কুষ্টিয়ায় টিকা নিতে কেন্দ্রে উপচেপড়া ভিড়, উপেক্ষিত স্বাস্থ্যবিধি
করোনাভাইরাসের টিকা নিতে কুষ্টিয়ার কলকাকলি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মানুষের উপচেপড়া ভিড়। সোমবার (১২ জুলাই) সকাল ৮টায় টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হলেও ভোর থেকেই কয়েক হাজার মানুষের দীর্ঘ লাইন পড়ে। সেখানে ছিল না সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা। অনেকের মুখে মাস্কও ছিল না।
এদিকে ভিড়ের কারণে নির্ধারিত সময়ের আগেই দুপুর পৌনে ১২টার দিকে টিকা ফুরিয়ে যায়। টিকা না পেয়ে শেষ পর্যন্ত কয়েক হাজার মানুষ নিজেদের গন্তব্যে ফিরে যেতে বাধ্য হন।
কুষ্টিয়ার সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, শনিবার (১০ জুলাই) থেকে কুষ্টিয়ায় শুধু একটি কেন্দ্রে করোনার টিকা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে দুদিন ধরে কুষ্টিয়া আরপিটিআই কার্যালয় কেন্দ্রে এ টিকা দেয়ার কার্যক্রম চলছিল। কিন্তু সেখানে মানুষের উপচেপড়া ভিড়ের কারণে স্থান সংকুলন না হওয়ায় রোববার কেন্দ্র পরিবর্তন করে পাশেই কুষ্টিয়ার কলকাকলি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নেয়া হয়।
\
সকালে কলকাকলি মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, আগের দিনের মতোই সেখানে উপচেপড়া ভিড়। বিদ্যালয়ের দুটি কক্ষের একটিতে পুরুষ অন্যটিতে নারীদের টিকা দেয়া হচ্ছে। কক্ষ থেকে শুরু হওয়া লাইন বিদ্যালয় প্রাঙ্গণের মাঠ ছাড়িয়ে একেবারে প্রধান ফটকের বাইরে রাস্তায় গিয়ে ঠেকেছে। বাইরে ও সামনের সড়কে মানুষের দীর্ঘ লাইন। সব মিলিয়ে অন্তত চার থেকে পাঁচ হাজার মানুষ টিকা কেন্দ্রে জড়ো হয়েছেন।
টিকা নিতে আসা লাইনে দাঁড়ানো কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, গত চার দিন আগে তারা রেজিস্ট্রেশন করেছেন। কিন্তু কোনো এসএমএস পাননি। তারপরও এসেছেন টিকা নিতে। আবার কয়েকজন জানান, তারা এসএমএস পাওয়ার পর টিকা নিতে এসেছেন।
টিকা নিতে আসা কাকলী খাতুন জানান, টিকা নেয়ার জন্য তিনি সকাল ৭টায় কেন্দ্রে এসেছেন। দীর্ঘ লাইন পেরিয়ে তিনি টিকা নিতে পেরেছেন। টিকা নিতে এসে ধাক্কাধাক্কি আর অব্যবস্থাপনা দেখে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সিভিল সার্জন ডা. এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম জানান, শনিবার টিকা নেয়ার জন্য ৩২৬ জনকে এসএমএস পাঠানো হয়। রোববার ৫০০ জন এবং সোমবার ৬০০ জনকে এসএমএস পাঠানো হয়। কিন্তু হাজার হাজার মানুষ টিকা নেয়ার জন্য ভিড় করার কারণে শনিবার ১ হাজার ২৮ জন, রোববার ১ হাজার ৫৬ এবং সোমবার ৬০০ টিকা দেয়া হয়।
তিনি আরও জানান, যারা এসএমএস পাচ্ছেন কেবল তারাই টিকা নিতে পারবেন। কিন্তু কেউই কথা শুনছেন না। শুধু রেজিস্ট্রেশন কার্ড নিয়েই টিকা নিতে কেন্দ্রে চলে আসছেন।
আগের তুলনায় এখন টিকা নিতে ভিড় বাড়ার কারণ জানতে চাইলে সিভিল সার্জন জানান, আগে টিকা নেয়ার বয়স ছিল ৪০ বছর। এখন বয়স ৩৫ বছর করা হয়েছে। এছাড়া মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি হয়েছে। যে কারণে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ টিকা নিতে কেন্দ্রে ভিড় করছেন।
এদিকে ভিড়ের কারণে পরিস্থিতি সামাল দিতে টিকা কেন্দ্রে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। এছাড়া যারা এসএমএস পাবেন কেবল তাদেরই মঙ্গলবার সকাল থেকে টিকা দেয়া হবে। কুষ্টিয়া শহরে এ সংক্রান্ত মাইকিং করার প্রস্তুতি নিয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯ জুন থেকে কুষ্টিয়ায় চীনা ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়া শুরু হয়। সেই টিকা সাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল না। স্বাস্থ্য বিভাগ, মেডিকেল শিক্ষার্থীহ ১০ ক্যাটাগরির মানুষ এ টিকা নিতে পেরেছেন। সাধারণের জন্য যারা অনেক আগে রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন তাদের ১০ জুলাই থেকে টিকা দেয়া হচ্ছে।
মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) থেকে জেলা সদর ও উপজেলায় একযোগে গণটিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হবে। জেলায় এবার ৩০ হাজার ৪০০ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে। সদরের জন্য ১০ হাজার ৪০০ ডোজ এবং বাকি পাঁচ উপজেলায় ২০ হাজার ডোজ টিকা দেয়া হবে।
আল-মামুন সাগর/এসজে/জিকেএস