গাইবান্ধা বিসিক
বরাদ্দ নিয়েও বেশিরভাগ প্লট ফেলে রেখেছেন মালিকরা

প্লট আছে শিল্প নেই। শিল্প আছে চালু নেই। স্থাপনা আছে, কলকারখানা নেই। এ অবস্থায় মাত্র ২৪টি শিল্প-কারখানা নিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে গাইবান্ধা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। ১০৫টি প্লটের সবগুলো বরাদ্দ হলেও, কারখানা না করে অর্ধেক প্লট ফেলে রেখেছেন মালিকরা। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ ক্ষুদ্র শিল্প উদ্যোক্তারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৭ সালে গাইবান্ধা সদরের ধানঘড়া এলাকায় ১৫ একর জমি অধিগ্রহণের পর শুরু হয় বিসিক শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে ১৯৯৮ সালে ৫৩টি শিল্প কারখানা নিয়ে যাত্রা শুরু হয় বিসিকের। এরমধ্যে ২৪টি কারখানা চালু থাকলেও থেমে থেমে চলছে ২৯টি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখন পর্যন্ত গড়ে ওঠেনি রপ্তানিমুখী কোনো শিল্প। বরাদ্দের পরও পড়ে আছে ৫২টি প্লট।
পিছিয়ে পড়া জনপদে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে এ ধরনের প্রতিষ্ঠান অগ্রণী ভূমিকা রাখার কথা। কিন্তু সেই আশার গুড়েবালি। তবে সব প্লটে শিল্প গড়ে তোলা এবং সবগুলো কলকারখানার চাকা সচল করার আশ্বাস দিচ্ছেন কর্মকর্তারা।
অন্যদিকে শিল্প উদ্যোক্তারা বলছেন, শুধুমাত্র যথাযথ পদক্ষেপের অভাবে দিনে দিনে বিসিকের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয় হয়ে পড়েছে। একটু নজর দিলে বিসিকের অন্ধকার ঘুচবে, দেখবে আলোর মুখ।
সরেজমিনে দেখা যায়, শিল্প নগরীর অনেক ইউনিটেই তালা ঝুলছে। যেখানে শ্রমিকদের আনাগোনা নেই। নেই কোনো কোলাহল। শুধু পাঁচ থেকে ছয়টি সরিষা তেলের মিলে শ্রমিকদের কর্মব্যস্ততা চোখে পড়ে। বরাদ্দকৃত শিল্প ইউনিটের প্রায় সব কারখানাই বন্ধ।
কিছু কিছু মালিক মাঝে মধ্যে কারখানা চালু করেন। কয়েকদিন পর আবারও বন্ধ করেন। ভাঙাচোরা রাস্তায় নেই নির্বিঘ্ন চলাচলের উপায়। অকার্যকর ড্রেনেজ ব্যবস্থায় সামান্য বৃষ্টিতে জমছে পানি।
এদিকে বরাদ্দ নেওয়া প্লটে বছরের পর বছর ধরে ঠাঁই দাঁড়িয়ে নির্মাণাধীন ভবন। নেই উৎপাদন আর বিপণনের ব্যবস্থা। সীমানা প্রাচীর না থাকায় আছে নিরাপত্তা নিয়েও সংশয়।
নতুন উদ্যোক্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনেকেই প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন, কিন্তু শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেননি। সেসব প্লটগুলো আমরা যারা নতুন উদ্যোক্তা জায়গার অভাবে পণ্য উৎপাদন করতে পারছি না, তাদের বরাদ্দ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।’
নারী উদ্যোক্তা ফরিদা ইয়াসমিন শোভা বলেন, ‘বিসিকে শুধু প্রশিক্ষণ দিলেই হবে না। পণ্য তৈরির জায়গা দিতে হবে। বিসিকের সব প্লটই বরাদ্দ হয়ে গেছে। অনেকেই বিসিক চালুর সময় প্লট বরাদ্দ পেলেও এখন শিল্পকারখানা চালু করেনি। সেগুলোর লিজ বাতিল করে নতুন উদ্যোক্তাদের প্লট বরাদ্দের দাবি জানাচ্ছি।’
নাগরিক সংগঠন জনউদ্যোগ গাইবান্ধার সদস্য সচিব প্রবীর চক্রবর্তী জাগো নিউজকে বলেন, বিসিক শিল্পনগরীতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উদ্যোক্তারা কারখানা স্থাপন করতে ব্যর্থ হলে প্লট বরাদ্দ বাতিল করে সেটি অবশ্যই অন্য উদ্যোক্তাকে বরাদ্দ দেওয়া উচিত। প্লট বরাদ্দ নিয়ে শুধু জায়গা দখল করে ফেলে রাখা যাবে না। অন্যদের ব্যবসা করার সুযোগ দিতে হবে।
থেমে থেমে চলা শিল্পকারখানার বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা বিসিকের কর্মকর্তা মো. সুমন মিয়া জাগো নিউজকে বলেন, অনেকেই অর্থনৈতিক সংকটের কারণে কারখানা বন্ধ করে রেখেছেন। কারখানা চালু থাকলে শ্রমিকদের তো বেতন দিতে হয়। এজন্যই মালিকরা কারখানা বন্ধ করে রাখেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রবীন চন্দ্র রায় জাগো নিউজকে বলেন, যারা প্লট বরাদ্দ নিয়ে কোনো কার্যক্রম চালাচ্ছে না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ বিষয়ে বিসিকের জেলা কমিটি কাজ করে। আর জেলা প্রশাসক এ কমিটির দায়িত্বে থাকেন। এর আগেও বেশ কয়েকবার প্লট বরাদ্দ নিয়ে ফেলে রাখা মালিকদের কারখানা চালুর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। ফেলা রাখা প্লট মালিকদের বিষয়ে জেলা প্রশাসককে জানানো হবে।
তিনি আরও বলেন, সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও রাস্তার সংস্কারে খুব শিগগির উদ্যোগ নেওয়া হবে। বন্ধ বা থেমে থেমে চলা শিল্পকারখানাগুলোকে সচল রাখতে আমরা কাজ করছি।
এসজে/এমএস