গাজীপুরে ৯১ জন চিকিৎসক নার্স স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত
গাজীপুরে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাসের ঝুঁকিতে। এরপর রয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। গাজীপুরে কয়েকটি হাসপাতালে এ পর্যন্ত ২১ জন চিকিৎসক, ২৪ জন নার্স ও ৪৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সর্বশেষ শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের এক চিকিৎসক, সিনিয়র নার্সও রয়েছেন।
এসব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর নমুনা আইইডিসিআরে পাঠানো হলে সেখান থেকে তাদের রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এছাড়া কর্মকর্তাসহ ৩২ জন পুলিশ সদস্যও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের গাছা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনারসহ ২৫ জন এবং বাকি সাতজন গাজীপুর জেলা পুলিশের কালীগঞ্জ থানার পুলিশ সদস্য।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের আনা নেয়া, দেখাশোনা এবং কোয়ারেন্টাইনে থাকা রোগীদের পাহারাসহ সব পর্যায়ের মানুষের সেবা দিতে গিয়ে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। পুলিশ সদস্যদের পিপিই ও মাস্ক পরিধানসহ সুরক্ষা সামগ্রী নিয়ে দায়িত্ব পালন করতে বলা হয়েছে। তারপরও পুলিশ আক্রান্ত হচ্ছে।
গাজীপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা মুহাম্মদ শাহীন জানান, প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে নমুনা ঢাকায় আইইডিসিআরে পাঠানো হচ্ছে। কিন্তু গত দুই দিন ধরে গাজীপুরে আক্রান্তদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। তবে গত সোমবার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এ পর্যন্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীসহ ৯১ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে চিকিৎসক রয়েছে ২১ জন, নার্স ২৪ জন ও স্বাস্থ্যকর্মী আছেন ৪৬ জন।
এর মধ্যে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাতজন, কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালের ১২ জন চিকিৎসক রয়েছেন।
নার্সদের মধ্যে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাতজন, কাপাসিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সাতজন, কালিয়াকৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একজন ও শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে হাসপাতালের আটজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন হাসপাতালের ৪৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
শহীদ তাজদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের এক চিকিৎসক জানান, তিনি গাজীপুর মহানগরীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত গ্রীন হাসপাতালে ইনডোর মেডিকেল অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। গত ১৪ এপ্রিল তার এক সহকর্মীর সঙ্গে বেসরকারি ওই হাসপাতালে অপারেশন করার সময় আবাসিক চিকিৎসক উপর্যুপরি হাঁচি এবং কাশি দিতে থাকলে তাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে দেন তার সহকর্মী। পরে ১৮ এপ্রিল করোনা পরীক্ষা করার জন্য তার নমুনা ঢাকায় পাঠানো হলে ২০ এপ্রিল তার দেহে করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে।
এদিকে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. খলিলুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার থেকে এ হাসপাতালে পুরোদমে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেয়া হবে। এ জন্য হাসপাতালটি সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত করা হয়েছে। চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এসব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সর্বোচ্চ সুরক্ষা দেয়া হবে।
আমিনুল ইসলাম/আরএআর/এমএস