পাখিতে সারাবছরই মুখরিত থাকে পাত্রখোলা লেক

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি মৌলভীবাজার
প্রকাশিত: ১২:২৫ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২

চারদিকে সবুজ চা বাগান। মাঝখানে স্বচ্ছ জলের কৃত্রিম লেক। লেকের পশ্চিম পাশে রয়েছে জলজ উদ্ভিদ আর ঝোপঝাড়। এখানে পর্যাপ্ত খাবার ও নিরাপদ পরিবেশ থাকায় সারাবছর পাখিরা থাকে নিশ্চিন্তে। শিকারির হাত থেকে রক্ষায় পাহারাদার নিয়োগ দিয়েছে বাগান কর্তৃপক্ষ।

বাগান কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট পাহারাদাররা জানান, কমলগঞ্জ উপজেলার সীমান্তবর্তী ন্যাশনাল টি কোম্পানির মালিকানাধীন মাধবপুর চা বাগানের ১৮নং সেকশনের পাত্রখোলা লেকে। বিগত ৫ বছর ধরে এখানকার পরিবেশকে ভালোবেশে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তুলেছে দেশীয় পাখি। সকাল দুপুর বিকেলে পাখিদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকে লেকটি।

সবুজ শ্যামল চা বাগানের ভেতরে এক প্রাকৃতিক স্পট পাত্রখোলো কৃত্রিম লেক। চারদিকে চা বাগানবেষ্টিত এ লেকে ফুটে থাকা পদ্ম আর পাখির ওড়াউড়ি, জলকেলি-খুনসুটি যেন চেনা দৃশ্য হয়ে উঠেছে। লেকটি লোকচক্ষুর অন্তরালে হলেও প্রতিদিন ছুটে আসছেন প্রকৃতিপ্রেমীরা। লেকের সৌন্দর্য্য রক্ষায় বাগান কর্তৃপক্ষ নিয়েছে আলাদা পাহারার ব্যবস্থা। কৃত্রিম এ লেকটি ঘিরে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা দেখছেন প্রকৃতি প্রেমিরা।

পাত্রখোলা লেকে সারাবছরই থাকছে পরিযায়ী পাখি

পাত্রখোলা লেকে গিয়ে দেখা গেছে, চারদিকে উঁচু চা বাগান আর এক পাশে উঁচু টিলার বাঁকের স্বচ্ছ জলের লেকে ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে চলা পাখির ডানা ঝাপটানোর শব্দ। নানা বর্ণের ছোট-বড় পরিযায়ী পাখি। সব মিলিয়ে পাত্রখোলা লেকে অন্যরকম এক আবহ তৈরি হয়েছে। মাধবপুর সড়ক হয়ে ফ্যাক্টরির সামনের রাস্তা দিয়ে চা বাগানের ভেতরে যেতেই দেখা মেলে এমন দৃশ্যের। নিজেদের বাঁচার প্রয়োজনে এরা হাজার-হাজার মাইল পথ উড়ে বছরের এ সময়টাতে এখানে আসে। কোনো কোনো প্রজাতির পরিযায়ীরা আবার দুই-আড়াই মাস পর চলে যায়।

তবে সরালি ও বালি হাঁস জাতের পাখি স্থায়ীভাবে থেকে যায়। প্রজননের সময় এখানে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটায়। পাখিদের মধ্যে রয়েছে বালিহাঁস, সরালি, পানকৌড়ি, ধনেশ পাখি, সাপ পাখি, সাদা বক, লালচে বক, কালোলেজসহ নানা প্রজাতির পাখি।

কথা হয় বাগানের স্থায়ী বাসিন্দা কাজল চন্দ্রের সঙ্গে। তিনি বলেন, পাত্রখোলা লেকে সারাবছর পাখির কিচিরমিচির শব্দ আর ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ানো ও পানিতে ঝাঁপাঝাঁপি যেন অন্যরকম সৌন্দর্য। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ আর ঝাঁক বেঁধে উড়ে বেড়ানোর দৃশ্য দেখতে খুবই ভালো লাগে। সারাদিনই এখানেই পাখিগুলো থাকে।

পাত্রখোলা লেকে সারাবছরই থাকছে পরিযায়ী পাখি

পাত্রখোলা চা বাগানের ১৮নং সেকশন পাহারাদার বকুল চন্দ্র জাগো নিউজকে বলেন, অন্যান্য বছর অনেক পাখির সমাগম হয় এখানে। কিন্তু এবছর পাখির পরিমাণ কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে। আমি নিয়মিত পাহারা দেই। পাখি শিকারীদের এখানে আসতে দেওয়া হয় না। পাখিদের বিরক্ত না করতে দর্শনার্থীদের বারণ করি। পাখিদের নিরাপত্তা দেওয়ায় এখানে আবাসস্থল গড়ে উঠেছে। ১২ মাসই দুই জাতের পাখি বালি হাঁস ও সরালি দেখা যায়। তারা এই লেকে বাসা বাঁধে, ডিম পেড়ে বাচ্চা ফুটায়।

কথা হলে পাখি দেখতে আসা সজীব, মামুনুর রশিদ, সাইফুল ইসলাম, বকুল কৈরিসহ কয়েকজন দর্শনার্থী জাগো নিউজকে বলেন, এমন কাছ থেকে দেশের আর কোথাও পাখি দেখা যায় না। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাখিদের অবাধ বিচরণের ব্যবস্থা করা হলে দিন দিন আমাদের দেশে পাখির সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। পাখি যাতে অবাধে বিচরণ করতে পারে সেদিকে বাগান কর্তৃপক্ষ ও বনবিভাগের নজর রাখা উচিত।

ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) উপ-মহাব্যবস্থাপক শামছুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মূলত শীত মৌসুমে চা গাছ ছাঁটাইকালে লেক থেকে চা গাছে সেচ দেওয়ার উদ্দেশ্যেই পাত্রখোলা চা বাগানের ১৮ নম্বর সেকশনে লেকটি তৈরি করা হয়েছিল। লেকটি খনন করার পর থেকে শীত এলেই লেকে পাখির আগমন ঘটে। এখানকার সৌন্দর্য রক্ষা ও পাখি শিকার রোধে নেওয়া হয়েছে আলাদা পাহারার ব্যবস্থা। পাখিদের বিরক্ত না করতে দর্শনার্থীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

আব্দুল আজিজ/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।