‘চাচ্চু বাঁচাও’ আজও শুনতে পাই

জাগো নিউজ ডেস্ক
জাগো নিউজ ডেস্ক জাগো নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ০১:২৫ এএম, ০২ এপ্রিল ২০২০

অপু ইব্রাহিম, সন্দ্বীপ

প্রবাসী চাচা হাসানের বিয়েতে চট্টগ্রামের কুমিরা থেকে ‘এসটি সালাম সি’ ট্রাকে করে নদীপথে সন্দ্বীপে যাচ্ছিল ভাই-বোন তাহসিন (৯) ও নিহা (৫)। সঙ্গে ছিল মা নুর নাহার বেগম, চাচা হাসান, ছোট চাচা জাবেদ।

ছোট্ট তাহসিন আর নিহা চাচার বিয়েতে আনন্দে মেতে উঠবে, কে জানতো চাচার বিয়েতে আনন্দ করা হবে না। সেদিন নদী ছিল খুব উত্তাল। বাতাসও ছিল বেশি। সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলেও বিকেল ৫টার দিকে বিআইডব্লিউটিসির ঘাট ইজারাদার একরামউদ্দিন ফরহাদের চার্টারকৃত সি-ট্রাক ‘এস.টি. সালাম’ চট্টগ্রামের কুমিরা ঘাট থেকে গুপ্তছড়া ঘাটের উদ্দেশ্যে প্রায় দু’শতাধিক যাত্রী নিয়ে রওনা দেয়।

এটি যখন ঘাটে এসে পৌঁছায় তখন সন্ধ্যা ৭টা হবে। একে তো অন্ধকার তার উপর বাতাস ও ঢেউয়ের মধ্যেই যাত্রীদের সি-ট্রাক থেকে লাল বোটে ঝুঁকি নিয়েই নামতে হচ্ছিল। এমন সময় হঠাৎ করেই বোটটি উল্টে যায় এবং নিমজ্জিত যাত্রীদের আর্তচিৎকারে এক ভয়ানক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

দুর্ঘটনার সময় চাচা হাসানের কোলে ছিল তাহসিন। ‘চাচ্চু, বাঁচাও বাঁচাও!’ নৌকা উল্টে চাচা হাসানের কোল থেকে সাগরের পানিতে ছিটকে পড়ার মুহূর্তে এভাবেই চিৎকার করেছিল শিশুটি। উত্তাল ঢেউয়ে চাচা শুধু একবার শুনতে পেয়েছিলেন তার আকুতি। আর নিজের কোল থেকে শিশুকন্যা নিহার ছিটকে পড়ার দৃশ্য বিভীষিকার মতো তাড়া করে বেড়াচ্ছে মা শামসুন নাহার বেগমকে। বরযাত্রীর পরিবর্তে তাহসিন নিহাকে হতে হয়েছিল শবযাত্রী। নৌ দুর্ঘটনার ৩ দিন পর তাদের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়।

২ এপ্রিল ২০১৭ সালে নৌ দুর্ঘটনার ৩ বছর নিয়ে কথা হয় তাহসিন নিহার চাচা হাসানের সঙ্গে। জাগো নিউজকে কাতার থেকে মুঠোফোনে ২ এপ্রিলের কথা বলার সাথে সাথে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারেনি হাসান। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি সবচেয়ে অধম একজন চাচা নিজের ভাতিজা, ভাইজিকে বাঁচাতে পারিনি। তারা বাঁচতে চেয়ে চাচ্চু বাঁচাও আকুতি করেছিল। সৌভাগ্যক্রমে আমি আমরা বেঁচে গেছি কিন্তু তাদের বাঁচাতে পারিনি।

আসলে আমার জীবনে যতদিন বেঁচে থাকি ততদিন ‘চাচ্চু বাঁচাও’ শব্দগুলো আমি কখনো ভুলতে পারবো না। তাহসিন নিহার মৃত্যুতে আমাদের পরিবারে নেমে এসেছিল অমানিশার কালো ছায়া। থমকে গিয়েছিল সব আনন্দ আয়োজন। আমাকে স্বাভাবিক হতে অনেকদিন লেগেছিল। বিয়ের পিঁড়িতেও বসেছি অনেক দিন পর। আমরা আমাদের স্বজন হারিয়েছি।

তারপরেও আজও সন্দ্বীপবাসী নিরাপদ নৌ যাতায়াত পাইনি। প্রবাস থেকে যখন ফেসবুকে দেখি কাঠের ব্রিজে ১ মাইল হেঁটে কাঁদামাটি চষে ফিটনেসবিহীন স্পিডবোটে উঠে তখন খুব বেশি খারাপ লাগে। নিরাপদ নৌ যাতায়াত করতে না পারলে আমরা আবারও এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারি।

তাসিন পড়ত চট্টগ্রামের হালিশহরের মাস্টারমাইন্ড আইডিয়াল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণিতে। নিহা একই স্কুলের প্লে শ্রেণিতে পড়ত।

এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।