বিরল মোহনীয় নাগলিঙ্গম


প্রকাশিত: ০৪:১৬ পিএম, ০১ আগস্ট ২০১৬

নাগলিঙ্গম। নাম শুনলেও মনে হবে কাল নাগের সঙ্গে নাগেশ্বরের কোথায় যেনো একটা মিল আছে। ঠিক ধরেছেন। গাছের গোড়া ফুঁড়ে বের হওয়া লম্বা লতার মতো শাখায় ছোট ছোট হাজারো কুঁড়ি। এক সময় কুঁড়ি থেকে টকটকে লাল পলাশ কিংবা শিমুলের মতো ফুল মুখ বের করে আকাশের পানে।

লাগলিঙ্গম ফুলের পাপড়ি, রেণু, ফুলের গঠন আরো মোহনীয়। পাপড়ির মাথায় অসংখ্য ছোট ছোট সাপের মতো ফণা তোলা! তাই বোধ হয় অনিন্দ্য সুন্দর। এই ফুলের জন্যই গাছের নাম হয়েছে নাগলিঙ্গম।

Naglingam

নাগ লিঙ্গমের বৈজ্ঞানিক নাম Couroupita guianensis. ইংরেজি নাম `cannonball tree. এটি Lecythidaceae (লিসাইথিডেসিয়া) গোত্রের। নাগলিঙ্গম গাছ সাধারণত ১০ থেকে ৩০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর গোড়ায় বেলের মতো শত শত ফল হয়। এটি একটি ঔষধি বৃক্ষ।

উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, এটি লিগুসিমেনি গোত্র। নাগলিঙ্গম একটি অপরিচিত বৃক্ষ। এটি নাগেশ্বর জাতীয় একটি গাছ। এর মনকাড়া সৌন্দর্য্য বিমোহিত করে। একই সঙ্গে ফুল, ফল ও গাছের পাতা আলাদা বৈশিষ্টের। নাগলিঙ্গম গাছ সাধারণত অন্যান্য কাঠবৃক্ষের মতো হলেও অন্যান্য জাতের গাছের মতো এর শাখায় নয়, বরং ফুল ফোটে গুঁড়িতে, কাণ্ডে। নয়নকাড়া ফুল আর বিচিত্র গোলাকার ফলের জন্য নাগলিঙ্গম সবার কাছে বাড়তি আকর্ষণের।

Naglingam

নাগলিঙ্গম আমাদের দেশে বিরল প্রকৃতির গাছ। এই ফুল সচরাচর দেখা যায় না। বেশির ভাগ মানুষের কাছে এটি অপরিচিত। পৃথিবীর অনেক দেশে নাগলিঙ্গম দেখা যায়। তবে এর আদি নিবাস মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার গভীর বনাঞ্চলে। গাছটি থাইল্যান্ড ও ভারতের বিভিন্ন মন্দিরে দেখা মেলে।

ভারতের শান্তিনিকেতনেও বেশ কিছু বড় আকৃতির নাগলিঙ্গম গাছ আছে। ভারতে এটি দেখা যাচ্ছে- অন্তত চার হাজার বছর ধরে। বাংলাদেশের ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানিক্যাল গার্ডেনে বেশ কিছু নাগলিঙ্গম চোখে পড়ে।

Naglingam

গত ৭ ডিসেম্বর কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পুলিশের ওপর জঙ্গি হামলা হয়। হামলার স্থানটির ঠিক ওপরে তাকাতেই চোখে পড়ে দৃষ্টিনন্দন নিচে জমে থাকা লাল রক্তের মতোই ফুটে আছে অসংখ্য নাগলিঙ্গম ফুল। থোকায় থোকায় ঝুলছে এর গোলাকার ফল। এখানে বয়েসি দুইটি নাগলিঙ্গম বাস করছে যুগ যুগ ধরে!

সাধারণত মার্চ থেকে ডিসেম্বরে নাগলিঙ্গ ফুল ফোটে। ফুলের রং উজ্জ্বল গোলাপি। ফুলের পরাগ কেশর ঠিক সাপের ফণার মতো। নাগলিঙ্গম গাছের রয়েছে ব্যাপক ঔষধি গুণ। বেলে মতো ফলের রঙ গাঢ় বাদামি। শাঁস প্রায় সাদা, নরম এবং বহুবীজী। তবে ফল কাওয়া যায় না। এটি বিষাক্ত। তবে পাকা ফলগুলো হাতির প্রিয় খাবার।

পাকার পর ফল থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এর বাকল, ফুল আর ফল থেকে এন্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ তৈরি হচ্ছে নাগলিঙ্গমের ফল দিয়ে। ম্যালেরিয়ার ওষুধ হিসেবেও এর পাতা ব্যবহৃত হয়।

নূর মোহাম্মদ/এআরএ/এবিএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।