ভুয়া মামলায় আসামি দেখিয়ে ১০ লাখ টাকা আত্মসাৎ আইনজীবীর

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লক্ষ্মীপুর
প্রকাশিত: ০৭:৩৪ পিএম, ০৪ অক্টোবর ২০২২

লক্ষ্মীপুরে ভুয়া মামলার আসামি দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা আত্মসাতের মামলায় মুনছুর আহম্মদ দুলাল নামের একজন আইনজীবীকে দেড় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ১০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। পরে আপিল আবেদন ও দুই শর্তে আইনজীবীকে প্রবেশনে মুক্তি দিয়েছেন আদালত।

একই মামলায় অপর দণ্ডপ্রাপ্ত গ্রামপুলিশ (চৌকিদার) আনসার উল্যাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) দুপুরে লক্ষ্মীপুর সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক নুশরাত জামান এ রায় দেন।

আদালতের পেশকার মো. সাইফুদ্দিন রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, এটি আইনজীবীর প্রথম অপরাধ বিবেচনায় রেখে প্রবেশনে মুক্তি দিয়েছেন আদালত। কারাদণ্ডাদেশ ও জরিমানা পরবর্তী দুই বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। প্রবেশন হলো, তিনি দুই বছর গরিব ও অসহায়দের পক্ষে মামলায় লড়বেন। পাশাপাশি কোনো আইনজীবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে ভুক্তভোগীর হয়ে তাকে মামলায় লড়বে হবে।

দুলাল লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের আইনজীবী ও রায়পুর উপজেলার বামনী ইউনিয়নের কাঞ্চনপুর গ্রামের আলী আহম্মদ আখনের ছেলে। অপর দণ্ডপ্রাপ্ত আনসার উল্যা একই ইউনিয়নের চৌকিদার ও শিবপুর গ্রামের মৃত নুর মোহাম্মদ ঢালীর ছেলে।

আদালত সূত্র জানায়, ভুক্তভোগী নুরনবীর অভিযোগের ভিত্তিতে লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানাকে এফআইআর দাখিলের জন্য নির্দেশ দেন আদালত। পরে ২০২০ সালের ১৭ নভেম্বর সদর থানায় আইনজীবী মনছুর আহমেদ দুলাল ও চৌকিদার আনসার উল্যার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ২০২১ সালের ৪ জানুয়ারি সদর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোসলেহ উদ্দিন তদন্ত শেষে দুলাল ও আনসার উল্যার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন। শুনানি ও সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মঙ্গলবার আদালত রায় ঘোষণা করেন।

বাদী নুর নবী বলেন, আদালতে মামলা চলাকালীন আমার পক্ষে কোনো আইনজীবী কাজ করেননি। আমি নিজেই মামলাটি পরিচালনা করেছি।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চাইলে দণ্ডপ্রাপ্ত আইনজীবী মনছুর আহমেদ দুলাল সাংবাদিকদের বলেন, আদালতে গিয়ে এজাহার দেখেন। তাহলে বিস্তারিত জানতে পারবেন।

মামলা সূত্রে জানা যায়, নুর নবী রায়পুর উপজেলার বামনী গ্রামের বাসিন্দা ও দুবাই প্রবাসী ছিলেন। তিনি ২০১৪ সালে দেশে আসেন। একই উপজেলার শিবপুর গ্রামের নুর মোহাম্মদ ঢালীর ছেলে আনসার উল্যার সঙ্গে নুর নবীর পারিবারিক বিরোধ ছিল। পরে ওই বিরোধ মীমাংসাও হয়। অন্যদিকে নুর নবী ও তার স্ত্রীর সঙ্গে মনোমালিন্য চলছিল। এটিকে পুঁজি করে মীমাংসার কথা বলে আনসার উল্যা তাকে আইনজীবী দুলালের কার্যালয়ে নিয়ে যায়। সেখানে দুলাল ও আনসার উল্যা ষড়যন্ত্র লিপ্ত হয়।

একপর্যায়ে আইনজীবী জানান, নুর নবী ও তার ছেলের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে তেজগাঁও থানায় একটি মামলা রয়েছে। এটি শুনে তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ থেকে রেহাই পেতে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর দুলালকে সাড়ে তিন লাখ টাকা দেন নুর নবী। পরে ২০১৮ সালের ৪ জানুয়ারি ওই মামলার একটি অব্যাহতিপত্র নুর নবীর বাড়িতে আনসার উল্যা পৌঁছে দেন।

এর কিছুদিন পরই আইনজীবী দুলাল ভুক্তভোগীকে জানান, বরিশাল আদালত থেকে তার বিরুদ্ধে ডাকাতি ও হত্যা মামলা লক্ষ্মীপুর আদালতে হস্তান্তর করা হয়েছে। এজন্য পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন আইনজীবী। এটি নিষ্পত্তির জন্য ২০১৮ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আইনজীবীকে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়। কিছুদিন পর ফের আইনজীবী ফোন দিয়ে নুর নবীকে জানান, তার বিরুদ্ধে চান্দিনা থানা থেকে আরও একটি মামলা এসেছে।

এ মামলার নিষ্পত্তির জন্য ২০১৮ সালের ৪ মার্চ ফের তিন লাখ ২৫ হাজার টাকা নেন আইনজীবী। পরবর্তী সময়ে একটি জমি বন্টনের মামলার রায় করে দেবেন বলে আইনজীবী ৫০ হাজার টাকা নেন। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো মামলার নকল, রায় কিংবা জামিনের কপি দেখাতে পারেননি আইনজীবী। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা দুলাল ও আনসার উল্যা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানিয়েছেন নুর নবী।

কাজল কায়েস/এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।