বাড়িতে থেকেই সুস্থ হলেন করোনা আক্রান্ত শিশু ও তার বাবা-মা
ঝালকাঠিতে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়া এক পরিবারের তিনজনই সুস্থ হয়েছেন। আক্রান্ত হবার পরে চিকিৎসায় তারা সুস্থ হন। পরপর দুইবার পরীক্ষায় তাদের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে।
বৃহস্পতিবার সকালে এ তথ্য জানিয়েছেন ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. শ্যামল কৃষ্ণ হালদার। সুস্থ হওয়া ব্যক্তিরা হলেন, ঝালকাঠি সদর উপজেলার গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের বিন্নাপাড়া গ্রামের নাছির হাওলাদার (২৮), তার স্ত্রী সুমা আক্তার ( ২৩) ও তাদের ৬ মাসের শিশু পুত্র মো. সাজিদ।
জানা গেছে, পরিবারের সবাই নারায়ণগঞ্জে বসবাস করতেন। এর মধ্যে নাছির উদ্দিন দোকানে দোকানে বিভিন্ন মালামাল সরবারহ করতেন। ৮ এপ্রিল তারা নারায়ণগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন। এরপরে তাদের জ্বর ও সর্দি দেখা দিলে করোনা পরীক্ষা করা হলে পজেটিভ আসে। শুরুতে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পুরো পরিবার ও এর আশপাশের লোকজন।
এসময় ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. শ্যামল কৃষ্ণ হালদারের নির্দেশনা অনুযায়ী সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ওমর ফারুকের তত্ত্বাবধায়নে হোম আইসোলেশনে থেকেই চিকিৎসা শুরু হয় তাদের। স্বাস্থ্য সহকারী মো. জুবায়ের হোসেন নিয়মিত তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। এরা জ্বর ও কাশির ওষুধ খেতেন নিয়মিত। এছাড়া লেবু, আদা, এলাচি, দারুচিনি গরম পানির সাথে মিশিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে ভাপ নিতেন এবং পান করতেন। এর বাইরে নিয়মিত ব্যয়াম করাসহ অন্যান্য নিয়ম কানুন মেনে চলায় এক মাসের মধ্যেই করোনাকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে পুরো পরিবার।
অসুস্থ থাকাকালীন পরিবারটি জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা পেয়েছেন।
করোনাকে জয় করা নাছির হাওলাদার বলেন, প্রথম যেদিন শুনেছি আমার পুরো পরিবার করোনায় আক্রান্ত তখন একদম ভেঙে পড়েছিলাম। গরিবের সংসার কিভাবে চিকিৎসা নিব, কি খাব? কিন্তু জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ ও জন প্রতিনিধিরা সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন। তারা আমাদের চিকিৎসা ও খাদ্য সাহায্যসহ সব ধরনের সহযোগিতা করেছেন। এজন্য আমরা দ্রুত সুস্থ হতে পেরেছি। আমাদের সহযোগিতায় যারা এগিয়ে এসেছেন আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ।
গাবখান ধানসিঁড়ি ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা স্বাস্থ্য সহকারী মো. জুবায়ের হোসেন বলেন, আমি প্রতিনিয়ত পরিবারটির খোঁজখবর নিতাম। এরা নিয়ম মেনে চিকিৎসা নিচ্ছে কিনা সেই বিষয়ে খেয়াল রাখতাম।
সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. ওমর ফারুক বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে সব সময় চেষ্টা ছিল কিভাবে এদের সুস্থ করে তোলা যায়। যখন যে ওষুধ দরকার হতো আমরা তা দিয়ে দিতাম। আর তাদের মনোবল সব সময় চাঙ্গা রাখতাম। নিয়ম মেনে চিকিৎসা নেয়ায় এরা করোনাকে জয় করতে সক্ষম হয়েছে।
তিনি বলেন, সিভিল সার্জন ডা. শ্যামল কৃষ্ণ হালদার ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. রিফাত আহম্মেদের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা কাজ করেছি।
ঝালকাঠির সিভিল সার্জন ডা. শ্যামল কৃষ্ণ হালদার বলেন, করোনার হাত থেকে বাঁচতে হলে এ মুহূর্তে সবার ঘরে থাকতে হবে। আর জরুরি প্রয়োজনে বের হলে মাস্ক ও গ্লাভস পরতে হবে। এছাড়া অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
আতিক রহমান/এমএএস/এমকেএইচ