বগুড়ায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাসিন্দাদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষ

বগুড়ার শেরপুরে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাসিন্দাদের সঙ্গে গ্রামবাসীর সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের অন্তত অর্ধশত লোকজন আহত হয়েছেন। এরমধ্যে গুরুতর ২০ জনকে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স ও বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রোববার (৮জানুয়ারি) দুপুরে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের আম্বইল গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
সংঘর্ষে গুরুতর আহতরা হলেন, আম্বইল গ্রামের নুরুন্নবী সরকার, আবু সাঈদ, ফজলুল হক, জুয়েল সরকার, নুর হোসেন, আব্দুল বারিক, জসিম উদ্দিন সরকার, হায়দার আলী, মিলন সরকার, ফারুক হোসেন, আসফদৌল্লা খান, টুটুল মিয়া, নাদু সিং, প্রদীপ সিং, জাম্পু মেম্বার, জিরেন সিং, শান্ত সিং, রফিক মেম্বার, সন্তোষ সিং, গজেন সিং, নয়ন সিং, অর্জুন সিং, কৃষ্ণ সিং, পরী সিং, সুকুমার সিং, সোহানা সিং ও দিলীপ সিং। এছাড়া অন্য আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যাওয়ায় তাদের পরিচয় জানা যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার ভবানীপুর ইউনিয়নের আম্বইল মৌজায় প্রায় শতবিঘা জমির মালিকাকা নিয়ে স্থানীয় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বাসিন্দা ও পাশের চার গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। এমনকী ওইসব জমির দখলকে কেন্দ্র করে আদালতে একাধিক মামলাও বিচারাধীন আছে। এরমধ্যে বিবাদমান চার বিঘা জমি সোলায়মান আলী মাস্টার নিজের মালিকানা দাবি করে বসেন। ওই জমিতে রোববার সকালে তিনি গ্রামের লোকজন নিয়ে বোরো ধানের চারা লাগাতে শুরু করেন। এ খবর পেয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকজন সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের বাধা দেন। পরে উভয়পক্ষের মধ্যে শুরু হয় তুমুল সংঘর্ষ। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দফায় ভয়াবহ সংঘর্ষ চলে। পরবর্তীকালে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সেইসঙ্গে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠায়।
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে সোলায়মান আলী অভিযোগ করে বলেন, আদিবাসী নামে কতিপয় উশৃঙ্খল মাদক কারবারি ও ভূমিদস্যুদের অত্যাচারে আম্বইলসহ আশপাশের চার গ্রামের নিরীহ মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এসব এলাকার ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি সরকারি খাস সম্পত্তি বলে নিজেরা জবরদখল শুরু করেছেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় আমার পনের বিঘা জমি দখলের পাঁয়তারা চালাচ্ছিলেন তারা। অথচ এসব জমি কেনার পর থেকেই দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করে আসছি আমি। এরমধ্যে চারবিঘা জমিতে বোরো চারা লাগানোর সময় কমল সিং ও সন্তোশ সিং তাদের লোকজন নিয়ে তীর-ধনুকসহ দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আমাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালান। সেইসঙ্গে বেধড়ক পিটিয়ে বিশ থেকে পঁচিশজনকে গুরুতর আহত করেন।
এদিকে, আদিবাসী পরিষদ বগুড়া জেলা কমিটির সভাপতি সন্তোষ সিং অভিযোগ করে বলেন, গত তিন-চারদিন ধরে আমাদের মালিকানাধীন দখলীয় জমি হাফিজুর রহমান, সোলায়মান আলী ও স্বপন মিয়া শতাধিক ভাড়াটে লোক দিয়ে দখলে নিতে শুরু করেছেন। সেসব জমিতে পাওয়ার টিলার দিয়ে চাষ করে চারা লাগাচ্ছিলেন তারা। নিষেধ করায় আমাদের ২০ থেকে ৩০ জনকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন। সেইসঙ্গে স্থানীয় বাজারে আদিবাসীদের দোকানঘরগুলো ভাঙচুর করেছে। এমনকী চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসার সময়ও আমাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এমন পরিস্থিতিতে চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছি।
তাই আইনের আশ্রয় নিতে থানায় যেতে পারছেন না বলেও অভিযোগ করেন এই আদিবাসী পরিষদের নেতা।
বগুড়ায় শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. জাহিদুল ইসলাম শীপলু বলেন, এখানে শেরপুর থেকে সংঘর্ষে আহত হয়ে ছয়জন এসেছেন। তাদের হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে তারা শঙ্কা মুক্ত।
শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খোন্দকার বলেন, সংঘর্ষের খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে যাই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। সেইসঙ্গে উভয়পক্ষকে শান্ত করে আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ওসি আরও বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়া কোনোপক্ষই লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমআরআর/জিকেএস