সাতক্ষীরা

শতকোটি টাকার কুলের বাজার, নেই সংরক্ষণ ব্যবস্থা

আহসানুর রহমান রাজিব
আহসানুর রহমান রাজিব আহসানুর রহমান রাজিব , সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ০৭:৪৫ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩

প্রায় এক দশক ধরে সাতক্ষীরায় কুলের বাণিজ্যিক আবাদ হচ্ছে। এরইমধ্যে মৌসুমি এই ফলকে কেন্দ্র করে জেলায় গড়ে উঠেছে শতকোটি টাকার বাজার। চলতি মৌসুমে বাগান থেকে বাজারে উঠতে শুরু করেছে কয়েক জাতের কুল।

তবে, ডিজেল সারসহ কৃষি সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ বেড়েছে। এতে কমেছে লাভের অংশ। এছাড়া কুল সংরক্ষণ ব্যবস্থা ও নির্দিষ্ট বাজার না থাকায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা।

শতকোটি টাকার কুলের বাজার, নেই সংরক্ষণ ব্যবস্থা

আলাদা বাজার না থাকায় তালা উপজেলার ভৈরবনগর এলাকায় সাতক্ষীরা-খুলনা মহাসড়কের পাশে নিজেদের বাগানে উৎপাদিত কুল বিক্রি করেন ব্যবসায়ীরা। এখানে বসেই তাদের দৈনিক বেচাকেনা হয় কয়েক লাখ টাকা। ওই এলাকার মিঠাবাড়ি, নগরঘাটাসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে রয়েছে ছোটবড় শতাধিক কুলের বাগান।

আরও পড়ুন: কাশ্মীরী কুল চাষে তিন শিক্ষার্থীর চমক!

এসব বাগানে গত কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে, নারকেলি, বিলাতি, আপেল, বলসুন্দরি, কাশমিরীসহ বিভিন্ন জাতের কুল। সুস্বাদু ও বিষ মুক্ত হওয়ায় স্থানীয় বাজারের পাশাপাশি ঢাকা, খুলনাসহ সারাদেশের বাজারে এখানকার উৎপাদিত কুলের বেশ চাহিদা রয়েছে। এজন্য মৌসুমের শুরুতেই বাগান থেকে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে কুল কিনছেন পাইকাররা। তবে, পাকা কুল সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা না থাকায় দ্রুত পরিপক্ব কুল বাজারজাত করতে না পারলে অনেক সময় ক্ষতিগ্রস্ত হন বাগান মালিকরা।

শতকোটি টাকার কুলের বাজার, নেই সংরক্ষণ ব্যবস্থা

ভৈরবনগর গ্রামের কুলচাষি আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ১০ বিঘা জমিতে কুলের বাগান করেছি। এবার বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে ৩০ হাজার টাকার মতো। তবে ডিজেল এবং সার-কীটনাশকের দামবৃদ্ধির কারণে গত বছরের চেয়ে খরচ দ্বিগুণ হয়েছে।

তিনি বলেন, বাগান থেকে বর্তমানে ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দরে কুল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন খুলনার পাইকারি ব্যবসায়ীরা। আমাদের এলাকায় কুলের জন্য আলাদা কোনো বাজার নেই। এজন্য বেশিরভাগ ক্রেতারা এদিকে আসেন না।

শতকোটি টাকার কুলের বাজার, নেই সংরক্ষণ ব্যবস্থা

আরও পড়ুন: কাশ্মীরি আপেল কুল চাষে ১০ মাসে বদলে গেল প্রবাসীর ভাগ্য

নগরঘাটা এলাকার বাসিন্দা মো. মামুন জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের এলাকায় বর্তমানে দুই শতাধিক কুল বাগান রয়েছে। তবে এসব কুল বিক্রির জন্য কোনো নির্দিষ্ট বাজার নেই। এজন্য অনেকে রাস্তার পাশে বসে কুল বিক্রি করেন। আর পাইকারি ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো দাম দিয়ে বাগান থেকে কুল কিনে নিয়ে যান। এজন্য কৃষকরা কুলের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছেন না।

মিঠাবাড়ির কুলচাষি আশরাফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, এবছর পাঁচবিঘা জমিতে কুলের বাগান করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। মিঠাবাড়ি এলাকার কুলের চাহিদা থাকায় এবছর অনেক ব্যবসায়ী বাগান থেকে কুল ক্রয় করছেন। বর্তমানে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে কুল বিক্রি করছি। তবে প্রথম দিকে ১০০ টাকার ওপরে দাম ছিল।

শতকোটি টাকার কুলের বাজার, নেই সংরক্ষণ ব্যবস্থা

তিনি আরও বলেন, গাছে কুল পাকা শুরু হলে রাখা যায় না। এটি সংরক্ষণের কোনো ব্যবস্থা নেই। এজন্য দাম কম হলেও দ্রুত বিক্রি করতে হবে।

আরও পড়ুন: কুল ফুলে মধু চাষ

পাটকেলঘাটার কুল ব্যবসায়ী পারভেজ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, সাতক্ষীরার বলসুন্দরি, বাউকুল, আপেলকুল, নারিকেলি, নাইনটিসহ বিভিন্ন জাতের কুলের ঢাকাসহ সারাদেশে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। অন্য জেলার তুলনায় এ জেলার কুল অনেক সুস্বাদু। আগাম ফলন হওয়ায় দামও ভালো।

শতকোটি টাকার কুলের বাজার, নেই সংরক্ষণ ব্যবস্থা

তিনি বলেন, সংরক্ষণের ব্যবস্থাসহ কুলের জন্য আলাদা বাজার গড়ে তোলা গেলে বাইরের পাইকাররা এখান থেকে কুল সংগ্রহ করতে আসবেন। তখন কৃষরা আরও বেশি লাভবান হবেন।

সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. মো. জামাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, চলতি বছর পর্যন্ত সাতক্ষীরার সাত উপজেলার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কয়েক হাজার কুল বাগান গড়ে উঠেছে। বর্তমানে জেলায় বছরে গড়ে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টন কুল উৎপাদিত হয়। যার গড় বাজার মূল্য শত কোটি টাকার ওপরে।

শতকোটি টাকার কুলের বাজার, নেই সংরক্ষণ ব্যবস্থা

আরও পড়ুন: কুল খেলে শরীরে যা ঘটে

তিনি বলেন, স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফা হওয়ায় জেলায় প্রতিবছরই কুল বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি বিভিন্ন মাছের ঘেরের আইলে কুলের চাষ হয়। এসব বাগানে কর্মসংস্থান হয়েছে লক্ষাধিক মানুষের। এছাড়া অনেকে অনাবাদি জমি, বসতবাড়ির আঙিনায় কুলের গাছ লাগান। সেখান থেকেও প্রচুর কুল উৎপাদন হয়।

এমআরআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।