উন্নয়নকাজ ও ইমারত নির্মাণে বাড়ছে ব্লকের চাহিদা
![উন্নয়নকাজ ও ইমারত নির্মাণে বাড়ছে ব্লকের চাহিদা](https://cdn.jagonews24.com/media/imgAllNew/BG/2019November/pic-1-20221208163219.jpg)
#মিরসরাইয়ে গ্রিনব্লক ফ্যাক্টরির উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা বেশি
#হলো ও পেভিং কংক্রিট ব্লক নৌপথে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন জেলায়
#ছোট উদ্যোক্তারা এ ধরনের ব্যবসায় বিনিয়োগ করলে সফল হবেন
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে উন্নয়নকাজ ও ইমারত নির্মাণে ব্লকের চাহিদা বাড়ছে। গ্যাসমিন লিমিটেড নামে একটি বেসরকারি কোম্পানি গ্রিন ব্লক নামের দুটি কারখানায় নির্মাণ করেছে। এখানে তারা তৈরি করছে হলো ও পেভিং কংক্রিট ব্লক। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে উৎপাদনে যাওয়া এ ব্লক কারখানা বাণিজ্যিকভাবে এখন পুরোদমে সফলতার মুখ দেখছে। জার্মান প্রযুক্তিতে তৈরি এ কারখানায় সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে বানানো হয় ২০ ধরনের ব্লক।
উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, উপজেলার হিঙ্গুলী ইউনিয়নে স্থাপিত গ্যাসমিন লিমিটেডেরর গ্রিন ব্লক ফ্যাক্টরির এ দুটি কারখানায় প্রতিদিন গড়ে ৩০ হাজার ব্লক উৎপাদিত হয়। তবে এর চাহিদা আরও বেশি। দিন যত যাচ্ছে এটির চাহিদা তত বাড়ছে। সরকারি-বেসরকারি উন্নয়নকাজ ছাড়াও শহর-গ্রামে বাড়ি তৈরির কাজেও দিন দিন এর ব্যবহার বাড়ছে।
এদিকে প্রতিষ্ঠানটির হিসাব বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, শুধু কংক্রিট হলো ব্লকে ভ্যাট রিবেইট সুবিধা প্রদান করছে সরকার। হলো ব্লকের পাশাপাশি অন্যান্য ব্লকেও ভ্যাট এবং ট্যাক্স রিবেইট, ট্যাক্স হলিডে, ক্যাস ইনসেনটিভ সুবিধা প্রদান করলে এ খাতে বিনিয়োগকারীরা আরও উৎসাহিত হবেন।
এদিকে এ খাতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের সুবিধা রয়েছ জানিয়ে গ্রিন ব্লক ফ্যাক্টরির কর্মকর্তারা বলছেন, ‘ব্লক কারখানা তৈরিতে বিনিয়োগের মাত্রা খুবই কম। গ্যাসমিন লিমিটেড তাদের দুটি কারখানা তৈরিতে মোট বিনিয়োগ করেছে মাত্র ১৫ কোটি টাকা। দেশের ছোট উদ্যোক্তারা এ ধরনের প্রকল্পে বিনিয়োগ করলে ঝুঁকির সম্ভাবনা যেমন কমবে, তেমনি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনাও থাকবে শতভাগ। এছাড়া কংক্রিট ব্লক তৈরি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এটি পরিবেশ রক্ষায়ও সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
গ্যাসমিন লিমিটেডের গ্রিন ব্লক ফ্যাক্টরির ম্যানেজার মো. এনামুল হক জানান, ২০১৬ সালের মার্চ মাসে তারা একটি কারখানায় ব্লক উৎপাদন শুরু করেন। এরপর চাহিদার সঙ্গে উৎপাদনের মিল থাকায় ২০২১ সালের ৪ নভেম্বর অত্যাধুনিক জার্মান প্রযুক্তির আরেকটি কারখানা স্থাপন করে তাতেও উৎপাদন শুরু করে।
