বাগেরহাট-সাতক্ষীরায় করোনা পরীক্ষা বন্ধ, খুলনায় মেশিন অচল
শীতের শুরুতেই দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে শনাক্ত হচ্ছে ৩০ জন করে। কিন্তু খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে সাতক্ষীরা ও বাগেরহাটে করোনা পরীক্ষা বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। পাশাপাশি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দুটি আরটিপিসিআর মেশিনের মধ্যে একটি অচল হয়ে গেছে। ফলে খুলনায় করোনা আক্রান্তদের পরীক্ষা করতে সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এদিকে, সোমবার ঝিনাইদহ ও খুলনায় করোনা আক্রান্ত হয়ে একজন করে রোগী মারা গেছেন। রোববার মারা গেছেন দুজন। বর্তমানে করোনার দ্বিতীয় ঢেউতে আক্রান্তের তালিকায় যশোর জেলা শীর্ষে রয়েছে। দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনসহ অন্যান্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মাস্ক ব্যবহারে বাধ্যবাধকতা করা হচ্ছে।
নভেম্বরের শুরুতেই দক্ষিণাঞ্চলে শীত অনুভূত হয়। সংশ্লিষ্টরা শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ নিয়ে সতর্ক অবস্থা অবলম্বন করেন। ঢাকাতে ৮ মার্চ করোনা শনাক্ত হলেও খুলনা বিভাগে মার্চের শেষদিক থেকে করোনার সংক্রমণ বাড়তে থাকে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অফিস-আদালত বন্ধ এবং ২৪ নং ওয়ার্ডে লকডাউন করা হয়। বিভাগের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতালকে বেছে নেয়া হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, চলতি বছরের মধ্য মার্চ থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় এক লাখ ২২ হাজার ৬২৪ জনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। তার মধ্যে ২৪ হাজার ১৭ জন করোনায় আক্রান্ত বলে শনাক্ত হয়।
এ পর্যন্ত বিভাগের ১০ জেলায় ৪২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪১৯ জন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের তালিকায় রয়েছে খুলনা জেলায় ১০৮ জন, কুষ্টিয়ায় ৮২ জন, যশোরে ৫০ জন, ঝিনাইদহে ৩৮ জন, চুয়াডাঙ্গায় ৩৭ জন, সাতক্ষীরায় ৩১ জন, বাগেরহাটে ২৬ জন, নড়াইলে ২০ জন, মেহেরপুরে ১৫ জন এবং মাগুরায় ১৩ জন।
স্বাস্থ্য পরিচালকের দফতরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) চিকিৎসক ফেরদৌসী বেগম বলেন, বিভাগের আট জেলায় ২৯ নভেম্বর ১৮ জন এবং ৩০ নভেম্বর ৫৭ জন করোনা আক্রান্ত শনাক্ত হন। সোমবার আক্রান্তদের মধ্যে ৩০ জনই যশোরের অধিবাসী।
তিনি বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। খুলনা মেডিকেল কলেজ ও জেনারেল হাসপাতালে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থপনের কাজ চলছে। নমুনা পরীক্ষার জন্য খুলনা মেডিকেলের দুটি মেশিনের মধ্যে একটি অকেজো থাকায় বিদেশগামীদের রিপোর্ট ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রোববারের সভায় খুলনার মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে মাস্ক ব্যবহারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা ও অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ দ্রুত শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
খুলনার ডেপুটি সিভিল সার্জন চিকিৎসক মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ প্রতিরোধে জেনারেল হাসপাতালে ৪২ শয্যা, ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ৩১ শয্যা, আদ-দ্বীন, গাজী ও সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৫০টি করে, নূর নগর ডায়াবেটিক হাসপাতালে ১০০ শয্যা ও নয় উপজেলায় ৪৫টি শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোনোক্রমেই যেন রোগী ফেরত না যায় সে বিষয়ে মনিটরিং করা হচ্ছে।
খুলনা ডায়াবেটিক হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুর পর্যন্ত একজন আইসিইউতে এবং তিনজন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
আলমগীর হান্নান/এএম/পিআর