রাজবাড়ীর ৮০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শহীদ মিনার

রুবেলুর রহমান
রুবেলুর রহমান রুবেলুর রহমান , জেলা প্রতিনিধি রাজবাড়ী
প্রকাশিত: ০৯:২৯ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

অডিও শুনুন

ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিস্তম্ভ শহীদ মিনার। কিন্তু রাজবাড়ীর ৮০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই শ্রদ্ধা জানানোর সেই শহীদ মিনার। ফলে বাস্তবমুখী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা বলছে, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ অন্য জাতীয় দিবসে দূরে গিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে হয়। ইচ্ছা থাকলেও প্রতিবন্ধীসহ অনেক শিক্ষার্থী যেতে পারে না। ফলে নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি শিক্ষার্থীদের।

সুধিজনদের দাবি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার থাকলে ছেলে-মেয়েরা ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস সর্ম্পকে যেমন জানতো, তেমনি বাস্তবধর্মী শিক্ষা পেতো। শহীদদের প্রতি বেড়ে যেতো তাদের শ্রদ্ধা ও ভক্তি। ফলে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকা জরুরি।

শিক্ষকরা বলেন, শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার খুবই প্রয়োজন। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মিত হয়নি। তবে ব্যক্তিগতভাবে নির্মাণের চেষ্টা চলছে।

raj-(1).jpg

শিক্ষা কর্মকর্তারা বলছেন, যে সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নাই, পরিদর্শনের সময় সে সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য বলা হয়। শহীদ মিনার থাকলে বিদ্যালয়টি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজবাড়ীর প্রাথমিক, মাধ্যমিক, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান মিলে ৭৩৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে। এরমধ্যে মাধ্যমিক, কলেজ, মাদরাসা ও কারিগরির ২৫৭ প্রতিষ্ঠানে মধ্যে শহীদ মিনার আছে ৯৪ টিতে। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৮১টির মধ্যে শহীদ মিনার আছে মাত্র ৫৬ টিতে। ফলে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণ অথবা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের শহীদ মিনারে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জাতীয় দিবস পালন করে।

শেরে বাংলা বালিকা ও কাজী হেদায়েত হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, ভাষা শহীদদের সম্পর্কে তারা বইয়ের মাধ‌্যমে জেনেছে। ওই শহীদদের জন্যই বাংলা ভাষা পাওয়া। সেই ভাষায় সুন্দরভাবে কথা বলছে সবাই। দেশকে উন্নত করতে হলে আগে ভাষাকে উন্নত করতে হবে। নিজেদের বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকলে শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি আরও অনেক কিছু শিখা যেতো। শ্রদ্ধা জানাতে দুরে যেতে হতো না।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সাবেক জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমানসহ কয়েকজন বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকবে এমন নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে অনেক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নাই। সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার থাকলে শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলন ও শহীদদের সর্ম্পকে জানতে পারতো। বাস্তবধর্মী শিক্ষাও পেতো। এ জন্য প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মিত হওয়া উচিত।

raj-(1).jpg

কাজী হেদায়েত হোসেন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক অনুপ কুমার রায় জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের বিদ্যালয়টি জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী হেদায়েত হোসেনের নামে ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত শহীদ মিনার নির্মাণ হয়নি। ফলে জাতীয় দিবসে শিক্ষার্থীদের কয়েক কিলোমিটার দূরে গিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে হয়। অনেকের ইচ্ছা থাকা স্বত্বেও শ্রদ্ধা জানাতে যেতে পারে না।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে বাস্তব ও জীবনধর্মী শিক্ষা ব্যবস্থা আছে। যেখানে শুধু শ্রেণিকক্ষে পাঠদান নয়, শিক্ষার্থীরা বাইরেও পাঠদান করবে। বিভিন্ন উপকরণের মাধ্যমে জীবনধর্মী শিক্ষা নেবে। শহীদ মিনার সেটির একটি, যার মাধ্যমে শিক্ষা নেওয়া যায়। এ জন্য বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ প্রয়োজন।

শেরে বাংলা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষার জন্য বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার প্রয়োজন। আমার বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার না থাকা অত্যন্ত দুঃখজনক। তবে ব্যক্তিগতভাবে শহীদ মিনার নির্মাণের চেষ্টা করছি। এখন জেলার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানো হয়।

রাজবাড়ী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, যে সব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নাই, পরিদর্শনে সময় নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়। শহীদ মিনার থাকলে বিদ্যালয়টি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়।

এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।