অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে পায়ের মাংস, সুস্থ হতে চান রফিকুল

২৪ বছরের যুবক রফিকুল ইসলাম। চাকরি করে যে বয়সে মায়ের দুঃখ ঘোচানোর কথা সে বয়সে বোঝা হয়ে পড়ে আছেন বিছানায়। জন্মের পর পায়ের একটি ছোট্ট কালো দাগ থেকে বাম পায়ের হাড়ে অস্বাভাবিক মাংস বৃদ্ধির ফলে বিছানা থেকে নড়তেই কষ্ট হয় রফিকুলের।
চিকিৎসকরা বলছেন নিউরোফাইড্রোমায় (ফাইলেরিয়া) আক্রান্ত। উন্নত চিকিৎসা করতে পারলে হয়তো তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু বাবা হারা দিনমজুর মায়ের পক্ষে কী আর সে সাধ্য আছে? মা-ছেলের দু’মুঠো খাবার যেখানে জোটে না সেখানে চিকিৎসার কথা ভাবাও যেন পাপ!
রফিকুল ইসলাম রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার হাবাসপুর ইউনিয়নের চরঝিকড়ি গ্রামের মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে।
স্থানীয়রা জানান, জন্মের ৩ বছর পর মারা যায় রফিকুলের বাবা। নিজের বলতে মা ছাড়া আর কিছুই নেই তার। নানার বাড়িতে থেকে মায়ের দিন মজুরের টাকায় দুমুঠো খাবার জোটে। কখনো আবার না খেয়েই থাকতে হয় মা-ছেলেকে। জন্মের পর বাম পায়ে একটি কালো দাগ থেকে এ রোগের সৃষ্টি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হাড়ে বাড়তে থাকে রফিকুলের পায়ের মাংস। দরিদ্রতা ও অসুস্থতার মাঝেও রফিকুল এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন। ডিগ্রিতে ভর্তি হয়েও অসুস্থতার জন্য শেষ করতে পারেননি। কখনো হাসপাতাল কিংবা বাড়ির বিছানায় পড়ে থাকতে হয়।
তারা আরও জানান, ২০০৯ সালে ঢাকার মিড এইড হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে যান রফিকুল। অর্থের অভাবে ফিরে আসতে হয়েছে তাদের। ২০২০ সালে সাভারের ফাইলেরিয়া হাসপাতালে গেলেও চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাড়িতে চলে যান। ২০২১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালে ভর্তি হন রফিকুল। এরপর থেকে তিনি সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
রফিকুলের মা জানান, তার বাবা নাই। অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাই। দীর্ঘদিন ধরে ছেলেটা অসুস্থ। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছি না। ডাক্তাররা বলেছেন উন্নত চিকিৎসা করাতে পারলে রফিকুল সুস্থ হয়ে উঠবে। এ জন্য সমাজের বৃত্তবানসহ সরকারের সহযোগিতা কামনা করছি।
অসুস্থ রফিকুল বলেন, দীর্ঘদিন ফাইলেরিয়া রোগে আক্রান্ত। গরিব হওয়ায় চিকিৎসা করাতে পারছি না। অসুস্থ হবার আগে ঋণ নিয়ে একটি দোকান করতাম। কিন্তু এখন সেটিও বন্ধ হয়ে গেছে। আমার চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা কামনা করছি।
পাংশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তা তরুণ কুমার পাল বলেন, উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে অপারেশন করাতে পারলে এ রোগ ভালো হতে পারে। এ চিকিৎসার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। অনেকে সহযোগিতা করছেন। কিন্তু এটি অপ্রতুল। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলে রফিকুল হয়তো সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবে।
রুবেলুর রহমান/আরএইচ/জেআইএম