আনারসের পিস ৪ টাকা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি রাঙ্গামাটি
প্রকাশিত: ১০:২১ পিএম, ০৭ মে ২০২০

আনারসের রাজধানী নামে পরিচিত রাঙ্গামাটির নানিয়ারচর উপজেলা। এখানে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে কৃষকরা আনারসের চাষ করেন। বছরের এই সময়টা হচ্ছে চাষিদের জন্য আনন্দের সময়। কারণ বছরের এই সময় চাষিরা বাগান থেকে আনারস নিয়ে হাটে আসেন।

কিন্তু এবার করোনার প্রভাবে সব কিছুই বন্ধ থাকায় আনারস নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। একদিকে আনারস পেকে যাওয়া এবং অন্যদিকে দাম না পাওয়ায় হতাশ পাহাড়ের আনারস চাষিরা।

প্রতিবছর চৈত্র মাস থেকে শুরু হয়ে বর্ষার আগ পর্যন্ত আনারসের মৌসুম ধরা হয়। ইতোমধ্যে বাগানে আনারস পাকতে শুরু করেছে। ফলে চাষিরাও আনারস নিয়ে আসছেন বাজারে। তবে বাজারে আসলেও করোনা ঝুঁকির মোকাবিলায় অঘোষিত লকডাউন চলার কারণে বাজারে ক্রেতা নেই। যারা আছেন, তারাও দাম দিচ্ছেন কম। এতে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা।

jagonews24

একদিকে ফল পাকতে শুরু করায় বাগানেও রাখা সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে ফল নিয়ে হাটে আসলেও দাম পাচ্ছেন না চাষিরা। এছাড়া রয়েছে পরবিহন সমস্যা। কারণ আনারস রাঙ্গামাটির স্থানীয় বাজারের চাহিদা মিটিয়ে চলে যায় চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। কিন্তু পরবিহন বন্ধ থাকায় আনারস বাজারজাত করতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা।

আনারস বাগানের মালিক সুদাকর চাকমা বলেন, আমার এ বছর ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের জন্য আনারস বাজারে নিলেও বিক্রি করতে পারছি না। আনারস সব একসঙ্গে পেকে যাওয়ায় পড়েছি বিপদে। কারণ আনারস বেশিদিন রাখা যায় না। দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তাই পাকা ফল ফেলে দিতে হচ্ছে।

চোখে-মুখে হতাশার ছাপ নিয়ে আরেক আনারস চাষি জীবন কুমার চাকমা বলেন, আনারস নিয়ে এখন কি করব তা ভেবে পাচ্ছি না। আমাদের থেকে ব্যবসায়ীরা এসে ফল কিনে নিয়ে যায়। তারা এখন বলছে পরিবহন সমস্যার জন্য ফল বেশি কিনতে পারবে না। আবার যা কিনছে তার সঠিক দাম দিচ্ছে না। প্রতি পিস আনারসের দাম ৪-৫ টাকা দিচ্ছে তারা। এতে তো আমার কীটনাশকের দামও উঠবে না।

দেশের বিভিন্ন জায়গায় আড়ৎ বন্ধ থাকার কারণে আগাম বাগান কিনে বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। তেমনই এক ব্যবসায়ী আজগর আলী। তিনি বলেন, আগাম যে বাগানগুলো কিনে রেখেছিলাম চাষিদের থেকে; সে ফলন এখন কিভাবে জেলার বাইরে পাঠাব তা নিয়ে ভেবে কুল পাচ্ছি না। এমনটা হবে তো আগে ভাবিনি।

এদিকে ঘাটে যেসব শ্রমিক ফল তোলা-নামায় ব্যস্ত থাকেন, তারাও বাজারে ফল না আসায় কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন। শ্রমিক সিকদার আলী বলেন, আগে প্রতিদিন আনারস নিয়ে এত পরিমাণ ইঞ্জিনচালিত বোট আসতো যে; ঠিকভাবে আমরা খাওয়ার সময়ও পেতাম না। আর এখন প্রতিদিন হাতেগোনা কয়েকটা ইঞ্জিনচালিত বোট আসে আনারস নিয়ে। কিন্তু আনারসের দাম নেই।

jagonews24

রাঙ্গামাটির ট্রাক মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন সভাপতি আইয়ুব খান বলেন, গত বছর এই সময় প্রতিদিন ৮০ থেকে ৯০টি আনারসের ট্রাক গেলেও বর্তমানে সেটি দাঁড়িয়েছে ১০-১২টিতে। এতে হতাশ পরিবহন সেক্টরের সঙ্গে জড়িত মালিক-শ্রমিকরা।

রাঙ্গামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক পবন কুমার চাকমা বলেন, প্রতি বছরের মতো এবারও পাহাড়ে আনারসের ভালো ফলন হয়েছে। এ বছর জেলায় ২১২৫ হেক্টর জমিতে ৬০ হাজার মেট্রিক টন আনারস উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য চাষি এবং ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। এ পরিস্থিতিতে দেরিতে ফল পরিপক্ক হওয়ার জন্য বিশেষ হরমোন প্রয়োগের পরামর্শ দিয়েছি।

সাইফুল বিন হাসান/এএম/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।