রাজশাহী

বাইরে চিঠির বাক্স, ভেতরে চলে মোবাইল সার্ভিসিং

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাজশাহী
প্রকাশিত: ০৭:৫৫ পিএম, ০৬ আগস্ট ২০২৫

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নের সাব পোস্ট অফিস ভবনে নেই ডাক সেবার কোনো কার্যক্রম। সরকারি অফিসটি এখন রূপ নিয়েছে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে। স্থানীয় পোস্টমাস্টার অফিসটি ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে হাতিয়ে নিচ্ছেন মোটা অঙ্কের টাকা। বিষয়টি অবৈধ উল্লেখ করে ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদের পাশের একটি ভবনে এ সাব পোস্ট অফিসের অবস্থান। অফিসের সামনে রয়েছে একটি চিঠির বাক্স। এ চিঠির বাক্স দেখে আঁচ করা যায়-এটি একটি পোস্ট অফিস। কিন্তু সেখানে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। রুবেল নামের এক ব্যক্তির কাছে রুমটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে। তিনি এটি ব্যবহার করছেন একটি পূর্ণাঙ্গ মোবাইল সার্ভিসিং সেন্টার হিসেবে।

বাইরে চিঠির বাক্স, ভেতরে চলে মোবাইল সার্ভিসিং

অফিস ভবনের বারান্দায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন মালপত্রের বস্তা। ভিতরে একটি বড় রুম। এক কোণে টেবিল-চেয়ার, তার ওপরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে কিছু নথিপত্র। ড্রয়ারে ঝুলছে তালা। মেঝেতে ও টেবিলের ওপর জমেছে ধুলা আর শ্যাওলা। আর বাকিটা জায়গাজুড়ে সাজানো মোবাইল ফোন, চার্জার, পাখার যন্ত্রাংশসহ ইলেকট্রনিক পণ্যের পসরা। পাশে একটি চেয়ারে বসে আছেন দোকানদার রুবেল। তিনি একদিকে মোবাইল ঠিক করছেন। অন্যদিকে ছবি তোলার যন্ত্রপাতি মেলে রেখেছেন।

সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে ডাক বিভাগের কার্যক্রম চলার কথা, সেখানে মোবাইল সার্ভিসিং এর কার্যক্রম চলার কারণে স্থানীয়রাও বেশ ক্ষিপ্ত। তারা জানান, পোস্ট অফিসটি দীর্ঘদিন কার্যত অচল থাকায় এখানকার ডাক যোগাযোগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি এটি ব্যক্তিগতভাবে একজনকে দোকান হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা নিশান আলী বলেন, ‘পোস্ট অফিসটি যখন ব্যক্তিগত দোকান হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তখন বোঝা যায় কী অব্যবস্থা চলছে। গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র যেখানে রাখা আছে, সেখানে নেই কোনো নিরাপত্তা।’

শিক্ষার্থী ইমাম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘চর আষাড়িয়াদহ ইউনিয়নে একটি পোস্ট অফিস রয়েছে কিন্তু সেটিও দোকান হয়ে গেছে। বিষয়টি লজ্জাজনক। সরকারের প্রতি আমাদের আস্থা কোথায় রাখবো?

ভাড়া নেওয়া দোকানি মো. রুবেল বলেন, ‘আমার কোনো উদ্যোক্তার নিয়োগ নেই। আমাকে অফিসটি দেখাশোনা করতে বলেছেন পোস্ট মাস্টার। আমি এখানে মোবাইল ঠিক করি। কোনো মাসে ৪০০ কোন মাসে ৫০০ টাকা ভাড়া দেই। পোস্টমাস্টার আমাকে এখানে বসতে দিয়েছে। তিনি বললে আমি এখান থেকে চলে যাবো।’

বাইরে চিঠির বাক্স, ভেতরে চলে মোবাইল সার্ভিসিং

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী চর আষাড়িয়াদহ সাব পোস্ট অফিসের মাস্টার গোলাম জার্জিস জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার এখানে কোনো উদ্যোক্তা নেই। তাই এখানে একজনকে আমি কাজের জন্য বলেছি। মূলত সে এখানে দোকান করে।’

তিনি বলেন, ‘তার যে কাজ সে করছে না। সে মোবাইলের দোকান করছে। আমি তাকে কয়েক দফা অফিস ছাড়তে বলেছি, কিন্তু এখনো ছাড়েনি। তবে দ্রুত সে এখান থেকে চলে যাবে। আর দোকান ভাড়ার টাকা থেকে আমি প্রতি মাসে ১০০ টাকা সরকারি অফিসে জমা দিই।’

এ বিষয়ে উত্তর অঞ্চলের পোস্ট মাস্টার জেনারেল কাজী আসাদুল ইসলাম বলেন, সরকারি ভবন কোনোভাবে ভাড়া দেওয়ার সুযোগ নেই। এটি অবৈধ। তবে উদ্যোক্তাকে দেওয়া যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে তার নিয়োগ থাকতে হবে। তিনিও আমাদের নির্ধারিত বেশকিছু সেবা দিতে পারেন। তবে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কথা তো জানা নেই। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। এখন এটির বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিচ্ছি।’

সাখাওয়াত হোসেন/আরএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।