বেতনে গড়িমসি গার্মেন্টের, শ্রমিক বিক্ষোভে ছড়াচ্ছে করোনা
গাজীপুরে লকডাউন ভেঙে বাজার ও রাস্তাঘাটে মানুষের চলাফেরা বেড়েছে। এদের মধ্যে পোশাক কারখানার শ্রমিকের সংখ্যাই বেশি। এদিকে জেলায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও আশংকাজনকভাবে বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে ১০৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। যা গাজীপুরে এক দিনে আক্রান্তের সর্বোচ্চ। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হলেন ২৮০ জন। লক্ষণ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ৭ জন চিকিৎসকও রয়েছেন। সোমবার দুপুরে সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান এসব তথ্য জানান।
গাজীপুরের সিভিল সার্জন ডা. খায়রুজ্জামান জানান, রোববার ১৬৩ জনের নমুনা ঢাকায় পাঠানো হয়েছিল। সোমবার সকালে পাওয়া রিপোর্টে দেখা গেছে ১০৭ জনের করোনা পজিটিভ। তাদের মধ্যে নগরীর বোর্ডবাজার এলাকার করোনা লক্ষণ নিয়ে মারা যাওয়া এক শিশুর নমুনাও ছিল। তারও করোনা পজিটিভ এসেছে। তাকে নিয়ে জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা দুজনে দাঁড়ালো।
এছাড়াও আক্রান্তদের মধ্যে সিটি করপোরেশনের কাশিমপুরে অবস্থিত শেখ ফজিলুতুন্নেসা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক ও চিকিৎসক, নার্সসহ আক্রান্ত হয়েছেন ৩০ জন।
জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার জেলায় সর্বাধিক ৩৭, শুক্রবার ৩১ ও শনিবার ১১ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। সোমবার ১০৭ জন আক্রান্তের মধ্য দিয়ে নতুন রেকর্ড হলো গাজীপুরে। স্বাস্থ্য অধিদফতর এরই মধ্যে গাজীপুরকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। সোমবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে গাজীপুরে অধিকসংখ্যক আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
একদিনে এত সংখ্যক লোকের আক্রান্তের বিষয়ে সিভিল সার্জন বলেন, ‘গাজীপুরের অনেক গার্মেন্ট খোলা। অনেক গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ বেতন না দেয়ায় শ্রমিকরা রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করছেন। তাদের মাধ্যমে করোনাভাইরাস জেলায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। অধিক পরিমাণে নমুনা সংগ্রহের কারণে অধিক পরিমাণে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে।’
অপরদিকে গাজীপুরে ‘লকডাউন’ বা ‘হাট-বাজার বন্ধ’ কোনো ঘোষণাই তেমন কাজে আসছে না। অধিকাংশ মানুষই শুনছেন না কোনো ঘোষণা। কোনো কোনো মার্কেটে ব্যবসা চলছে প্রায় স্বাভাবিক। চলছে হাট-বাজারও। বিশেষ করে নিম্নবিত্ত মানুষ খাদ্যাভাবে থাকায় মানছে না কোনো বিধিনিষেধ। আবার গার্মেন্ট কারখানার হাজার হাজার শ্রমিক প্রতিদিনই মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা করেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লকডাউন থাকার পরও শহরের বিভিন্ন অলি-গলি পাড়া মহল্লায় স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির মধ্যে আতংকের চিহ্ন মাত্র নেই অনেকের মাঝে। ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ থেকে অনেক মানুষ গাজীপুরে চলে এসেছে। ফলে গাজীপুর জেলা রয়েছে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে।
করোনাভাইরাসের নতুন হটস্পট হতে যাচ্ছে গাজীপুর এই আশঙ্কা থেকে নিজের তৎপরতা বাড়িয়েছেন সিটি করপোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বিবেচনায় চিকিৎসক ও নার্সদের থাকার জন্য স্থানীয় কয়েকটি রিসোর্ট ভাড়া করছেন মেয়র। যাতে এই স্বাস্থ্যকর্মীদের কারণে তাদের পরিবারে ঝুঁকি তৈরি না হয়।
জানা গেছে, আপাতত গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় পাঁচটি রিসোর্টে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার ব্যবস্থা করছেন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। ইতিমধ্যে দুটি উন্নতমানের হোটেল ও রিসোর্ট বুকিং দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এ সংখ্যা ১০টিতে উন্নীত করা হবে।
সোমবার দুপুরে মেয়র করোনায় আক্রান্ত এক সাংবাদিকের বাসভবনের নিচে যান। মেয়র রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওই আক্রান্ত সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলেন। বাসার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ওই সাংবাদিককে বুকে সাহস রাখতে বলেন মেয়র। তিনি যেকোনো প্রয়োজনে পাশে আছেন বলেও জানান।
আমিনুল ইসলাম/এফএ/এমএস