মঙ্গলমাঝির ঘাটে সুনসান নীরবতা

শরীয়তপুরের মানুষের পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে ঢাকায় যাওয়ার অন্যতম মাধ্যম ছিল মঙ্গলমাঝির ঘাট। ফেরির অপেক্ষায় দীর্ঘ লাইন থাকতো বিভিন্ন যানবাহনের। যাত্রীদের পদচারণায় মুখোরিত থাকতো ঘাট এলাকা। কিন্তু হঠাৎ পাল্টে গেছে ঘাটর সেই চিরচেনা চিত্র। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে ঢাকামুখী যানবাহনকে এখন সিরিয়ালে থাকতে হচ্ছে না। যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হচ্ছে না ফেরি, লঞ্চ, স্পিডবোট কিংবা ট্রলারের জন্য। এ যেন সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে।
এদিকে পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় যাত্রী ও চালকরা স্বস্তি প্রকাশ করলেও বিপাকে পড়েছেন ঘাট এলাকার ব্যবসায়ী ও হকাররা। ফেরি কিংবা লঞ্চ চলাচল না করায় কমে গেছে আয়, বন্ধ হয়ে গেছে অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।
আগে এ ঘাট ব্যবহার করে পদ্মা নদী পারাপার হতো কয়েক হাজার ছোট-বড় যানবাহন ও হাজারো যাত্রী। সে কারণে ঘাটকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে হোটেলসহ বিভিন্ন ব্যবসা। দুই থেকে তিন হাজার মানুষ জীবিকা নির্বাহ করছেন।
মঙ্গলমাঝির ঘাটের হকার আল আমিন, কালু হাওলাদারসহ অনেকে বলেন, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই লঞ্চ ও ফেরিঘাট এলাকায় ঝালমুড়ি, আইসক্রিম, পেঁয়াজু, পেয়ারা, শরবতসহ হরেকরকম মুখরোচক খাবার বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কিন্তু ঘাটের যানবাহন চলাচল বন্ধ হওয়ায় আমাদের বিক্রিও কমে গেছে। বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না করা হলে আমাদের সংসার চালানো দায় হয়ে পড়বে।’
ভ্যানচালক নাজমুল কাজী, রিকশাচালক রাজিব ঘরামী, সিএনজি চালক সোহেল মাঝি, সালাউদ্দিন ছৈয়ালসহ অনেকে বলেন, ‘যানবাহন ও যাত্রীর সমাগম যত বেশি হয় আমাদের আয়ও তত বেশি হয়। বর্তমানে ঘাটে যানবাহন নেই আমারা বিপাকে পড়েছি।’
হোটেল মালিক মোহাম্মদ আলী, মো. সোহেল হোসেন বলেন, ‘ফেরি ও লঞ্চের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী ও যানবাহনের চালকরা হোটেল থেকে ভাত, রুটি, পরোটাসহ অন্যান্য জিনিস কিনে খেতেন। কিন্তু ঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে। এতে আমাদের ব্যবসাও বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।’
মুদি দোকানি আমিরুল ইসলাম, মিষ্টির দোকানি নিজাম উদ্দিন, সাগর হোসেন, ফল দোকানি সুমন ফকির বলেন, ‘ঘাট বন্ধ হওয়ায় বেচা-কেনা নেই। এখন যে অবস্থা তাতে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে পড়ছে। বিদ্যুৎ বিলসহ অন্য খরচ মিটিয়ে কিছুই থাকছে না।’
যানবাহনের চালক দেলোয়ার হোসেন, আজগরসহ অনেকেই বলেন, ‘পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় আমরা সরাসরি গাড়ি নিয়ে ঢাকা যাই। এতে চালক ও যাত্রীরা খুবই খুশি। আগে শরীয়তপুর সদর থেকে মঙ্গলমাঝির ঘাটে যাত্রী নিয়ে যেতাম। সেখানে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতাম। এখন ঘাটটি বন্ধ হওয়ায় আর যেতে হয় না, খাবারও খাওয়া হয় না।’
মঙ্গলমাঝির ঘাটের (লঞ্চ) ইজারাদার মোকলেস মাদবর বলেন, ‘প্রতিদিন এ ঘাট দিয়ে লঞ্চে হাজারো মানুষ পার হতো। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় যাত্রীরা সরাসরি ঢাকা যাচ্ছে। তাই ঘাটটি বন্ধ। ঘাটের লঞ্চ, স্পিডবোট চালক ও কর্মচারীরা বেকার হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি আমাদের কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল, তাও বন্ধ হয়ে গেছে। তাই আমাদের ইনকামও বন্ধ, তাতে দুঃখ নেই। পদ্মা সেতু পেয়ে আমরা অনেক খুশি। তবে সরকার যেন আমাদের বিষয়টি দেখেন।’
মঙ্গলমাঝির ঘাটের ইজারাদার নেছার উদ্দিন মাদবর বলেন, ‘এখন তো আর নৌপথে যাত্রী ঢাকা যায় না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় যাত্রীরা সরাসরি ঢাকা যাচ্ছে। তাই ঘাটটি বন্ধ। ঘাটের ফেরি, লঞ্চ, স্পিডবোট চালক ও কর্মচারীরা বেকার হয়ে পড়েছে। হকার ও দোকানদারদের বেচাবিক্রি বন্ধ হয়ে পড়েছে। আয় না থাকায় অনেকে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছেন। তাতে আমাদের দুঃখ নেই। পদ্মা সেতু পেয়ে আমরা অনেক আনন্দিত। সরকার ঘাটের মানুষের জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়।’
মো. ছগির হোসেন/এসজে/জিকেএস