সোনারগাঁয়ে ৫০০ বছরের পাগলা গাছের মেলা

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশিত: ০৬:৩৩ পিএম, ১৬ মে ২০২৫

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে তিন দিনব্যাপী পাগলা গাছের মেলা শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) থেকে শুরু হয়ে মেলাটি শনিবার পর্যন্ত চলবে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বৈদ্যেরবাজার ইউনিয়নের হামছাদী গ্রামের একটি গাছের খুঁটিকে কেন্দ্র করে ব্যতিক্রমধর্মী এ মেলা বসানো হয়েছে। প্রতিবছর এ মেলার আয়োজন হয়েছে থাকে। মেলাটি তিনদিন ব্যাপী হলেও পূজা ও অর্চনা হয় শেষের দুদিন।

সোনারগাঁয়ে ৫০০ বছরের পাগলা গাছের মেলা

মেলা প্রাঙ্গণে বিভিন্ন দোকানি নানা পণ্যের পসরা নিয়ে বসেছেন। নাগর দোলা, বাঁশের বাঁশি, কাঠের চেয়ার, হাতপাখা, চৌকি, মোড়া, চুড়ি প্লাস্টিকের খেলনা, মিষ্টির দোকানসহ বিভিন্ন রকমের পণ্য রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, এটি পাগলা গাছের মেলা হিসেবে পরিচিত। হামছাদী গ্রামের ফনি সেন ও সুরেন্দ সেন নামের দুই ভাই ঘর তৈরির জন্য প্রায় ৫০০ বছর আগে বার্মা থেকে ২০টি খুঁটি কিনে আনেন। খুঁটিগুলোর মধ্যে বাংলা মাসের ১ জ্যৈষ্ঠ রাতে তারা স্বপ্নে দেখেন যে ওই খুঁটি থেকে দুটি নিজেদেরকে দেবতা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। পাগল রূপ ধারণ করে দুই ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বলছে আমাকে ঘরের খুঁটির কাজে লাগাবে না। আমি তোমাদের দেবতা। আমাদের উপাসনা কর। এতে তোমাদের মঙ্গল হবে। পাপ থেকে মুক্তি পাবে। রোগ নিরাময় হবে। পরদিন দুই ভাই বাড়ি থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে একটি পুকুর পাড়ে খুঁটিটি দেখতে পান। তার পর থেকে প্রতি বছর পহেলা জ্যৈষ্ঠে বিশেষ পূজা অর্চনা করা হয়।

সোনারগাঁয়ে ৫০০ বছরের পাগলা গাছের মেলা

তারা জানান, এ খুঁটি পূজা মণ্ডপের পাশের একটি পুকুরে সারাবছর ডুবিয়ে রাখা হয়। পাগল ভক্তরা পুকুর থেকে উঠিয়ে দুধ দিয়ে গোসল করায়। তাছাড়া ফল ফলাদি ঘি, খাসি ও পাঠা বলি দিয়ে পাগলা খুঁটির নামে উৎসর্গ করে। পূজা শেষে খুঁটিটি আবার পুকুরে ডুবিয়ে রাখা হয়।

হামছাদী গ্রামের বাসিন্দা রহমান মিয়া জানান, মেলায় গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়-স্বজনদের আগমন ঘটে। প্রতিবছর এ মেলার জন্য স্বজনরা অপেক্ষা করে থাকে।

সোনারগাঁয়ে ৫০০ বছরের পাগলা গাছের মেলা

পাগলা গাছের মেলার পুরোহিত উত্তম চক্রবর্তী বলেন, প্রতি বছর এ খুঁটিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ পূজা অর্চনা করে থাকে। ফল ফলাদি ঘি, খাসি ও পাঁঠাবলি দিয়ে পাগলা খুঁটির নামে উৎসর্গ করে।

পূজাটি উদযাপন কমিটির সভাপতি কেশব চন্দ্র দাস জানান, মেলায় বিপুল সংখ্যক ভক্তদের আগমন দেখছি। শান্তিপূর্ণভাবে মেলা উদযাপন করার জন্য এলাকায় বাড়তি নিরাপত্তাও নেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এ মেলায় গীতা পাঠ, কীর্তনসহ সনাতন ধর্মের বিভিন্ন সঙ্গীত পরিবেশিত হয়।

মো. আকাশ/আরএইচ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।