অভাবেই জীবন কাটলো খুকুমনির, এখন বন্ধ চিকিৎসাও

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মাদারীপুর
প্রকাশিত: ০১:৫০ পিএম, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫
টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না খুকুমনি

খুকুমনি। নাম শুনলেই মনে হয় খুব আদুরে। কিন্তু এই খুকুমনি ছোটবেলা থেকেই অভাবের সংসারে বড় হয়েছেন। বাবার সংসারে যুদ্ধ শেষে স্বামীর সংসারে এসেও পড়েছেন অভাবের সাগরে। বাঁচার জন্য, দু’মুঠো খাবারের জন্য, সন্তানদের পড়াশুনার জন্য প্রতিদিন তাকে করতে হয়েছে কঠোর পরিশ্রম। এবার খুকুমনির যুদ্ধ শুরু হয়েছে রোগের সঙ্গে। টাকার অভাবে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মাদারীপুর শহরের ২নং শকুনি এলাকার মৃত আ. আজিজ বেপারীর মেয়ে খুকুমনি। বাবা শহরের ডিসি ব্রিজ এলাকায় ছোট একটি মুদি দোকান দিয়ে ছোট ছোট জিনিস বিক্রি করতেন। সেই শিশু বয়স থেকেই খুকুমনি বাবার দোকানে বসে সাহায্য করতেন। এক পর্যায়ে সুখের আশায় কিশোরী বয়সেই গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী বাবুল মুন্সির সঙ্গে মেয়েকে বিয়ে দেন বাবা। এক অভাবের সংসার থেকে বের হয়ে আরেক অভাবের মধ্যে গিয়ে পড়েন খুকুমনি। স্বামী বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তেমন কোনো কাজকর্ম পেতেন না।

বিয়ের দু’বছর পরই জন্ম নেয় ফুটফুটে মেয়ে। সংসারে আনন্দের পাশাপাশি নেমে আসে অন্ধকার। মেয়েকে কী খাওয়াবেন। কীভাবে মানুষ করবেন। নানা চিন্তা। এর কয়েক বছর পর এক ছেলে ও আরেকটি মেয়ে হয়। বড় মেয়ে ফারজানা আক্তারে বয়স বর্তমানে ২৫ বছর। কয়েক ক্লাস পড়ার পর টাকার অভাবে তাকেও পড়াশুনা ছাড়তে হয়। বর্তমানে মেয়েটি মানসিক প্রতিবন্ধী। তাই বাবা-মায়ের সংসারের থাকতে হচ্ছে তাকে। ছেলে মিরাজ মুন্সি এসএসসি পাস করেছেন। এরপর সংসারের হাল ধরতে অটোরিকশা চালাতে শুরু করেন। বিয়ে করে তার ঘরেও রয়েছে এক সন্তান। ছোট মেয়ে রুপালীকে এইচএসসি পরীক্ষার বিয়ে দিয়েছেন খুকুমনি।

একসময় খুকুমনি সংসারের অভাব দূর করতে শহরের ডিসিব্রিজ এলাকায় ছোট একটি দোকান ভাড়া করে ব্যবসা শুরু করেন। মাত্র দুই হাজার টাকা দিয়ে চিপস, বিস্কিট, চকলেট, পান সুপারি নিয়ে ব্যবসা শুরু করলেও ভালোই চলছিল দোকান। বাকপ্রতিবন্ধী স্বামী ভ্যান ও ছেলে অটোরিকশা চালানোর অবসরে দোকানে সময় দেন। একসময় টিনের দোকান ছেড়ে পাকা দোকান ভাড়া নেন তারা। কিন্তু গত ছয় মাস আগে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন খুকুমনি। ডায়াবেটিসের কারণে পায়ে ক্ষত থেকে ইনফেকশন হয়। দীর্ঘদিন তার চিকিৎসা করা হয়। এরপর কোমরের হাড় ক্ষয় হতে শুরু করে। পরে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

আরও পড়ুন-
সুখ থাকলেও অর্থাভাবে বিপর্যস্ত খর্বাকৃতির ফরহাদ-আরিফার সংসার
আঁধার ঘরে ক্ষুধা পেটে দিন কাটে বৃদ্ধ দম্পতির
ঘরবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন আল্লাহর কাছে বিচার দেওয়া সেই বৃদ্ধ

বর্তমানে ভালোভাবে হাঁটতেও পারেন না। লাঠি নিয়ে চলাফেরা করতে হচ্ছে। অসুস্থতার জন্য অনেক শখের দোকানটিও ছেড়ে দিতে হয়েছে। ছেলের একার পক্ষে নিজের সংসারের খরচ জোগাড় করে মায়ের চিকিৎসা চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে।

অসুস্থ খুকুমনি বলেন, ছোট বেলা থেকেই অভাবের মধ্যে বড় হয়েছি। স্বামী কথা বলতে পারে না। তাই তেমন কোনো কাজও পায় না। অনেক পরিশ্রম করে দোকানটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। কিন্তু তাতেও লাভ হলো না, অসুস্থতার জন্য দোকান বন্ধ করে দিতে হয়েছে। পায়ে ও কোমরে অনেক ব্যথা। ঠিকমতো হাঁটতে পারি না। ডাক্তার ইনজেকশন দিতে বলেছেন, টাকার অভাবে তাও দিতে পারছি না। ছেলের একার আয়ে সংসার চালাতেই কষ্ট হয়, সেখানে আমার এই চিকিৎসা কীভাবে করাবো। তাই একটু সহযোগিতা পেলে হয়ত চিকিৎসা করাতে পারবো।

প্রতিবেশী মিনু বেগম বলেন, এক সময় খুকুমনি অনেক পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু এখন অসুস্থতার জন্য কিছু করতে পারেন না। বড় মেয়েও অসুস্থ। স্বামী কথা বলতে পারে না। সব মিলিয়ে খুকুমনি অসহায় হয়ে পড়েছেন। তাই কেউ তাকে সহযোগিতা করলে, হয়ত তার চিকিৎসা করানোটা সম্ভব হবে।

মাদারীপুরের সমাজসেবা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচারক আফজাল হোসাইন বলেন, খুকুমনির স্বামী বাকপ্রতিবন্ধী। তিনি যদি প্রতিবন্ধী ভাতা না পেয়ে থাকেন, তার ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি খুকুমনি চিকিৎসার জন্য দরখাস্ত দিলে, কিছুটা হলেও সহযোগিতা করা যাবে।

আয়শা সিদ্দিকা আকাশী/এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।