জাগো নিউজে সংবাদ প্রকাশ, সেই ঝলকি পেলেন চার মাসের খাদ্য সহায়তা
ঈদের দিন (৩ মে) দুপুরে সরেজমিনে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের চরপার্বতীপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বসতঘরের ভেতরে একটি গামলায় করে বাসি পান্তা খাচ্ছেন বিধবা ঝলকি (৬৫)।
পাতে কোনো তরকারি নেই। হাতের মুষ্টিতে থাকা পান্তা পেটে না গেলেও ক্ষুধা নিবারণে অনেকটা জোর করে মুখে ঠেলে দিচ্ছেন তিনি।
ঘরে একটি চৌকি। চৌকিতে নেই বিছানাপত্র। ঘরের জিনিসপত্র চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ঘরের ভেতরটা অনেকটাই বসবাসের অযোগ্য। ওই চিত্র তুলে ধরে ‘ঈদের দিন পান্তা খেলেন বিধবা ঝলকি, রাতে কী খাবেন জানেন না’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে জাগো নিউজ।
প্রতিবেদনটি ‘ইউনিভার্সাল এমিটি ফাউন্ডেশন’ নামের সংস্থার নজরে আসে। সংস্থাটি বিধবা ঝলকির দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তাকে চার মাসের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
সংস্থাটির প্রতিষ্ঠাতা মেহেদী হাসানের নির্দেশে ‘ইউনিভার্সাল এমিটি ফাউন্ডেশন’ কুড়িগ্রাম জেলা শাখার প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মেহেদী হাসান দুর্জয় ও সদস্য কাউসার মাহামুদ বৃহস্পতিবার (১২ মে) বিকেলে ঝলকির বাড়িতে যান। তারা ওই বৃদ্ধার হাতে ৭০ কেজি চাল, পাঁচ কেজি আলু, তিন কেজি মসুরের ডাল, তিন কেজি পেঁয়াজ, দুই লিটার সয়াবিন তেল, এক কেজি সেমাই, এক কেজি চিনি, এক কেজি লবণ, দুই প্যাকেট বিস্কুট, এক কেজি রসুন, মরিচ ও হলুদসহ খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন।
খাদ্যসামগ্রী পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বৃদ্ধা ঝলকি। তিনি বলেন, ‘ঈদের দিন পনতা খাইছিলোং। তাহে বাবাজি (সাংবাদিক) আসিয়্যা দেহিয়ে নাম, ছবি, ভিডিও করি নিয়্যা গেইছে। এই জন্যে আইজ সংস্থা থাকি কিছু মালামাল বাড়িত আসি দেইল। ইয়াতে খুব সন্তোষ্ট। এই মালামাল মোর চাইর মাস যাইবে। নামাজ পড়িয়্যা আল্লাহর দরবারে বাবাজিদের জন্যে অনেক দোয়া করিম।’
প্রতিবেশী গৃহবধূ শিউলী বলেন, ‘ঈদের দিন সাংবাদিক ভাই আইচ্ছে। আসিয়্যা ঝলকির বুর সমস্যা দেহিয়্যা লেহি নিয়্যা গেইছে। এই জন্যে আইজ সংস্থা থাকি জিনিসপাতি পাইল। আল্লাহ সাংবাদিক ভাইক ভালে ভালে থুক।’
ঝলকি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের পার্বতীপুর গ্রামের মৃত নান্টু শেখের স্ত্রী।
ইউনিভার্সাল এমিটি ফাউন্ডেশনের কুড়িগ্রাম জেলা শাখার প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর মেহেদী হাসান দুর্জয় বলেন, ‘অসহায় বিধবা ঝলকিকে নিয়ে করা জাগো নিউজের প্রতিবেদনটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। পরে বিষয়টি তদন্তের পর সহযোগিতা করার নির্দেশ দেন আমাদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মেহেদী হাসান স্যার। বিষয়টি যাচাইয়ের পর আজ ঝলকি নামের ওই বৃদ্ধাকে চাল, ডাল, তেল, আলু, লবণ, মরিচ, পেঁয়াজসহ অন্যান্য পণ্য ও খাদ্যসামগ্রী সহযোগিতা হিসেবে প্রদান করা হয়েছে।’
সংস্থা সূত্র জানায়, ইউনিভার্সাল এমিটি ফাউন্ডেশন একটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। সংস্থাটি ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজধানীর মিরপুরে এর প্রধান অফিস রয়েছে। প্রায় ৪৫টি জেলায় কার্যক্রম রয়েছে। বর্তমানে সংগঠনটির ২৫টি প্রজেক্ট চলমান।
উল্লেখযোগ্য প্রজেক্টগুলো হলো- সেফ শেল্ডারের মাধ্যমে ঘর দেওয়া। এইড ফর এডুকেশনের মাধ্যমে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাসিক শিক্ষা ভাতা এবং শিক্ষা উপকরণ দেওয়া। লাইফ লাইন প্রজেক্টের মাধ্যমে গভীর নলকূপ দেওয়া। এইড ফর লাইফের মাধ্যমে হুইল চেয়ার দেওয়া। ইনকাম এইডের মাধ্যমে রিকশা, ভ্যান, সেলাই মেশিন, গরু-ছাগল ও দোকান করে দেওয়া।
এছাড়া শীতবস্ত্র, ঈদ উপহারে শাড়ি, লুঙ্গি, সেমাই, চিনি দেওয়া, ফুড এইড প্রজেক্টের মাধ্যমে দরিদ্র অসহায় পরিবারে এক মাসের বাজার দেওয়া ছাড়াও আরও বেশ কয়েকটি প্রজেক্ট চলমান।
মাসুদ রানা/এসআর/জেআইএম