বরগুনার ‘সবজি গ্রামে’ ভাইরাসের আক্রমণ

নুরুল আহাদ অনিক নুরুল আহাদ অনিক , জেলা প্রতিনিধি বরগুনা
প্রকাশিত: ০২:৪০ পিএম, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

‘সবজি গ্রাম’ নামে পরিচিত বরগুনার তালতলী উপজেলার সওদাগর পাড়া। সেখানে শীতকালীন সবজি শিমে ভয়াবহ ভাইরাসের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। গাছে ফুল আসার পরপরই ভাইরাসের আক্রমণে পাতা হলুদ হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ক্ষেতের পর ক্ষেত। এতে অন্তত ৭ কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তিন শতাধিক কৃষক। তাদের অভিযোগ, এমন দুঃসময়েও তাদের খোঁজ নিচ্ছে না কৃষি বিভাগ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল বিভাগে সবচেয়ে বেশি শিম চাষ হয় বরগুনার তালতলী উপজেলার সওদাগার পাড়া গ্রামে। প্রতি বছর জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৬-৭ কোটি টাকার শিম বিক্রি করেন এ এলাকার কৃষকরা। চলতি বছর এ গ্রামে সমবায় পদ্ধতিতে প্রায় ২২ একর জমিতে শিম আবাদ করেছেন কৃষকরা। কিন্তু এ বছর ভাইরাসের আক্রমণে গাছের পাতা, ফুল ও শিম হলুদ হয়ে যাওয়ায় প্রায় ৭ কোটি টাকা লোকসানের আশঙ্কায় পড়েছেন ওই এলাকার তিন শতাধিক কৃষক।

সরেজমিনে সবজি গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে ফুল ধরলেও ফলন নেই। অধিকাংশ জমিতেই ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে হলুদ হয়ে গেছে গাছ। সবুজ ক্ষেত রূপ নিয়েছে হলুদ পাতার মাঠে। তাই এখন চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে কৃষকদের।

বরগুনার ‘সবজি গ্রামে’ ভাইরাসের আক্রমণ

কৃষকদের অভিযোগ, সময় মতো পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহায়তা না পাওয়ায় চলতি মৌসুমে আরও বড় ধরনের ক্ষতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তারা।

৯০ শতাংশ জমিতে শিম আবাদ করে এখন হতাশায় দিন কাটছে ইউনুস চৌকিদারের। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় দেড় লাখ টাকা খরচ করে ৯০ শতাংশ জমিতে শিমের আবাদ করেছি। প্রতিবছর এই জমি থেকে যে লাভ হতো তা দিয়েই আমার সংসার চলত। আমার মতো সওদাগার পাড়া গ্রামের প্রায় ৩ শতাধিক কৃষক শিমের আবাদ করে। এখন আমাদের সবারই মাথায় হাত। প্রায় সব ক্ষেতেই ভাইরাস আক্রমণ করেছে। শিমের পাতা সব হলুদ হয়ে গেছে। এই দুঃসময়েও আমাদের কাছে আসেনি কৃষি বিভাগ।

এ বছর কোটি টাকার ক্ষতি হবে জানিয়ে স্থানীয় কৃষক জসিম শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবছর এই গ্রামে শিম থেকে কোটি টাকার বাণিজ্য হতো। কিন্তু এবছর পুরো গ্রামেই অজানা এক ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে শিম গাছ। এমন অবস্থা যে আমাদের সব কৃষকেরই এখন পথে বসতে হবে।

বরগুনার ‘সবজি গ্রামে’ ভাইরাসের আক্রমণ

সওদাগর পাড়া গ্রামে সমবায় পদ্ধতিতে সবজি চাষের উদ্যোক্তা শাহাদাত মাতুব্বর জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবছর আমাদের গ্রামে সমবায় পদ্ধতিতে শিম চাষ করে ৬-৭ কোটি টাকা লাভ হতো। কিন্তু এ বছর সবজি গ্রামের শিম চাষিরা ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন। এ বছর ভাইরাসের আক্রমণে প্রায় দুই শতাধিক কৃষকের ৬-৭ কোটি টাকা লোকসান হবে। তবে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হলেও মাত্র একবার কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা এসে ঘুরে গেছেন। পরে আর কোনো খোঁজ নেননি।

বরগুনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রথীন্দ্র নাথ বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, খবর পাওয়ার পরপরই উপসহকারী ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাসের কারণেই শিম গাছ হলুদ হয়ে গেছে। সঠিক কারণ নির্ণয়ের জন্য এরই মধ্যে নমুনা সংগ্রহ করে পটুয়াখালী কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু প্রতিবছর একই ফসল চাষ করলে ভাইরাস আক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। তাই ফসল পর্যায়ক্রমে পরিবর্তন করা উচিত। এছাড়া সরকারিভাবে প্রণোদনা পেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সহায়তা করা হবে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।