কোম্পানিটির উৎপাদনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত এ কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে আমাদের কারখানায় উৎপাদিত ব্লক পায়রা বন্দর নির্মাণকাজে ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া দেশের সর্ববৃহৎ প্যাসেপিক জিন্স, ম্যাফ ফুট ওয়্যার, ফোর এইচ গ্রুপ, পেনিনসুলা এয়ারপোর্ট গার্ডেন, ফাইভস্টার হোটেল, ভারটেক্স অফডক লজিস্টিক সার্ভিসেস লিমিটেড, বে-লিংক কন্টেইনার ডিপো, জিপিএইচ ইস্পাত, বিএসআরএম কারখানার ভবন নির্মাণ এবং পেভিংয়ের কাজের জন্য ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু শিল্প নগর এবং পিডব্লিউডির বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নকাজেও এখানকার ব্লক ব্যবহার করা হচ্ছে। মিরসরাই থেকে নদী এবং সমুদ্রপথে এটি পুরো দেশে পাঠানো যাচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রাম-ফেনীর বিভিন্ন এলাকায় ছোটবড় বাড়িঘর নির্মাণের জন্য গ্রিন ব্লক ফ্যাক্টরির কংক্রিট ব্লক ব্যবহার করা হচ্ছে।
ব্লকের গুণগত মান নিয়ে গ্যাসমিন লিমিটেডের প্রধান প্রকৌশলী আফসার কামাল সিদ্দিকী জানান, গ্রিন ব্লক ফ্যাক্টরিতে ব্লক নির্মাণে ব্যবহার করা হয় ২.৫ এফএম সিলেট বালু, ১.৫ এফএম লোকাল বালু, ওপিসি সিমেন্ট, হাইগ্রেড এডমিক্সার, কংক্রিট ও নুড়ি পাথর। এছাড়া গুণগত মান ঠিক রাখতে উৎপাদনের আগে পরে ল্যাব টেস্টের মাধ্যমে এর পিএসআই নির্ণয় করা হয়।
গ্যাসমিন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহবুব উর রহমান রুহেল বলেন, ‘হলো ব্লক দিয়ে বাড়ি বা বহুতল ভবন নির্মাণ করলে ২৫ শথাংশ খরচ কম হয়। এছাড়া ভবনের লোড বিয়ারিং ক্যাপাসিটি সমানভাবে কমবে। পাশাপাশি মানের দিক থেকেও সাধারণ ইটের তুলনায় টেকসই-মজবুত হবে। পরিবেশের কোনোরকম ক্ষতিসাধন না করেই এটি উৎপাদন করা যায়।’
এদিকে গ্রিন ব্লক লিমিটেডের দুটি কারখানা ঘুরে দেখা গেছে, কোনো রকম হাতের ছোঁয়া ছাড়াই সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তৈরি করা হচ্ছে কংক্রিট ব্লক। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতির হওয়ায় ফ্যাক্টরির আয়তন অনুযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা নগণ্য।
হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (এইচবিআরআই) প্রিন্সিপাল রিসার্চ অফিসার মো. আকতার হোসেন সরকার বলেন, ‘আমাদের দেশে তৈরি সাড়ে চারটি সাধারণ ইটের পরিমাণ সাইজে তৈরি হয় একটি হলো ব্লক। এটাতে একদিকে সিমেন্টের ব্যবহার যেমন কম হয় অন্যদিকে ক্রেতারা সাশ্রয়ী দামে এটি পান। এছাড়া ওজনের দিক দিয়ে সাধারণ ইটের চেয়ে কম হওয়ায় ভূকম্পনরোধেও এটি সহায়ক। মানের দিক থেকে অবশ্যই সাধারণ ইট থেকে ভালো। এটি ব্যবহারে সব স্তরের মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা প্রয়োজন।’
এসএইচএস/জিকেএস