ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের লাঠিপেটা

মহরম আলীসহ ১৯ পুলিশের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বরিশাল
প্রকাশিত: ০৩:১০ এএম, ২৩ আগস্ট ২০২২
ফাইল ছবি

বরগুনায় শোক দিবসের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের দুপক্ষের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে লাঠিপেটা করে পুলিশ। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীসহ ১৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।

সোমবার (২২ আগস্ট) রাতে বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) এস এম আক্তারুজ্জামান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটি রোববার তার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে ঘটনার দিন সেখানে কর্তব্যপালনরত ১৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে অপেশাদার আচরণ, অসদাচরণ, অতিরিক্ত বল প্রয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি সেই ১৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশের আলোকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সদর দপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। এছাড়া কনস্টেবলদের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে জেলা পুলিশকে বলা হয়েছে।

বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা পুলিশ সদস্যরা হলেন, ঘটনার পর বরগুনা থেকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে বদলি হওয়া অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলী, পরিদর্শক মোকলেছুর রহমান, এসআই জাহিদুল কবির, আফজাল হোসেন, মো. সাব্বির, ইলিয়াস আহমেদ, মো. মনিরুজ্জামান, শিহাব উল্লাহ, এএসআই আবুল বাশার, ইসমাইল হোসেন, সাগর দে, শংকর চন্দ্রশীল, নায়েক মোহাম্মদ মুসা, কনস্টেবল রাফিউল ইসলাম, মোহাম্মদ সানি, রুহুল আমিন, আবুল বাশার, ইমরান হোসেন এবং ইলিয়াস হোসেন।

সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ আট বছর পর গত ২৪ জুলাই রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরগুনা জেলা ছাত্রলীগের ৩৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা দেন। এর পর থেকেই সদ্য ঘোষিত এ কমিটি প্রত্যাখ্যান এবং তাদের প্রতিহত করার ঘোষণা দেয় পদবঞ্চিত একটি পক্ষ। এ নিয়ে কয়েক দফা সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বরগুনায় জেলা ছাত্রলীগের শোক মিছিলে আরেক পক্ষ ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে হামলা চালায়। জেলা শিল্পকলা একাডেমির সামনে এ ঘটনার সময় ইটপাটকেলে পুলিশের গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ লাঠিপেটা করে দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর সামনেই পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনা ঘটে। এ সময় সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও কর্তব্যরত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলীর মধ্যে উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়। রাতে সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু একটি শোকসভায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, পুলিশের উদ্দেশ্যই ছিল মারপিট করা। এ সময় তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলীকে প্রত্যাহার ও তার বিচারের দাবি জানান।

অন্যদিকে এ ঘটনা তদন্তে ১৫ আগস্ট রাতে বরিশাল রেঞ্জ পুলিশের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির প্রধান করা হয় বরিশাল রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. ফারুক উল হককে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন, বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ের পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান ও বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুদীপ্ত সরকার। পরে নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহররম আলীকে তার কর্মস্থল থেকে সরিয়ে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। একই সঙ্গে ঘটনার দিন সেখানে কর্তব্যপালনরত বরগুনা সদর থানা ও গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) আরও পাঁচ সদস্যকেও অন্য জেলায় বদলি করা হয়। তদন্ত কমিটি রোববার ডিআইজি এস এম আক্তারুজ্জামানের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলীসহ ১৯ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

সাইফ আমীন/কেএসআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।