ক্রেতা সংকট, শসা টমেটো বেগুনের কেজি ৫ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৯:৪০ পিএম, ০৬ এপ্রিল ২০২০

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে উত্তরের সবজি বাজারগুলোতে ধস নেমেছে। উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বগুড়ার বড় সবজি বাজার মহাস্থানহাটে এখন আগের তুলনায় সবজির আমদানি ও বিক্রি আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে।

এই হাট থেকে প্রতিদিন ২৫-৩০ ট্রাক সবজি রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গেলেও সোমবার (৬ এপ্রিল) এখানে পর্যাপ্ত সবজির অভাবে কোনো ট্রাক লোড হয়নি। হাটে অল্প পরিমাণ যে সবিজ ছিল তারও কোনো ক্রেতা ছিল না।

এদিকে সবজি বিক্রি না হওয়ায় ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন কৃষকরা। কৃষক ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার প্রভাবে সবজি বাজারে ধস নেমেছে। এই বাজারে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা আসতো সবজি ক্রয় করতে। কিন্তু বর্তমানে করোনা আতঙ্কে ব্যবসায়ীরা বাজারে আসছে না। তাই ক্রেতা সংকটে সবজির দামে ধস নেমেছে।

সরেজমিনে মহাস্থান হাটে গিয়ে দেখা যায়, মাঝারি সাইজের মিষ্টি কুমড়া বিক্রি হচ্ছে প্রতি পিস ৭ টাকা, আর মণ ২৮০ টাকা। এছাড়াও প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা, মুলার মণ কিছুটা বেড়ে হয়েছে ১৭০ টাকা। সেই সঙ্গে কাঁচামরিচ ও করলা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১০ টাকা, শসা ৫ টাকা, টমেটো ৫-৬ টাকা, ফুলকপি ৫ টাকা, বাঁধাকপি ৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। পটলের দাম বেড়ে হয়েছে ১১শ টাকা মণ। অর্থাৎ প্রতি কেজি সাড়ে ২৭ টাকা।

এছাড়াও পেঁয়াজ ২৫ থেকে ৩০ টাকা কেজি, বাঁধাকপি ৩/৪ টাকা পিস, গাজর ৮ টাকা কেজি, সজনে ডাটা ১০০ টাকা কেজি, ঢেঁড়স ৩০ টাকা কেজি, লাল শাক ১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বগুড়ার শিবগঞ্জের মুলা চাষি খবির উদ্দিন বলেন, ৪ বিঘা জমিতে মূলা চাষ করেছি। এখন বিক্রির জন্য মহাস্থান হাটে ভ্যানে করে নিয়ে এসেছি। বিক্রি করতে পারিনি। বিকেলে বিক্রি না হলে ফেরত নিয়ে যাব।

bogura

মহাস্থানে চন্ডিহারা থেকে এসেছেন সবজি চাষি মনির উদ্দিন। জানালেন বেগুন নিয়ে এসেছেন মহাস্থানের পাইকারি বাজারে। কিন্তু এসে দেখেন বেগুনের দর করছে না কেউ। মাঝে মাঝে দু-একজন ব্যবসায়ী আসলেও পানির দাম বলে চলে যাচ্ছেন।

তিনি জানান, প্রতি মণ বেগুন ২০০ থেকে ২২০ টাকা করে দাম হাঁকা হচ্ছে। এতে করে পরিবহন খরচও উঠবে না তার। কিন্তু তারপরও ক্রেতা নেই।

একইভাবে শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষক ফরিদ নিজের জমিতে চাষ করা ৫ মণ বেগুন বিক্রি করতে এসেছেন মহাস্থান হাটে। সকাল ৭টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত রোদে দাঁড়িয়ে আছেন ক্রেতার আশায়। কিন্তু এই চার ঘণ্টায় বিক্রি করতে পারেননি এক কেজি বেগুন।

মোকামতলা এলাকার কৃষক জাকির হোসেন বলেন, শসা জমিতে বেশি দিন রেখে নষ্ট হবার উপক্রম হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে হাটে নিয়ে এসেছি। কিন্তু পাইকার কম থাকায় মাত্র ৫ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এর আগে কখনও এত কম দামে শসা বিক্রি করিনি।

bogura

বেগুন, মূলা, শসার পাশাপাশি ধস নেমেছে টমেটোর বাজারেও। আমজানি গ্রামের টমেটো চাষি মনিরুল হক জানান, কাল থেকে বাজারে আর টমেটো আনবো না। টমেটো পচে জমিতে পড়লে সার হবে। তাও জমির উপকার হবে। কিন্তু কষ্ট করে বাজারে নিয়ে এসে লোকসান গুনতে হচ্ছে।

কারণ পাঁচ মণ টমেটো তুলতে দুইজন লোক লাগে। তাদের মজুরি দিতে হয় ৮০০ টাকা। এখন গাড়ি চলে না। সে কারণে ভ্যানে করে পাঁচ মণ টমেটে মহাস্থান নিতে ৫০০ টাকা লাগবে। প্রতি কেজি টমেটো পাঁচ টাকা দরে বিক্রি করলে পাঁচ মণ টমেটোর দাম আসে ১০০০ টাকা। এখানেই লস ৩০০ টাকা। এছাড়া একজন মানুষের খাওয়া-দাওয়াসহ আরও ১০০ টাকা ধরলে মোট লোকসান হবে ৪০০ টাকা। আর টমেটো ক্ষেত থেকে না তুললে এক টাকাও লোকসান হবে না।

মহাস্থান হাটের ইজারাদার আলহাজ আজমল হোসেন জানান, স্বাভাবিক সময়ে কাঁচা বাজারকে ঘিরে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জেলার দুই থেকে তিন হাজার পাইকার আসতো এ হাটে। কিন্তু সপ্তাহ খানেক ধরে করোনাভাইরাসের জন্য পাইকাররা না আসায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

এদিকে পাইকারি বাজারে সবজির দাম একে বারে কম হলেও শহরের খুচরা বাজারগুলোতে ৫-৬ গুণ বেশি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। করোনাভাইরাসের প্রভাবে আমদানি কমের অজুহাতে তারা বেশি দামে সবজি বিক্রি করছেন।

আরএআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।