নরসিংদী কারাগার যেন ভোগান্তির কারখানা


প্রকাশিত: ০৯:২৯ এএম, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

তীব্র আবাসন সঙ্কট, জলাবদ্ধতা ও পয়নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকাসহ বিভিন্ন সমস্যায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নরসিংদী জেলা কারাগারের এক হাজার বন্দিকে। রয়েছে স্টাফদের আবাসন সঙ্কটও। সব মিলিয়ে ভোগান্তির একটি কারখানায় পরিণত হয়েছে কারাগারটি।

এছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে বন্দিদের স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগও উঠেছে কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী বন্দিদের স্বজনদের অভিযোগ, সরকারি বিধি অনুযায়ী বিনামূল্যে বন্দিদের সঙ্গে দেখা করার নিয়ম থাকলেও বন্দিপ্রতি স্বজনদের কাছ থেকে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে।

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, ৩ একর জমির ওপর নির্মিত কারগারটিতে ১৯৮৪ সাল থেকে শুরু হয় নরসিংদী সাব-জেলের কার্যক্রম। পরে ১৯৮৮ সালে সরকার নরসিংদীকে জেলা ঘোষণার পর সাব-জেলকে নরসিংদী জেলা কারাগারে রূপান্তর করা হয়।

কারাগারটিতে মোট ২৪৪ জন বন্দি থাকার ব্যবস্থা থকলেও বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় হাজতি ও কয়েদি মিলিয়ে ১ হাজার ৩ বন্দি রয়েছেন। তীব্র আবাসন সঙ্কটের ফলে গাদাগাদি করে রাত কাটাতে হচ্ছে এসব বন্দিকে।

কারা সূত্রে আরো জানা যায়, জেলাখানাটিতে পর্যাপ্ত পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। নেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও। একটু বৃষ্টি হলেই জেলাখানাটিতে পানি জমে যায়। ফলে বিঘ্নিত হয় জেলখানার স্বাভাবিক কার্যক্রম। এছাড়া কারাগারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সার্বক্ষণিক কারা এলাকায় থাকার কথা থাকলেও স্টাফদের আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।

অপরদিকে কারা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হাজারো অনিয়মের অভিযোগ তুলছেন বন্দিদের স্বজনরা। দাফতরিক অনিয়মের কথা কিছুটা চাপা থাকলেও স্বজনদের বন্দিদের সঙ্গে দেখা করার জন্য আর্থিক অনিয়ম অনেকটা ওপেন সিক্রেট। বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে হলে বন্দিপ্রতি এক থেকে দেড় হাজার টাকা করে গুনতে হচ্ছে। এমনটাই অভিযোগ স্বজনদের।

সে অনুযায়ী ২০০ বন্দি থেকে গড়ে প্রতিদিন আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

সূত্র জানায়, প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক বন্দির স্বজন তাদের সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে আসেন। তখনই বড় ধরনের ভোগান্তির শিকার হতে হয় তাদের। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা ও বেলা ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত জেলখানায় আটক বন্দিদের সঙ্গে বিনা টাকায় দেখা করতে পারবেন।

কিন্তু নরসিংদী জেলা কারাগারের চিত্রটি একেবারেই ভিন্ন। এখানে বন্দিদের সঙ্গে দেখা করতে হলেই স্বজনদের গুনতে হচ্ছে ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার টাকা। আর কারাগারের ভেতরে অফিস কক্ষে বসে দেখা সাক্ষাতে স্পেশাল ব্যবস্থা করা হয় মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে।
 
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বন্দির স্বজন বলেন, ষড়যন্ত্রমূলক একটি মামলায় গত ১৫ দিন আগে আমার ভাই এই কারাগারে আসেন। তার সঙ্গে দেখা করতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। দেখা করার জন্য কারাগারের জমাদারকে দেড় হাজার টাকা দিতে হয়েছে। এই অবস্থা আমার একার নয়। আমার মত শত শত স্বজনের।

তবে জেল সুপার মো. জাকির হোসেন আর্থিক অনিয়মের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি কারাগারটিতে যোগদানের পর থেকে সকল ধরনের অনিয়ম বন্ধ করে দিয়েছি। এমনকি মসজিদের ইমামের বেতনের জন্য ২ টাকা নেয়া হতো, সেটাও বন্ধ করে দিয়েছি।

বন্দি সমস্যা নিরসনের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০ একর জায়গার ওপর ২ হাজার বন্দি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কারাগার নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দ্রুতই এ সমস্যা সমাধান হবে।  
 
এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।