ফেঞ্চুগঞ্জে ট্রেন দুর্ঘটনা : ছড়িয়ে পড়েছে দেড় লাখ লিটার তেল

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক সিলেট
প্রকাশিত: ০৭:২১ পিএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১

সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জে তেলবাহী ট্রেনের ১০টি বগি (ওয়াগন) লাইনচ্যুত হয়ে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার লিটার তেল আশেপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় ৮০০ মিটার রেললাইন।

এর ফলে বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টা থেকে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে- শুক্রবার রাতেও ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।

এদিকে তেলবাহী ওয়াগনগুলো উপুড় হয়ে প্রায় দেড় লাখ লিটার তেল ছড়িয়ে পড়ায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে। তবে মাইজগাঁওয়ের বিয়ালীবাজার ও এর আশেপাশের এলাকার মানুষের মধ্যে যেনো ছড়িয়ে পড়েছে উৎসবের আমেজ। বগি থেকে ছড়িয়ে পড়া তেল সংগ্রহে নেমেছেন এলাকার নারী-পুরুষ-শিশু সকলে।

jagonews24

দুর্ঘটনাকবলিত এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তেল সংগ্রহ করছেন কয়েক’শ মানুষ। যেকোনো সময় ওই তেল থেকে আগুন লাগার আশঙ্কা থাকায় রেল ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে মাইকিং করেও লোকজনকে তেল সংগ্রহ থেকে দূরে রাখা যাচ্ছে না।

তেল সংগ্রহে আসা গুতিগাঁওয়ের বাসিন্দা সিরাজ মিয়া বলেন, ‘সবাই তেল নিচ্ছে। আমিও নিচ্ছি। এগুলোতে তো পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। আমরা নিলে ক্ষতিই বা কী?’

সিরাজ জানান, রাতে দুর্ঘটনার পরই তেল সংগ্রহে নামেন তিনি। টর্চ লাইটের আলো দিয়ে রাতেই ১২ লিটার সংগ্রহ করেছেন। শুক্রবার সকালে ৬ লিটার ও বিকেলে আরও ৪ লিটার তেল সংগ্রহ করেছেন তিনি। তবে দিনে পুলিশের বাধার কারণে বেশি তেল সংগ্রহ করা যায়নি বলে জানান।

jagonews24

গৃহিণী আফিয়া বেগম বলেন, ‘ভোরে ঘুম থেকে উঠে দেখি সবাই তেল সংগ্রহ করছে। তাই আমিও এসেছি। এখন পর্যন্ত এক বালতি তেল সংগ্রহ করতে পেরেছি।’

বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টায় মাইজগাওয়ের গুতিগাঁও এলাকার তেলবাহী একটি ট্রেনের ১০টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে পড়ে। বগিগুলো থেকে জ্বালানি তেল ছড়িয়ে পড়ে। রেললাইনের পাশ্ববর্তী জমি, সড়ক ও পুকুরে তেল ছড়িয়ে পড়েছে। ওই তেল সংগ্রহ করতে বালতি-জগসহ নানা আসাবাবপত্র নিয়ে ভিড় করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

অতিরিক্ত ভিড়ের কারণে উদ্ধার কাজও ব্যাহত হচ্ছে। তেল সংগ্রহে আসা জনতাকে নিবৃত্ত করতে এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ। এছাড়া তেল ছড়িয়ে পড়ায় অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিও দেখা দিয়েছে।

সিলেট রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান বলেন, ‘ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে ছয়টি টিমে দুই শতাধিক উদ্ধারকর্মী কাজ করছেন। তবে ঠিক কত ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা সম্ভব হবে তা জানাতে পারছি না। আজ রাতে সম্ভব নাও হতে পারে।’

jagonews24

এদিকে ট্রেন লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রেলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা খায়রুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত কমিটিকে তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

এর আগে গত বছরের ৭ নভেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে ও ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের মাধবপুরে একই দৃশ্য দেখা গিয়েছেল। শ্রীমঙ্গল ও মাধবপুরে তেলবাহী ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়ে তেল ছড়িয়ে পড়ে। শ্রীমঙ্গল ও মাধবপুরেও দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেন থেকে শতশত মানুষ এসব তেল সংগ্রহে জড়ো হন।

দেশের সবচেয়ে দুর্ঘটনাপ্রবণ হিসেবে পরিচিত ঢাকা-সিলেট রেলপথের সিলেট-আখাউড়া সেকশনে চারমাসের মধ্যে এনিয়ে তৃতীয়বার তেলবাহী ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটল। তিনটি দুর্ঘটনার পরই তেল নিয়ে রীতিমত হরিলুট লেগে যায়।

ছামির মাহমুদ/এএএইচ/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।