মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন রোববার

দীর্ঘ আট বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন। রোববারের (১১ ডিসেম্বর) এ সম্মেলনকে ঘিরে শহর জুড়ে চলছে সাজ সাজ রব। পদ প্রত্যাশীদের ব্যানার, পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা দুর্দিনের কর্মীদের মূল্যায়ন হবে নতুন কমিটিতে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম মানিকগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে আগেই ঘোষণা দিয়েছেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের পরদিন মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে সমাবেশের আদলে। লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটবে। এতে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলা আওয়ামী লীগের সবশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি। তিন বছর পর পর কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হওয়ার নিয়ম থাকলেও নানা কারণে তা হয়ে ওঠেনি। এবারের সম্মেলনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও পৌরসভার কাউন্সিল শেষ করেছে জেলা আওয়ামী লীগ। দৌলতপুর ও শিবালয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি এবং সম্পাদক পদে ভোট হয়েছে। বাকি উপজেলা ও ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ডগুলোতে সমঝোতার ভিত্তিতেই নেতা নির্বাচন করা হয়।
জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে একাধিক প্রার্থী রয়েছে। পদ প্রত্যাশীরা কেন্দ্রে লবিংকরাসহ এলাকায় ব্যানার ও পোস্টারে তাদের প্রার্থীতা জানান দিচ্ছে। সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী দুই নেতা এরই মধ্যে জেলা শহরে করেছেন বড় শোডাউন।
জেলা আওয়ামী লীগে রয়েছে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব আর আধিপত্যের লড়াই। তাই এবারের সম্মেলনে নিয়ে রয়েছে নানা সমীকরণ।
নেতাকর্মীরা প্রত্যাশা করছেন এবারের সম্মেলনে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের মূল্যায়ন করা হবে। যারা দলকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সুদেব কুমার সাহা বলেন, আমি ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম। জেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলাম। সব উপজেলা পর্যায়ে আমার নেতাকর্মীদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রয়েছে। আগামী এক বছর পর সংসদ নির্বাচন। একই সঙ্গে বিএনপি জামায়াতের যে নৈরাজ্য এটা প্রতিহত করতে চাইলে দলকে ঐক্যবদ্ধ করা দরকার। এই ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে যেহেতু আমি ছাত্রলীগ যুবলীগ করেছি তাই অন্যান্য প্রার্থীর চেয়ে আমার সমন্বয় করা সুবিধা হবে। এজন্য সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হয়েছি।
আরেক সাধারণ সম্পাদক পদ প্রার্থী সুলতানুল আজম খান আপেল বলেন, আমরা চাই জেলা আওয়ামী লীগে পরিবর্তন আসুক। কারণ দীর্ঘদিন ধরে এই কমিটি দলকে গতিশীল করতে পারেনি। আট বছরে শুধুমাত্র দুটি কার্যকরী সভা হয়েছে। ইউনিয়ন কাউন্সিল ও উপজেলা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাত্র সাতটি বর্ধিত সভা হয়েছে। এই অবস্থায় কি জেলা আওয়ামী লীগ চলে। সামনে নির্বাচন তাই সুসংগঠিত কমিটি প্রয়োজন। তাই তৃণমূল নেতাকর্মীদের এখন প্রত্যাশা কাউন্সিলরদের সরাসরি ভোটের মাধ্যমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হোক। এতে করে তৃণমূল নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করা হবে এবং তারাই ভালো জানে কোন নেতাকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করা যায়।
সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. আব্দুস সালাম জানান, বিধি মোতাবেক কাউন্সিল করার সবপ্রস্ততিই সম্পন্ন হয়েছে। এবারের কাউন্সিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ষড়যন্ত্র, অতীত, বর্তমান সবকিছুকেই মাথায় নিয়েই আমরা কাজ করছি। নেতৃত্ব মানেই প্রতিযোগিতা। এক পদ তো দুইজনকে দেওয়া যাবে না। এখন নেতৃত্বের নৈতিকতা দরকার। নৈতিকতা না থাকলে মানুষের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে না। তাই নৈতিকতা সম্পন্ন মানুষ যদি দলে আসে সেখানে মানুষের আস্থা অবশ্যই পাবে।
মানিকগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট বীরমুক্তিযোদ্ধা গোলাম মহীউদ্দীন জাগো নিউজকে জানান, সম্মেলন শতভাগ বর্ণাঢ্য ও উৎসবমুখর করতে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন তাই এই সম্মেলনের গুরুত্ব অনেক। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা রয়েছে। সম্মেলনে ব্যাপক লোক সমাগম হবে।
সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের ছাড়াও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, সদস্য শামসুন নাহার চাঁপা ও অ্যাডভোকেট সানজিদা খান আরও বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত থাকবেন। রোববার দুপুর ২ টায় সম্মেলন শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।
বি.এম খোরশেদ/জেএস/জেআইএম