দিনাজপুরে প্রতিরক্ষা কলোনির ৮১৫ একর জমি বেদখল
দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসনে বরাদ্দ দেওয়া ৮১৫ একর জমি অবৈধভাবে দখলে রেখেছে একটি মহল।
মহলটি নানাভাবে অপতৎপরতা চালিয়ে পরিবেশ উত্তপ্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এমন অপতৎপরতা বন্ধ ও আইনগত প্রক্রিয়ায় সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে সেনাবাহিনী।
বুধবার (৬ আগস্ট) দুপুরে ঘোড়ারঘাট উপজেলার প্রতিরক্ষা কলোনি এলাকায় মিলিটারি ফ্যামিলি রিহ্যাবিলিটেশন অফিসার (এমএফআরও) মেজর এম নাজমুল হায়দার সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাজনের পর ভারত থেকে আসা সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের (মোহাজের) পুনর্বাসনের জন্য রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা ও ঠাকুরগাঁও জেলার ৩ হাজার ৫২৯ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। সেই সঙ্গে এমএফআরও কর্তৃক সামরিক কলোনি গঠন, র্যাংক অনুযায়ী প্লট বরাদ্দ করা হয়। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে এমএফআরও এর কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত হলেও পরবর্তীতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ‘প্রতিরক্ষা কলোনি জমি বরাদ্দ ও রক্ষণাবেক্ষণ কমিটি’ গঠন এবং সেই কমিটির মাধ্যমে এমএফআরও এর কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
মেজর এম নাজমুল হায়দার আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের আগে-পরে মোহাজেরদের স্থান ত্যাগ ও মৃত্যুর কারণে অনেক জায়গা খালি পড়ে থাকায় অবৈধ দখলদাররা জাল দলিল তৈরির মাধ্যমে অবৈধভাবে জমি ক্রয়-বিক্রয় ও হস্তান্তর করে। এতে করে প্রতিরক্ষা কলোনির জমি মালিকানা ও রেকর্ড সংক্রান্ত জটিলতা বৃদ্ধি পায়।
এদিকে ঘোড়াঘাটের নুরজাহানপুর, খোদাদাতপুর, ওসমানপুর, হায়দারনগর ও আফসারাবাদ কলোনির ৪২৫ একর জমিতে ৭৬টি প্লট ৯৯ বছরের লিজে, ১৩৫ একর জমিতে ২৭টি প্লট একসনা লিজে এমএফআরও এর মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসন করা হয়েছে।
এমএফআরও এর ওই পাঁচটি কলোনির ১ হাজার ৩৭৫ একর জমির মধ্যে ৮১৫ একর জমির ১৫৯টি প্লটে বর্তমানে দখলদাররা রয়েছেন। প্রায় সিংহভাগ বেহাত হওয়া জমি উদ্ধারে সম্প্রতি আইনি প্রক্রিয়া শুরু করে এমএফআরও। এরই মধ্যে কয়েকটি মামলার রায় এমএফআরও পক্ষে এলে স্বার্থান্বেষী মহল এমএফআরও এবং সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচারে মেতে ওঠে। সেই সঙ্গে মানববন্ধন, স্মারকলিপি প্রদান কর্মসূচি পালন করে জনগণকে এমএফআরও এর মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে।
মেজর নাজমুল হায়দার আরও বলেন, অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের পুনর্বাসনের জন্য অধিগ্রহণ করা জমিতে ক্রয়-বিক্রয় বা হস্তান্তরের কোনো সুযোগ নেই। মূলত যারা অবৈধভাবে প্লটগুলো দখল করে রয়েছেন তারাই এমএফআরওকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। অথচ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় এমএফআরও এলাকায় জনকল্যাণমূলক কাজ করে যাচ্ছে। যদি বৈধ কাগজপত্রধারী আদালতের মাধ্যমে জমি পান, তবে সেখানে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা রায় পাওয়ার পরও অনেক মানবিক আচরণ করে যাচ্ছি। এমএফআরও যে লক্ষ্যে জমি অধিগ্রহণ করে প্লট তৈরি করেছিল, আমরা সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। এতে সংক্ষুব্ধ হওয়ার সুযোগ নেই। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আইনগত প্রক্রিয়ায় এর সুষ্ঠু সমাধান আশা করছি।
সংবাদ সম্মেলনে ২৫ বীর ডিভিশন সাপোর্ট ব্যাটালিয়নের উপঅধিনায়ক মেজর ফারাবী, ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন কাওসার, সরকারি কৌশলী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন, ঘোড়াঘাট থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শহিদুল ইসলামসহ অবসরপ্রাপ্ত সেনাসদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
জিতু কবীর/জেডএইচ/জিকেএস