যশোরে বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত
করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় যশোরে দুই সপ্তাহের বিধিনিষেধ কঠোরভাবে বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটি। শুক্রবার (২৩ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে এ বিধিনিষেধ শুরু হচ্ছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় যশোর জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভা জুমে অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খানের সভাপতিত্বে সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি লে. কর্নেল তানভীর, বিজিবির সিও লে. কর্নেল সেলিম রেজা, সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন, ২৫০ শয্যা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান, যশোরের পৌর মেয়র হায়দার গণী খান পলাশ, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক হুসাইন শওকত, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী সায়েমুজ্জামানসহ সবল ইউএনও, প্রেসক্লাব সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুনসহ অন্যান্য সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সভা শেষে জেলা প্রশাসক যশোর জেলায় সার্বিক কার্যাবলি ও চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করে গণবিজ্ঞপ্তি ঘোষণা করেন।
গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যশোরে কাঁচাবাজার, ফুল ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান দুপুর ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকবে।
এছাড়া সকল সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। সরকারি কর্মচারীগণ নিজ নিজ কর্মস্থলে অবস্থান করবেন এবং দাফতারিক কাজসমূহ ভার্চুয়ালি সম্পন্ন করবেন।
যশোর জেলার অভ্যন্তরীণ সকল রুটে এবং আন্তঃজেলা বাস, ট্রেন ও সকল প্রকার গণপরিবহণসহ সিএনজি, রিকশা, ভ্যান, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, থ্রি-হুইলার, হিউম্যান হলার চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে রোগী পরিবহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি পণ্য বহনকারী ট্রাক, লরি, কাভার্ড-ভ্যান, নৌযান, পণ্যবাহী রেল, ফেরি, কোরবানির পশুর চামড়া পরিবহন এবং জরুরি সেবাদানের ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা আওতা বহির্ভূত থাকবে।
এছাড়া সকল ধরনের দোকানপাট, শপিংমল, হোটেল, রেস্তোরাঁ, চায়ের দোকান, বিপণীবিতান বন্ধ থাকবে। ওষুধের দোকান সার্বক্ষণিক খোলা রাখা যাবে।
আইনশৃঙ্খলা ও জরুরি পরিষেবা, যেমন-কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য, দুগ্ধ পরিবহন/বিক্রয়, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্য সেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রদান কার্যক্রম, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলি, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি) গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাকসেবা, ব্যাংক, ভিসা সংক্রান্ত কার্যক্রম, পৌরসভা (পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, সড়কের বাতি ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি কার্যক্রম) সামাজিক নিরাপত্তা, কর্মসূচি, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসসমূহের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র প্রদর্শন সাপেক্ষে যাতায়াত করতে পারবেন।
সবাইকে অবশ্যই ঘরে অবস্থান করতে হবে। অতি জরুরি প্রয়োজন (ওষুধ ও নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি ক্রয়, চিকিৎসা সেবা, মৃতদেহ দাফন, সৎকার ইত্যাদি) ছাড়া কোনোভাবেই বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। জরুরি প্রয়োজনে চলাচলকারী সকলকে বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান করতে হবে। নির্দেশনা অমান্যকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সকল প্রকার শিল্প-কলকারখানা বন্ধ থাকবে। তবে খাদ্য ও খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ মিল কারখানা; কোরবানির পশুর চামড়া পরিবহন, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং ওষুধ, অক্সিজেন ও কোভিড-১৯ প্রতিরোধে ব্যবহারের জন্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য উৎপাদনকারী শিল্প বিধিনিষেধের আওতা বহির্ভূত থাকবে।
বন্দরসমূহ (বিমান, নৌ ও স্থল) এবং তৎসংশ্লিষ্ট অফিসসমূহ এ নিষেধাজ্ঞা আওতা বহির্ভূত থাকবে। সকল পর্যটনস্থল, পার্ক, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। জনসমাবেশ হয় এমন ধরনের সামাজিক (বিবাহ/বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক, হালখাতা, পার্টি ইত্যাদি), রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে ওয়াক্তের নামাজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদেমসহ সর্বোচ্চ ৫ জন ও জুম্মার নামাজ সর্বোচ্চ ২০ জন জামাতে আদায় করবেন। অন্যান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও এর বেশি জমায়েত হওয়া যাবে না।
সকল জরুরি নির্মাণ কাজ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলমান থাকবে এবং এ সংক্রান্ত পণ্য পরিবহন বিধি নিষেধের আওতাবহির্ভূত হবে। জেলার সকল পশুর হাট বন্ধ থাকবে।
মিলন রহমান/জেডএইচ/