ফেসবুকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানালেন এক করোনা রোগী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর
প্রকাশিত: ০৩:৩৮ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২০

গাজীপুরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত একজন ফেসবুকে তার চিকিৎসা, পরিবারের সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে অভিজ্ঞতার বিবরণ দিয়েছেন। সমাজের চিত্র তুলে ধরা এই মানুষটির অভিজ্ঞতা অনেকের বিবেককে নাড়া নিয়েছে। শনিবার বেলা ১১টার তিনি ফেসবুক ওয়ালে তার অভিজ্ঞতার বিবরণ দেন।

ফেসবুকে দেয়া তার স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
‘শরীরের পরিস্থিতি ভালো না হলেও আল্লাহর রহমত আর আপনাদের দোয়ায় অবনতির দিকে নয়, এটাই ভালো মনে করছি এখন। দয়া করে আপনারা আরো অনেক বেশি সতর্ক থেকে, সুস্থ থেকে, বেঁচে থাকার চেষ্টা করুন। সঙ্গে সঙ্গে করোনা মোকাবেলায় সরকারি ব্যবস্থাপনা আরও জোরদার করতে সবাই দাবি জানান।

আমার এই কদিন যা অভিজ্ঞতা হয়েছে- সরকারি ব্যবস্থাপনার ঘুম ভাঙে অনেক দেরিতে। অথচ আমার বাসার লোকজনের চোখে ঘুম নেই। আমি আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার পর আমার বাসায় থাকা বৃদ্ধা শাশুড়ি, ক্যান্সারের পেশেন্ট আমার স্ত্রী, একমাত্র ছেলে ও বাসায় থাকা এক ভাস্তির নমুনা সংগ্রহ করে নেয়া হয়েছে ১৬ এপ্রিল। অথচ আমার ১৪ তারিখ রাতে পজিটিভ আসার পরপরই তাদের নমুনা পরীক্ষার কথা। এখানে তো কোনো প্রাইভেট হাসপাতাল নেই, যেখানে পরীক্ষা করা যাবে। তাই সরকারি ব্যবস্থাপনার উপর নির্ভর করতে হয়।

যেহেতু সেদিন রাতে আমার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে তাই সেদিন তো সম্ভব না পরের দিন ১৫ এপ্রিল নিলে ভালো হতো। ১৪ তারিখ রাতে যিনি সদরের দায়িত্বে আছেন তিনি জানিয়েছেন পরদিন ১৫ তারিখ তাদের নমুনা নেবেন। পরদিন আমি ওই ভদ্রলোককে সকাল থেকে কয়েকবার ফোন দিয়েছি, তাদের অনেক ব্যস্ততা, দুপুর পর্যন্ত কেউ স্যাম্পল নিতে আসার সময় পাননি, আগের রাত একটা পর্যন্ত তারা কাজ করেছেন।

দুপুরের পর অফিসের লোকজন আমার বাসায় আসবেন পরিবারের লোকজনের নমুনা নিতে যখন উনি এটা জানিয়েছেন, তখন আমি ওনাকে বলেছি, তাহলে আর আজকে দরকার নাই, কারণ আজ দুপুরের পর তো আর পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠাবেন না। তিনিও জানালেন হ্যাঁ, আজ আর ঢাকায় পাঠানো সম্ভব হবে না। তাহলে আর আজ স্যাম্পল নিয়ে লাভ কি, কাল ফার্স্ট টাইমে এসে নিয়ে যেতে বলেন তাদের। ১৬ তারিখ ফার্স্ট টাইমে এসে স্যাম্পল নিয়ে গেছেন। এর মাঝে কিন্তু কেটে গেল একটা দিন। ১৬ তারিখের পর ১৭ তারিখ রিপোর্ট আসার অপেক্ষায়। রাত অনেক রাত পর্যন্ত আত্মীয়-স্বজনরা ফোন দিয়েছেন রিপোর্ট কী? বন্ধুবান্ধব জানতে চেয়েছেন। আমিও বিকেলের পর থেকে সদরের ওই কর্মকর্তাকে ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছি, রাত পর্যন্ত।

দিনভর কয়েকবার ফোন দেওয়ার পর বন্ধু প্রকৌশলী ইব্রাহিম খলিল রাত ১১টার পরও তাদের ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছেন রিপোর্ট কী? উত্তর দিতে পারেনি। রিপোর্ট আসেনি। আজ ১৮ এপ্রিল সকালে ন’টার পরপরই কর্মকর্তাকে ফোন দিলাম রিসিভ করতে পারেননি। ১০টার দিকে আবারও ফোন দিলাম রিসিভ করে জানান এখনও তিনি রিপোর্ট পাননি। হয়তো সিভিল সার্জন অফিসে এসেছে, পেলে জানাবেন। তাহলে এখন আমার জানার উপায় কী? সিভিল সার্জন সাহেবের কি ফোন ধরার তেমন সুযোগ আছে? আর থাকলেই কি, উনিতো হোম কোয়ারান্টাইনে।

এবার আমার রিপোর্ট পাওয়ার একটু অভিজ্ঞতা জানাই। সিভিল সার্জন অফিসের আমজাদ ভাইয়ের সহায়তায় ১৩ তারিখ সকাল ৯টার দিকে নমুনা দিতে এসেছি সদরে। ওনারা জানিয়েছেন সাধারণত রিপোর্টের পরদিন। পরদিন দুপুর গড়িয়ে বিকেল, বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। সিভিল সার্জন, ওনার অফিসের স্টাফ, সদর কর্মকর্তা কতজনকে যে ফোন দিতে দিতে অস্থির হয়ে গেলাম। উত্তর পাইনা।

সিভিল সার্জন বললেন, দেখছি, জেনে আপনাকে জানাবো। মাগরিবের নামাজে দাঁড়াতে গেলাম এমন সময় আমাদের কাপাসিয়ার সহকর্মী সাংবাদিক মজিবুর রহমান জানালেন, কাপাসিয়ায় ইকবাল আর ছায়াবিথির ঠিকানা দিয়ে একজনের পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে।

স্যাম্পল দিলাম গাজীপুরে, আসল কাপাসিয়ায় বুঝলাম না। গাজীপুর থেকে না জানতে পারলে কি, মনে জানান দিয়েছে ওটাই আমি। এর প্রায় ঘণ্টা খানেক পর সদরের ওই কর্মকর্তা আমাকে নিশ্চিত করেছেন, যে আমি করোনা পজিটিভ।

এই ব্যবস্থাপনার চিত্র জানলে আপনারা আরো বেশি সতর্ক হবেন উপকৃত হবেন বলে জানালাম। কারো মনে দুঃখ দেয়ার জন্য নয়, আঘাত করার জন্য নয়, কোনোভাবে হেয় করার জন্য নয়। আপনারা সবাই ভালো থাকুন, আমার পরিবারের লোকগুলির জন্যও দোয়া করুন।’

উপরের স্ট্যাটাসের এক ঘন্টা পর তিনি আবার ফেসবুকে জানান ‘আমার পরিবারে এখন দুঃসংবাদ। আর কিছু জানাতে চাই না। আপনারা দোয়া করবেন।’

এতে অনেকে অনুমান করছেন তার পরিবারের আরও কেউ করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়েছেন।

আমিনুল ইসলাম/এফএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।