‘স্বপ্নের মতো ঘর পাইছি, সুখে আছি’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি নীলফামারী
প্রকাশিত: ০৮:১০ এএম, ০১ মার্চ ২০২৩

রক্তসঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নীলফামারীর তরনীবাড়ী গ্রামের ময়না বেগমের দুই পা কেটে ফেলতে হয়। পরে স্বামী অন্যত্র বিয়ে করলে দুই মেয়েকে নিয়ে আশ্রয় নেন বাবার বাড়ির পরিত্যক্ত ঘরে। অতিকষ্টে মেয়েদের বিয়ে দিলেও মাথা গোঁজার ঠাই ছিল না তার। সেই ময়না বেগম এখন পলাশবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা।

ময়না বেগমের মতো ঠিকানাহীন খোলা আকাশের নিচ থেকে এখন এক টুকরো আপন ঠিকানা পেয়েছে ২৭টি পরিবার। যাদের মধ্যে চারজন প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুক ও ছিন্নমূল মানুষও পেয়েছেন জমিসহ ঘর। সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের এসব ঘর পেয়ে বদলে গেছে প্রান্তিক এ জনগোষ্ঠীর জীবনমান।

nilphamari-1.jpg

উপজেলার দুবাছড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঠাঁই হয়েছে আরও ৭১টি পরিবারের। একসময় ছিন্নমূল, ভূমিহীন, গৃহহীন এই মানুষগুলোর দিন কাটতো অনাহারে-অর্ধাহারে। তবে একটি নিরাপদ ঠিকানার চিন্তা দূর হওয়ায় বর্তমানে নিজেদের স্বাবলম্বী করতে কাজ করছেন তারা। কেউ অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ, কেউ সবজি চাষ, আবার খামার করেও স্বাবলম্বী হচ্ছেন অনেকে।

nilphamari-1.jpg

আরও পড়ুন: আশ্রয়ণের ঘরে পিঠা বানিয়ে ভাগ্য বদলেছেন রিনা

নীলফামারীর নটখানা এলাকায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে অন্যের জমিতে একটি চালা ঘরে থাকতেন প্রতিবন্ধী ইকবাল হোসেন। নানা কষ্টে জর্জরিত ইকবালের ঠিকানা এখন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর।

nilphamari-1.jpg

স্ত্রী-সন্তান নিয়ে সেখানে সুখে থাকার কথা জানিয়ে ইকবাল জাগো নিউজকে বলেন, আমি প্রতিবন্ধী। দুই পা চলে না। আগে মানুষের জায়গায় ছিলাম। সারাদিন কাজে-কামে একটু ঝগড়া, কথাকাটাকাটি হলে বের করে দিত। এখন সরকারের বাড়ি পাইছি। ভালো আছি। ঝগড়াঝাঁটি নাই। কেউ বেরও করে দেয় না। সারাদিন পর বাড়ি ফিরে রাতে শান্তিতে বউ-বাচ্চা নিয়ে ঘুমাই।

nilphamari-1.jpg

প্রতিবন্ধী ময়না বেগম জাগো নিউজকে বলেন, স্বামী খোঁজ নেয় না ২০ বছর। অন্য একখানে বিয়ে করছে। অনেক কষ্ট করে মেয়ে দুইটারে বিয়ে দিছি। বাবার বাড়িতে একটা পরিত্যক্ত ঘরে থাকতাম। অনেক কষ্ট করে দিন যাইত। সরকারের কাছে আবেদন করছি, একটা ঘর পাইছি। এখন শান্তিমতো এখানে থাকি। আমার জন্য অনেক ভালো হইছে। অনেক প্রতিবেশীও পাইছি। প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করি যেন ভালো থাকে।

nilphamari-1.jpg

দুবাছড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পের রিক্তা বানু জাগো নিউজকে বলেন, এখানে কিছু জমি বন্ধক নিছি। সেই জমিতে সরিষা আবাদ করছি। সরিষা মোটামুটি ভালো হইছে। সরিষা বিক্রি করে কিছুটা লাভ হবে। ঘরের চালে সবজি লাগাইছি। আশপাশের ফাকা যায়গাগুলাতে রসুন ফলাইছি, বেগুন ফলাইছি। সুপারি গাছও লাগাইছি চারিদিকে। আগে তো নদীর এক কুল ভাঙলে, আরেক কুলে যাইতাম। এখন আর থাকার চিন্তা নাই, এখন কীভাবে উন্নতি করা যায় সে চিন্তা।

আরও পড়ুন: উপহারের ঘর মাসের পর মাস তালাবদ্ধ, সামনে চরে গরু-ছাগল

nilphamari-1.jpg

আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেক বাসিন্দা রণজিত রায় জাগো নিউজকে বলেন, দুই শতক জমি ছিল। মানুষ চালাকি করি রেকর্ড করে নিয়েছে। থাকার জায়গা ছিল না। এখন স্বপ্নের মতো ঘর পাইছি, সুখে আছি। প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দাদের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করছে প্রশাসন। তৈরি করা হচ্ছে নতুন আরও ১২০টি ঘর, এমনটিই জানালেন নীলফামারী সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেসমিন নাহার।

nilphamari-1.jpg

তিনি বলেন, মুজিবশতবর্ষে ভূমিহীন অসহায় মানুষদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে প্রথম পর্যায়ে ৯৯টি, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২২০টি ও তৃতীয় পর্যায়ে ৩১০টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। চতুর্থ পর্যায়ে ১২০টি ঘর নির্মাণ কাজ চলছে।

nilphamari-1.jpg

ইউএনও জেসমিন নাহার বলেন, যাদের প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেওয়া হয়েছে তারা সবাই অসহায়, ভিক্ষুক, সমাজের পিছিয়ে পড়া ছিন্নমূল দরিদ্র মানুষ। এখন নিরাপদ আশ্রয় পাওয়ায় তাদের মাথা থেকে নিরাপদ বাসস্থানের চিন্তা দূর হয়েছে। বর্তমানে তারা জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে যাচ্ছেন। কেউ খামার, কেউ শাকসবজি চাষ করে নিজেদের উন্নয়ন করছেন। তারা সবাই এ আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

nilphamari-1.jpg

আরও পড়ুন: আশ্রয়ণের ঘর লাখ টাকায় বিক্রি!

নীলফামারী জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, জেলায় ৪ হাজার ৭২১ জন ভূমিহীনের মধ্যে ৪ হাজার ১০০ জনকে ঘর দেওয়া হয়েছে। আগামী জুনের মধ্যে নীলফামারীকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত ঘোষণা করার লক্ষ্যে কাজ চলছে।

রাজু আহম্মেদ/এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।