদ করা সম্ভব হতো। তাছাড়া বর্তমানে কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়েছে। কিন্তু নদীতে সেতু না থাকায় সময়মতো জমিতে সারের ব্যবহার, কীটনাশক ও ওষুধ প্রয়োগ, জমির ফসল রোপণ ও ঘরে তোলা এবং আবাদকৃত ফসল বাজারজাত করতে আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। ফলে প্রতিবছর ভালো ফসল উৎপাদন করেও লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের।’
সেতু না থাকায় কৃষকের দুর্ভোগের কথা জানিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবর্ণা ইয়াসমিন সুমী জাগো নিউজকে বলেন, ‘কৃষকের এটি ন্যায্য দাবি। আমি নিজেও সেখানে গিয়েছিলাম। কৃষি বিভাগের পরামর্শে কৃষকরা ফসল উৎপাদন ভালো পেলেও সেতু না থাকায় তাদের দুর্ভোগ কমছে না।’
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী শহিদুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, আমি সম্প্রতি যোগদান করেছি। কৃষকের দুর্ভোগের বিষয়টি জানা নেই। এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এম এ মালেক/এসআর/জেআইএম