সুযোগ-সুবিধা বাড়ালে সুনামগঞ্জ হয়ে উঠবে পর্যটনখাতে নতুন সম্ভাবনা

লিপসন আহমেদ লিপসন আহমেদ , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:১৭ পিএম, ০১ ডিসেম্বর ২০২২

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা সুনামগঞ্জ। সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা যাদুকাটা, চলতি, বোলাই, চেলাসহ বেশ কয়েকটি নদীর সৃষ্টি হয়েছে। আর এতেই সুনামগঞ্জের সৌন্দর্য অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

তবে শুধু যে নদ-নদী কিংবা হাওর-বাওর তা নয়, সুনামগঞ্জে টাঙ্গুয়ার হাওর, নিলাদ্রী (শহীদ সিরাজ লেক) লেক, পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শিমুল বাগান, বারেকের টিলা, লাকমাছড়া, বাঁশতলা কিংবা বিস্তৃতজোড়া মাঠ, সবুজের সমারোহ যে কারও কাড়তে পারে। একবার দেখলে বার বার দেখতে মন চাইবে। কিন্তু পর্যটকদের কাছে নিলাদ্রী লেক, যাদুকাটা নদী, বারেকের টিলা কিংবা শিমুল বাগানের অধিক পরিচিতি থাকলেও প্রচারের অভাবে জেলার অন্য দৃষ্টিনন্দন এখনো অনেকের কাছে অজানা। এছাড়া যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ থাকায় এখনো এসব এলাকা দুর্গম হয়ে আছে তাই কারও নজরে আসে না।

jagonews24

এদিকে, যে স্থানগুলোতে পর্যটক বেশি আসেন সে এলাকার রাস্তাঘাট রেস্টহাউজ কিংবা স্যানিটেশন ব্যবস্থা ভালো না থাকায় পর্যটকদের অসুবিধায় পড়তে হয়। অথচ সুযোগ-সুবিধা উন্নত করা গেলে সুনামগঞ্জও হয়ে উঠবে দেশের পর্যটনখাতে নতুন সম্ভাবনা। আর এতে করে অনেকের নতুন কর্মসংস্থানেরও সৃষ্টি হবে।

বর্ষায় হাওরের রাশি রাশি পানি আর পাহাড়ের ওপর মেঘর সখ্যতা, হিজল-করছ গাছের সারির সঙ্গে পাখ-পাকালির কিচির-মিচির শব্দ সুনামগঞ্জকে করেছে প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। জেলার তাহিরপুর উপজেলার রামসার সাইট টাঙ্গুয়ার হাওর, নিলাদ্রী ডিসি লেক, ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাহাড় বেয়ে নেমে আসা যাদুকাটা নদী ক্রমেই আকর্ষণ বাড়াচ্ছে।

jagonews24


আর তাই হাওরকন্যা খ্যাত সুনামগঞ্জের সৌন্দর্য দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে দেশ-বিদেশের ভ্রমণপিপাসুদের কাছে। ছুটির দিন ছাড়াও প্রায় প্রতিদিনই পর্যটকেরা সুনামগঞ্জের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন।

এদিকে, টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসলে সবচেয়ে বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় স্যানিটেশন ও আবাসন ব্যবস্থাপনার। আর নৌকায় রাতে থাকতে গেলেও নিরাপত্তা না থাকায় রাতযাপন করাটা কঠিন হয়ে যায়। তাই এসব সমস্যা সমাধান করা গেলে সুনামগঞ্জের পর্যটনে অনেক উন্নতি করবে বলে জানান তারা।

jagonews24

টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা নীলা চক্রবতী জাগো নিউজকে বলেন, হাওরের সৌন্দর্যের প্রেমে পড়ে গেছি। এখানে হয়ত তেমন সুযোগ-সুবিধা নেই। তবে যত কষ্টই হোক নৈসর্গিক সৌন্দর্য সবকিছু ছাড়িয়ে যায়। তাই ঘুরতে এসে মন ভরে গেলো।

টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা আজহারুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সুনামগঞ্জে অনেক জায়গা রয়েছে যেগুলোতে গেলে মন ভরে যায়। তবে অনেক পর্যটনস্পটে যাওয়ার যোগাযোগব্যবস্থা ভালো না। আমি মনে করি, এদিকে সরকারের আরও নজর দেওয়া উচিত।

jagonews24

টাঙ্গুয়ার হাওরে ঘুরতে আসা আয়েশা চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, সুনামগঞ্জের প্রকৃতির সৌন্দর্যের প্রেমে আমি মগ্ন হয়ে গেছি।

দোয়ারা বাজারের বাঁশতলা পর্যটনকেন্দ্র ঘুরতে আসা সুহেল আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, বাঁশতলা অনেক সুন্দর জায়গা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না থাকায় পর্যটকরা আসে না।

jagonews24

টাঙ্গুয়ার পাড়ের বাসিন্দা মখলেছুর রহমান বলেন, রাতে অবৈধ জাল দিয়ে মাছ ধরা হয়। সেইসঙ্গে পাখি শিকার করা হয়। এগুলো বন্ধ না করলে হাওরটি ধ্বংস হয়ে যাবে।

টাঙ্গুয়ার পাড়ের আরেক বাসিন্দা সাজিদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বড় বড় হাউসবোট অবাধে হাওরে চলাচল করায় টাঙ্গুয়ার হাওরের মাছের বংশ নির্বংশ হচ্ছে। এর ফলে হাওরটিতে এখন তেমন কোনো মাছ নেই।

jagonews24

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, হাওরকন্যা সুনামগঞ্জ পর্যটন শিল্পের জন্য খুবই সম্ভাবনার জায়গা। আমরা টাঙ্গুয়ার হাওরকে রক্ষায় একটা সীমানা নির্ধারণ করছি। পুরো হাওরে হাউসবোটসহ কোনো নৌকা চলাচল করতে পারবে না।

এমআরআর/জিকেএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।