ভিটেমাটি বিক্রি করে সৌদি যান রানা, ফিরলেন কফিনবন্দি হয়ে

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাইবান্ধা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০:০৪ পিএম, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
রানা মিয়ার কফিন বন্দি মরদেহ

বসতভিটা বিক্রি ও ঋণ করে ভাগ্য বদলাতে সৌদি গিয়েছিলেন গাইবান্ধার রানা মিয়া (৩৫)। কিন্তু দেড় বছরের মাথায় সেই স্বপ্ন ভেঙে লাশ হয়ে দেশে ফিরলেন তিনি। গত ৯ সেপ্টেম্বর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়।

সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মরদেহ পৌঁছায়। পরে রাতে অ্যাম্বুলেন্সে করে মরদেহ গ্রামের বাড়ি পলুপাড়ায় নেওয়া হয়। রানা মিয়া গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটাবাড়ী ইউনিয়নের পলুপাড়া গ্রামের মৃত জামেদ আলীর ছেলে।

রানা পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পরিবারের ভাগ্য ফেরানোর আশায় তিনি প্রায় ছয় শতক বসতভিটা ৩ লাখ টাকায় বিক্রি করেন। পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে স্থানীয় দালাল সেলিম মিয়ার মাধ্যমে সৌদি আরবে যান। তবে বিদেশে গিয়ে তিনি জানতে পারেন, তাকে ভালো কোনো কোম্পানি নয়, বরং টুরিস্ট ভিসার কাগজে পাঠানো হয়েছে। এই ভিসায় কাজের সুযোগ সীমিত থাকায় দালাল চক্রের অধীনে তিনি কঠোর পরিশ্রমের কাজ করতে বাধ্য হন। এমনকি তার উপার্জিত টাকাও হাতিয়ে নেয় ওই দালাল চক্র।

রানা একাধিকবার স্থানীয় দালাল সেলিমের কাছে সাহায্য চেয়েও কোনো সাড়া পাননি। উপায় না পেয়ে, বাড়ি থেকে আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে আরও ৬০ হাজার টাকা ধার করে এক ব্যক্তির অধীনে মোটরসাইকেলে ফুড ডেলিভারির কাজ শুরু করেন। এই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে গিয়েই গত ৯ সেপ্টেম্বর রাতে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়।

রানার স্ত্রী আরেফা বেগম বলেন, ভেবেছিলাম কষ্ট হলেও স্বামী টাকা উপার্জন করে ফিরবে। হয়তো আবার বসতভিটা কিনে সংসারে সুখ ফিরবে। কিন্তু দালালের খপ্পরে পড়ে সব শেষ হয়ে গেল। তিনি প্রতারক দালাল সেলিমের বিচার এবং সন্তানদের ভবিষ্যতের জন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা কামনা করেছেন।

স্থানীয়রা দাবি জানিয়েছেন, প্রতারক দালালদের কারণে অনেক পরিবার পথে বসছে। এই ঘটনায় প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি।

আনোয়ার আল শামীম/কেএইচকে

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।