উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত
শহীদের স্বীকৃতি ও স্থাপনার নামকরণ চান পাইলট তৌকিরের বাবা
উত্তরায় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগরের শোকে স্তব্ধ পরিবার। ছেলের পুরোনো স্মৃতি মনে করে ডুকরে কাঁদছেন বাবা-মা। ছেলেকে স্মরণীয় করে রাখতে শহীদ ঘোষণা ও তার নামে বিমানবাহিনীর কোনো স্থাপনার নামকরণের দাবি করেন তার বাবা তোহুরুল ইসলাম।
বুধবার (২৩ জুলাই) দুপুরে ছেলের কবরের পাশে ডুকরে কাঁদতে কাঁদতে তিনি এ দাবি করেন। এর আগে বিকেলে রাজশাহীর সপুরা কবরস্থানে চির নিদ্রায় শায়িত হন পাইলট তৌকির ইসলাম সাগর।
তোহুরুল ইসলাম বলেন, ‘তৌকির শুধুমাত্র আমার ছেলে ছিল না, সেছিল আমার বন্ধু। মানুষের দোষ ত্রুটি থাকে। কিন্তু বাবা হিসেবে আমি আমার ছেলের কোনো দোষ বলতে পারবো না। আমি আমার ছেলের কাছে ব্যর্থ বাবা হলাম। আমার ছেলের মরদেহ আমাকে বইতে হলো। এর চেয়ে কষ্টের কিছু নাই। আমি প্রথমে শুনেছিলাম সে সিএমএইচে ছিল। আমি তখন বহুবার বলেছিলাম আল্লাহ তুমি আমার জীবনটা নিয়ে ছেলের জীবনটা ফিরিয়ে দাও। আমাদের ছেলে অমায়িক। সে প্রতিটি জায়গায় বহু অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে। সাড়ে তিন মাস যশোর সিএমএইচএ একটি কোর্স করলো, সেখানে সে ফাস্ট হয়েছে। গত ১০ তারিখে ইন্ডিয়ায় একটি ট্রেনিং করল সেখানে সে গোল্ড কয়েন পেয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘শহীদ খেতাব দিয়ে তার নামে যে কোনো একটি গেট বা ব্রিজ নামকরণ দাবি করছি। ইতিহাসের পাতায় তৌকিরের নাম থাক। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম আমার দেশের গর্ব। সে জাতিকে তার জীবন উৎসর্গ করে গেছে। আমার প্রত্যাশা সমগ্র জাতির কাছে তার আত্মার মাগফিরাত করবে।’
তৌকিরের বাবা বলেন, ‘সবাই বলতো আপনার ছেলে অনেক দূরে যাবে, অনেক বড় হবে। তার কোনো দোষ খুঁজে পাওয়া কঠিন। তাকে কেউ খারাপ চোখে দেখতো না। সবাই ভালো বলতো। সে সব সময় বলতো বাবা শরীরের দিকে খেয়াল রাখবা। যে কোনো সমস্যা হলে চলে আসবা। সিএমএইচএ আমি তোমাদের চিকিৎসা করাবো। মায়ের প্রতি সে প্রচণ্ড দুর্বল ছিল।’
তিনি বলেন, ‘এখনো বেডরুমে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকতো। তার মাকেও সে জড়িয়ে ধরে শুতো। তার বোনের সঙ্গে সে ভিডিও কলে কথা বলতো। ছোট থেকে বড় সবার সঙ্গে তার ভালো সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।’
তোহুরুল ইসলাম বলেন, ‘আগের দিন আমরা জানি সে ফ্লাইট করে আসল। পরদিন যে সোলো বা ফ্লাইয়ে যাচ্ছে এটি সে বলেনি। তার আম্মু অসুস্থ যার কারণে সে সোলোর ব্যাপারটা বলেনি। আমরা ভাবছি সে সোলো সাকসেসফুলি করতে পারবে। আজ পর্যন্ত কোনো সোলো তাকে দ্বিতীয়বার করতে হয়নি। আগের সব সোলো সে এক চান্সে শেষ করেছে। সে হয়তো আমাদের সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিল।
সাখাওয়াত হোসেন/আরএইচ/জিকেএস