শীতের বার্তা নিয়ে বিষখালীর মোহনায় হাজারো পরিযায়ী পাখি
শীতকালে প্রতি বছরের মতো এবারও ঝালকাঠির বিষখালী নদীর মোহনা হয়ে উঠেছে হাজারো পরিযায়ী পাখির নিরাপদ আশ্রয়স্থল। সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ও পোনাবালিয়া ইউনিয়নের নদী তীরবর্তী এলাকায় পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা বেড়েছে। একদিকে যেমন পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখর হয়ে উঠেছে পরিবেশ, তেমনি তাদের ‘লাভ’, ‘রকেট’ আকৃতির দলবদ্ধ ওড়াউড়ি মুগ্ধ করছে স্থানীয় এলাকাবাসী ও পর্যটকদের।
সদর উপজেলার বুক চিরে বয়ে গেছে সুগন্ধা, বিষখালী, গাবখান, বাসন্ডা ও ধানসিঁড়ি নদী। এই নদীগুলোর মোহনার পশ্চিমদিকে গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন, দক্ষিণ-পূর্ব কোণে পোনাবালিয়া ইউনিয়ন এবং উত্তর-পূর্ব কোণে ঝালকাঠি পৌর এলাকা। প্রতিবছর শীতে দূরদূরান্ত থেকে শীতকালে পাখিরা আসে এসব নদীপাড়ে। ভ্রমণপিপাসু মানুষ পাখি দেখতে ভিড় করেন নদী তীরের বিভিন্ন স্থানে। পাখিদের কলকাকলি প্রকৃতির শোভা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে।
সাচিলাপুর এলাকার লিটু গোমস্তা, রবিন, আফছার জানান, প্রতিবছরই শীত মৌসুমে এখানে পরিযায়ী পাখির আগমন ঘটে। নদীর চরে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে হোগল বন রয়েছে, সেখানেই পাখিদের আশ্রয়স্থল। তারা সাধারণত সকালে ও পড়ন্ত বিকেলে ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ায়। অন্যান্য সময় খাবারের খোঁজে ও বিশ্রামে থাকে। নৌযানের শব্দ বা কেউ ওদের কোনোভাবে বিরক্ত করলে তখন আবার উড়তে শুরু করে। ওদের দল বেঁধে উড়া একেক সময় একেকটা শৈল্পিক রূপ দেখা যায়। কখনো ‘লাভ’, ‘লকেট’, ‘রকেট’, ‘বিমান’ আকৃতি হয়ে উড়ে।
তারা আরও জানান, আগে শিকারিরা বন্দুক নিয়ে পাখি শিকারে আসতো। তখন তাদের নিষেধ করলে অনেক সময় তর্ক-বিতর্কও হতো। তোপের মুখে পাখি শিকার না করেই তারা ফিরে যেতো। এভাবে কয়েক বছর পাখি রক্ষায় তৎপর থাকায় এখন আর কেউ পাখি শিকারে আসে না।

পাখিপ্রেমী ও ব্যবসায়ী শামসুল হক মনু জানান, শীত এলেই জলাশয়, নদীর তীরের নিরাপদ স্থানসহ বিভিন্ন হাওর, বিল ও পুকুরের পাড়ে চোখে পড়ে নানা রং-বেরংয়ের নাম জানা, অজানা পাখির। অথচ বেআইনিভাবে শিকার হচ্ছে এসব পাখি। পরিযায়ী পাখি আমাদের বন্ধু, আমাদের ঐতিহ্য, আমাদের গর্ব ও প্রেরণা। এ পাখিগুলোকে অচেনা পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে আমাদের বন্ধুসুলভ আচরণ করা দরকার। পাখি রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব।
তিনি আরও জানান, পরিযায়ী পাখিদের বিচরণভূমি ক্রমশ সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বন-জঙ্গল কেটে উজাড় করে ফেলায় পাখিরা হারাচ্ছে তাদের নিরাপদ আশ্রয়। আবার ফসলি জমিতে কৃত্রিম সার ও মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের কারণে বিষে আক্রান্ত কীটপতঙ্গ খেয়ে মারা যাচ্ছে অতিথি পাখিরা।
বরিশাল সরকারি সৈয়দ হাতেম আলী কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোসাম্মাৎ জেবুন্নেছা জানান, পাখিদের বাসস্থান সংকট, বিষটোপ ব্যবহার করে খাদ্য সংকট, জীবন বিপন্ন করা, শিকার, পাচারসহ ইত্যাদি কারণে আশঙ্কাজনক হারে আমাদের দেশে শীতে পাখি আসার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আইন প্রয়োগে কঠোর হতে হবে। তবে আমরা সচেতন না হলে আইন প্রয়োগে খুব একটা সফলতা পাওয়া যাবে না। প্রশাসনের সঙ্গে আমাদেরও সহযোগিতা করতে হবে।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেগুফতা মেহনাজ বলেন, অতিথি পাখি আমাদের সম্পদ। তাদের রক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব। ওরা আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। কেউ যদি পাখিদের অভয়াশ্রমে বিরক্ত করে বা কোনো শিকারি যদি সেখানে গিয়ে পাখি শিকার করতে চায়, তখন আমাদের জানালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
মো. আতিকুর রহমান/এমএন/জেআইএম