জ্বালানি তেলের প্রভাব খড়ে, বিপাকে গৃহস্থ-গো খামারিরা

কুড়িগ্রামে খড়ের দাম বৃদ্ধিতে গবাদিপশু পালন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন গৃহস্থ ও খামারিরা। দফায় দফায় বন্যায় এখানকার কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অর্থনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় চলছে আমন ধানের চারা লাগানোর মৌসুম। ফলে দেখা দিয়েছে মাঠ ও চারণভূমির অপ্রতুলতা। এসব কারণে বেড়েছে গো-খাদ্যের সংকট।
বাজারে খড়, ভুসি ও ফিডের দামেও আগুন। সবমিলিয়ে গবাদিপশুর খাবার জোগাতে হিমশিম খাচ্ছেন খামারিরা। অনেকেই লোকসান হওয়ার ভয়ে সস্তা দামে গবাদিপশু বিক্রি করে দিয়েছেন।
কুড়িগ্রাম প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলায় ছোট-বড় মিলে ৭০টি গরুর খামার রয়েছে। বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে বাড়ি বাড়ি ছাগল, গরু, মহিষ পালন করা হচ্ছে। জেলায় ৯ লাখের বেশি গবাদিপশু রয়েছে।
বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের মাস্টার পাড়া গ্রামের গৃহস্থ শ্রী রতন চন্দ্র জাগো নিউজকে বলেন, ‘সব জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। বন্যার পর আমন ধান লাগানোয় মাঠে ঘাস নেই। বোরো ধানের জমানো যা খড় ছিল শেষ। এখন খড় কিনে খাওয়াতে হচ্ছে। বাজারে ১০০ আঁটি (প্রতি আঁটি ৭ টাকা) খড়ের দাম ৭০০ টাকা। বর্তমানে গরু পালনে লাভ দেখছি না। তাই গতকাল হাটে একটি গরু বিক্রি করে দিয়েছি।’
যাত্রাপুর ইউনিয়নের খামারি মজিবর রহমান বলেন, ‘আমার ফ্রিজিয়ান জাতের দুটি গাভি আছে। প্রতিদিন গাভি দুটির পেছনে খড়-ভুসি-ফিড বাবদ খরচ হয় ৩০০ টাকা। এছাড়া চিকিৎসা খরচতো আছেই। এক মাস আগে যে ১০০ খড়ের আঁটি ছিল ৬০০ টাকা, এখন তার দাম বেড়ে ৭০০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের মতো খামারিরা লাভের মুখ দেখবে না।’
যাত্রাপুর হাটে খড়ের ব্যবসায়ী আলতাফুর রহমান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা বাইরের জেলা থেকে খড় কিনে এনে এখানে বিক্রি করি। বর্তমানে জ্বালানি তেলের দামের প্রভাব পড়েছে খড়েও। পরিবহন খরচ বেশি পড়ছে। আগে এক ট্রাক খড় আনতে সবমিলে খরচ হতো ১২-১৪ হাজার টাকা। এখন তা বেড়ে ১৬ হাজার টাকা হয়েছে। দেখা যায় এক ট্রাক খড় বিক্রি করে লাভ হয় মাত্র ২-৩ হাজার টাকা।’
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিচালক শামসুদ্দিন মিঞা বলেন, ‘বন্যার কারণে আমন মৌসুম বিলম্বিত হয়েছে। ফলে কৃষকদের জমা খড়ে টান পড়েছে। এতে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা বন্যা ও বন্যা-পরবর্তী সময়ে কৃষকদের মাঝে গো-খাদ্য সরবরাহ করেছি। বাজার স্থিতিশীল হলে গৃহস্থ ও খামারিদের দুশ্চিন্তা কেটে যাবে।’
এসআর/এমএস