জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুট
সার্বক্ষণিক চলবে ফেরি, সহজ হবে ১০ জেলার যাতায়াত
দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের ১০ জেলার মানুষের যোগাযোগের অন্যতম সহজ মাধ্যম রাজবাড়ী ধাওয়াপাড়ার জৌকুড়া থেকে পাবনার নাজিরগঞ্জ নৌরুট। পদ্মার নাব্য সংকট ও তীব্র স্রোতে বেশিরভাগ সময় এ রুটে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে পরিচালিত ছোট ইউটিলিটি ফেরি চলাচল বন্ধ থাকে। তাই নদী পারাপারে ভোগান্তিতে পড়তে হয় যানবাহন চালক ও যাত্রীদের।
অতিরিক্ত খরচ ও সময় ব্যয় করে কুষ্টিয়ার লালন শাহ সেতু দিয়ে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হয় গন্তব্যে। তবে এ রুটে বর্ষা ও শুষ্ক উভয় মৌসুমে ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে যাত্রী পারাপার হলেও ভোগান্তিতে পড়েন দূর-দূরান্ত থেকে আসা যানবাহনগুলো। এছাড়া ঘাটে নাই যাত্রীদের বিশ্রামাগার, শৌচাগারসহ অন্য কোনো সুবিধা।
উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ সহজ করতে এবার ওই নৌরুটে ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) ও বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। একই সঙ্গে উভয় প্রান্তে ঘাট বাড়ানোর মাধ্যমে সার্বক্ষণিক বড় ফেরি চলাচলের পরিকল্পনা নিয়েছে নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উত্তরাঞ্চলের জেলা রাজশাহী, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ও দক্ষিণাঞ্চলের জেলা রাজবাড়ী, ফরিদপুর, ঝিনাইদহ, শরিয়তপুরের মানুষের যোগাযোগের সহজ মাধ্যম জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুট। ১৯৯৮ সাল থেকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে এ নৌরুটে একটি ফেরিঘাটের মাধ্যমে তিনটি ছোট ইউটিলিটি ফেরি চলাচল শুরু করে। তবে এক বছর ধরে বিকল হয়ে পড়ে আছে দুটি ফেরি। ফলে একটি ফেরি দিয়েই পারাপার হচ্ছে যানবাহন ও যাত্রী। দিনে মাত্র কয়েকবার আসা-যাওয়া করে ফেরি।
অন্যদিকে যাত্রী পারাপারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় ঘণ্টায় ছেড়ে যায় ইঞ্জিন চালিত নৌকা। ফেরি না থাকায় যাত্রীরা ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল, ভ্যানসহ মালামাল বহন করছে নৌকায়।
ঘাট এলাকায় যাত্রী ছাউনি ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীদের খোলা আকাশের নিচে তীব্র রোদে থাকতে হয়। শৌচাগার না থাকায় পড়তে হয় বিড়ম্বনায়।
যাত্রী তহিদুল আলম, আবুল কালাম আজাদ, সাঈদুল ইসলাম, নাহিদ খানসহ কয়েকজন বলেন, এখানে মাত্র একটি ছোট ফেরি চলাচল করে। সেটিও আবার চলে শুধু দিনের বেলায়। ফলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নদী পারের অপেক্ষায় থাকতে হয়। ঘাটে বসবার এবং টয়লেটের কোনো ব্যবস্থা নাই। ফলে খোলা আকাশের নিচে থেকে ভোগান্তি পোহাতে হয়।
তারা আরও বলেন, একাধিক ফেরি না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে পারাপার হতে হয়। এ সময় ট্রলারেই মালামাল বহনের পাশাপাশি মোটরসাইকেল বহন করে অনেকে। মোটরসাইকেল ওঠা-নামার সময় অনেক কষ্ট করতে হয়। এছাড়া ঝড় বৃষ্টিতে সমস্যা হয়। এখানে সার্বক্ষণিক বড় ফেরি চলাচলের ব্যবস্থা হলে দুর্ভোগ কমবে। রাজবাড়ীর সঙ্গে উত্তরাঞ্চলের যোগাযোগ সহজ হবে।
গাড়িচালক আজিজুল, রঞ্জু মন্ডলসহ কয়েকজন বলেন, মাঝে মাঝে জৌকুড়া ঘাট দিয়ে পাবনাসহ বিভিন্নস্থানে আসা-যাওয়া করি। কিন্তু ফেরি কম থাকায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হয়। এতে খুব কষ্ট হয়। আবার ফেরি না পেলে ২০০ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। এতে খরচ অনেক বেড়ে যায়। এ নৌরুটে বড় ফেরি চালু করলে সুবিধা হবে। অল্প সময়ে স্বল্প খরচে যাতায়াত করতে পারবো।
স্থানীয় যদু খা, সোহেল বলেন, ‘শুনছি জৌকুড়া ও নাজিরগঞ্জে নতুন ঘাট স্থাপনের পাশাপাশি বড় ফেরি চলাচল করবে। নিয়মিত সব সময় ফেরি চললে যানবাহন ও যাত্রীরা সুবিধা পাবে। ঘাট এলাকার ব্যবসায়ীদের জন্যও ভালো হবে।’
রাজবাড়ী-১ আসনের সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী জাগো নিউজকে বলেন, সাবেক নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খানের সঙ্গে দৌলতদিয়ায় একটি মিটিং করা হয়েছিলে। এতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল বিআইডব্লিউটিসির মাধ্যমে এখানে বড় ফেরি চলাচল করবে। পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর অনেক বড় ফেরি দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে বসে আছে। এখন বিআইডব্লিউটিএ ও টিসি উদ্যোগ নিয়েছে জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌরুটে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে বড় ফেরি চলাচলের। এর মাধ্যমে অল্প সময়ে রাজবাড়ী থেকে পাবনা যাওয়া-আসা করা যাবে।
বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক মো. আশিকুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের যানবাহনগুলো লালন শাহ সেতু হয়ে উত্তরাঞ্চলে প্রবেশ করে। সড়ক পরিবহনের অধীনে এখানে একটি ঘাটের মাধ্যমে একটি ইউটিলিটি ফেরি ছিল। যেটা পর্যাপ্ত না। দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এখানে নদী বন্দর ঘোষণা করে বিআইডব্লিউটিএ ও বিআইডব্লিটিসির যৌথ ব্যবস্থাপনায় বড় রো রো ফেরি সার্ভিস চালু করার। সেই কাজটি অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছি। ড্রেজিং চলছে। খুব দ্রুত নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন।
রুবেলুর রহমান/এসজে/এমএস