সন্দ্বীপে করোনা আক্রান্ত পরিবারকে হয়রানি করার অভিযোগ
চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একটি পরিবার ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয়দের বিরুদ্ধে। পরিবারের সাত সদস্য কোভিড-১৯ পজিটিভ হলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বাড়ি লকডাউন করে দেয়া হলেও আত্মীয়-স্বজন, পরিচিতজনদের মাধ্যমে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সংগ্রহ করতে চাইলে বাধার মুখে পড়ে আক্রান্ত পরিবার ও পার্শ্ববর্তী বাসিন্দারা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে লকডাউনে থাকা বাসিন্দাদের সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের বাধার মুখে নিত্যপণ্য ও জরুরি ওষুধ সংগ্রহ করতে পারছেন না ভুক্তভোগীরা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সাতঘরিয়া গ্রামের হরিবলির বাড়ির নিমাই সাহা সম্প্রতি ব্যবসায়িক কাজে রাজশাহী যান। সেখান থেকে সন্দ্বীপে ফিরে আসার পর তার শরীরে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়। এরপর পুরো পরিবার কোভিড-১৯ পরীক্ষা করলে ২১ জুন রাতে পরিবারের সাত সদস্যের ভাইরাস পজিটিভ হওয়ার খবর দেয় প্রশাসন।
এরপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ বাড়িটি লকডাউন করে দেয়া হয়। হরিবলির বাড়িতে বসবাস করা ১১টি পরিবারের অধিকাংশই ব্যবসায়ী হওয়ায় তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখা হয়। তবে আক্রান্তরা শারীরিকভাবে উপসর্গবিহীন ও সুস্থবোধ করায় ডাক্তারি পরামর্শে ২৪ জুন পরিবারের সাত সদস্যকে আবারও করোনা পরীক্ষা করানো হয়। কয়েকদিনের মধ্যে দ্বিতীয় দফার রিপোর্ট পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্যরা বলেন, করোনাভাইরাস পজিটিভ আসার পর আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে নিত্যপণ্য, কাঁচাবাজার ও ওষুধ সংগ্রহ করা হচ্ছে। কিন্তু স্থানীয় কিছু মানুষ খাবার, কাঁচাবাজার ও ওষুধ আনতে বাধা দিচ্ছেন। এমনকি কেউ যদি আমাদের জন্য কিছু সরবরাহ করে তাদের মারধর করার হুমকিও দেন স্থানীয় নূর ইসলাম কন্ট্রাকটরসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি।
হরিবলির বাড়ির বাসিন্দা বদিউজ্জামান উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক বিকাশ সাহা অভিযোগ করে বলেন, প্রশাসনিক নির্দেশে আমরা সম্পূর্ণ লকডাউনে রয়েছি। কিন্তু ১১টি পরিবারের জন্য নিত্যপণ্য ও জরুরি ওষুধ সংগ্রহে বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দেয়া হলেও স্থানীয় কিছু মানুষের অমানবিক আচরণে করোনায় আক্রান্ত ও প্রতিবেশীরা কঠিন সময় পার করছে।
অভিযোগ উঠেছে, মঙ্গলবার ও বুধবার আক্রান্ত ও আক্রান্তদের প্রতিবেশীদের জন্য খাবার ও নিত্যপণ্য নিয়ে আসা এক দূর সম্পর্কিত আত্মীয়কে পথিমধ্যে ফিরিয়ে দেয় এলাকার কিছু ব্যক্তি। সারিকাইত ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ফখরুল ইসলাম পনির নিয়মিত যোগাযোগ রাখলেও ৯ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মো. হান্নানসহ অন্যরা আক্রান্ত বাড়ির জরুরি প্রয়োজনে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি।
করোনা আক্রান্তদের হয়রানি করার অভিযোগের বিষয়ে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শরিফুল ইসলাম বলেন, করোনা আক্রান্ত হওয়ার কারণে বাড়িটি লকডাউন করা হয়েছে। কিন্তু আক্রান্ত ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের নাজেহাল করার বিষয়টি আমরা অবগত নই। এ বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনো অভিযোগও আসেনি। কেউ যদি আক্রান্তদের নিত্যপণ্য সংগ্রহে বাধা বা সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে তবে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।
এ বিষয়ে সন্দ্বীপ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিদর্শী সম্বৌধি চাকমা বলেন, করোনাভাইরাস আক্রান্ত হওয়া অপরাধ নয়। তবে আক্রান্তদের সরকারি নির্দেশনায় লকডাউনে থাকতে হবে। সারিকাইত ইউনিয়নের একটি পরিবারের সাতজন সদস্য করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়েছেন। আমরা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে আক্রান্ত পরিবার ও তাদের প্রতিবেশীদের লকডাউনকালীন সব ধরনের সহযোগিতার নির্দেশনা দিয়েছি। এরপরও কেউ যদি আক্রান্ত পরিবার ও তাদের প্রতিবেশীদের সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করে আমরা প্রশাসনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
বিএ