ফেলানী হত্যার এক যুগ: ন্যায়বিচারের আশায় প্রহর গুনছেন বাবা-মা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:৩৮ এএম, ০৭ জানুয়ারি ২০২৩

কুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানী হত্যার এক যুগ পূর্ণ হলো আজ (৭ জানুয়ারি)। দেশ-বিদেশে আলোচিত এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও বিচার পায়নি তার পরিবার। বিচারিককাজ ভারতের উচ্চ আদালতে ঝুলে থাকায় এখনো ন্যায়বিচারের আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছেন ফেলানীর বাবা-মা। অন্যদিকে, করোনা পরিস্থিতিতে বিচারিককাজ বিলম্বিত হলেও শেষপর্যন্ত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সীমান্ত হত্যা বন্ধের প্রত্যাশা বিশিষ্টজনদের।

আরও পড়ুন>> সীমান্ত হত্যা বন্ধে আন্তরিকতার অভাব নেই: বিজিবি মহাপরিচালক

২০১১ সালের আজকের এ দিনে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার অনন্তপুর সীমান্তে নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনিটারী এলাকার কিশোরী ফেলানী খাতুন। দীর্ঘ সাড়ে চার ঘণ্টা কাঁটাতারে ঝুলে থাকে ফেলানীর মরদেহ। এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে ভারত।

২০১৩ সালের ১৩ আগস্ট ভারতের কোচবিহারে জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্টে ফেলানী হত্যা মামলার বিচার শুরু হয়। বিএসএফের এ কোর্টে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম ও মামা হানিফ। ওই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর আসামি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয় বিএসএফের বিশেষ কোর্ট। পরে রায় প্রত্যাখ্যান করে পুনঃবিচারের দাবি জানান ফেলানীর বাবা। ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পুনরায় বিচার শুরু হলে ১৭ নভেম্বর আবারও আদালতে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা। ২০১৫ সালের ২ জুলাই এ আদালত পুনরায় আত্মস্বীকৃত খুনি অমিয় ঘোষকে খালাস দেয়। রায়ের পরে একই বছর ১৪ জুলাই ভারতের মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ ‘মাসুম’ ফেলানীর বাবার পক্ষে দেশটির সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন করে। ওই বছর ৬ অক্টোবর রিট শুনানি শুরু হয়। ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে কয়েক দফা শুনানি পিছিয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের ২৫ জানুয়ারি দিন ধার্য হলেও হয়নি শুনানি। পরবর্তীতে আরও কয়েকদফা শুনানির দিন ধার্য থাকলেও বিভিন্ন কারণে তা সম্পন্ন হয়নি আজও। এ অবস্থায় অনেকটা হতাশার মধ্যে থাকলেও মেয়েকে হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তিসহ ন্যায়বিচারের আশা করছেন ফেলানীর পরিবার।

আরও পড়ুন>> ফেলানী হত্যার ১১ বছর, ন্যায়বিচারের প্রতীক্ষায় বাবা-মা

ফেলানীর বাবা নূর ইসলাম বলেন, মেয়ে ফেলানীকে বিয়ে দিতে সঙ্গে করে সীমান্ত পাড়ি দেওয়ার সময় আমার চোখের সামনে বিএসএফ সদস্য অমিয় ঘোষ মেয়েকে হত্যা করেছে। আমি অমিয় ঘোষের ফাঁসি চাই। দু’দেশের সরকার যেন সঠিক বিচারটা করে।হতাশা প্রকাশ করে ফেলানীর মা জাহানারা বেগম বলেন, আমার মেয়েকে যখন হত্যা করা হয় তখন আমি ভারতে ছিলাম। আমার বোনের ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার জন্য ফেলানীর বাবা ওকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশে আসার সময় বিএসএফ ফেলানীকে হত্যা করেছে। ফেলানী আমার বড় মেয়ে। আমার বুকটা খালি করে দিয়েছে। আমার মেয়ে হত্যার বিচার না পাওয়া পর্যন্ত আত্মা শান্তি পাবে না।

আরও পড়ুন>>লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত

নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলনিটারী গ্রামের ফেলানীর পরিবারের প্রতিবেশীরা জানান, ফেলানী হত্যার বিচার পেতে আদালতে স্বাক্ষী দিতে কয়েক দফায় ভারতে যান নূর ইসলাম। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিচার না পাওয়াটা দুঃখজনক। ফেলানী হত্যার বিচারের পাশাপাশি সীমান্ত হত্যা বন্ধের দাবি জানান তারা।

কুড়িগ্রামের পাবলিক প্রসিকিউটর ও ফেলানীর বাবার আইনি সহায়তাকারী অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন জানান, করোনা পরিস্থিতির কারণে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে দাখিল করা রিট পিটিশনটির শুনানি এখনো শুরু হয়নি। বিলম্ব হলেও আশা করছি, ন্যায়বিচারের মাধ্যমে দু’দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও শান্তিপূর্ণ সীমান্ত প্রতিষ্ঠা হবে।

আরও পড়ুন>> সীমান্তে মানুষ হত্যা ভারতের জন্য লজ্জাজনক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার রামখানা ইউনিয়নের কলোনীটারী গ্রামের নুরুল ইসলাম ও জাহানারা দম্পতির আট সন্তানের মধ্যে সবার বড় ছিল ফেলানী। মেয়ে ফেলানীর বিয়ে ঠিক হয় বাংলাদেশে। তাই ২০১১সালের ৬ জানুয়ারি মেয়েকে নিয়ে রওনা হন দেশের উদ্দেশ্যে।

ফজলুল করিম ফারাজী/এমএএইচ/

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।