হিলি সড়কের নির্মাণকাজ বন্ধ, উধাও ঠিকাদার

দিনাজপুরের হিলি সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে পানামা বন্দরের গেট পর্যন্ত ৮০০ মিটার সড়কের ফোরলেনের কাজ শুরু হয় গতবছরের ৬ ডিসেম্বর। পানামা পোর্টের গেট থেকে ঢালাইয়ের মাধ্যমে কাজ শুরু হয়।
কাজ শুরুর সময় মূল রাস্তার ওপর থেকে বিটুমিনমিশ্রিত পাথর, ইট তুলে ফেলা হয়। তবে হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এতে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বর্ষার আগেই কাজ শেষ না হলে দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করবে।
দিনাজপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ (সওজ) কার্যালয়ের তথ্যমতে, হিলি বন্দরের শূন্যরেখা থেকে পানামা পোর্ট গেট পর্যন্ত ৮০০ মিটার সড়কটি ফোরলেনে উন্নীতকরণের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিই। ৮০০ মিটার এ সড়কের মধ্যে দুটি কালভার্ট প্রশস্তকরণ কাজও রয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৩৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা। গতবছরের ৬ ডিসেম্বর কাজ শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি। তবে বর্তমানে কাজটি বন্ধ রয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, হিলি জিরোপয়েন্ট থেকে পানামা পোর্টের পুরো সড়কের কার্পেটিং তুলে ফেলে একপাশ আংশিক ঢালাই করার পর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ওই সড়ক দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকসহ দূরপাল্লার যানবাহন, অটোরিকশা ও রিকশা।
ভারতীয় ট্রাকচালক অনিমেষ কুমার বলেন, ‘আমি মাঝেমধ্যে ভারত থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক নিয়ে আসি। হিলি জিরোপয়েন্ট থেকে পানামা বন্দরের গেট পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খুবই খারাপ। কার্পেটিং না থাকায় ছোট-বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এ কারণে অনেক সময় ট্রাক একদিকে হেলে যায়। উল্টে যাওয়ার আশঙ্কা থাক। এরপরও ঝুঁকি নিয়েই বন্দরে প্রবেশ করতে হয়।’
স্থানীয় চারমাথা মোড়ের দোকানদান আব্দুল আলিম জাগো নিউজকে বলেন, ‘সড়কের একপাশে শুধু কিছু ঢালাইয়ের কাজ করা হয়েছে। এরপর গত একমাস ধরে কাজ বন্ধ আছে। বেহাল এ সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচলের কারণে প্রচুর ধুলাবালি ওড়ে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।’
ট্রাকচালক মো. মোকলেছ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি প্রতিদিন পানামা পোর্ট থেকে পণ্যবোঝাই ট্রাক নিয়ে বগুড়া, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন মোকামে যাই। কিন্তু পানামা পোর্টের গেট থেকে জিরোপয়েন্ট পর্যন্ত সড়কে কার্পেটিং উঠে গেছে। এ কারণে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। চলতে অসুবিধা হয়।’
কথা হয় হিলি নাগরিক উন্নয়ন কমিটির প্রচার সম্পাদক এনামুল হক খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সড়কের একপাশে কিছু কাজ করেছে। বেশিরভাগ কাজই বাকি আছে। হঠাৎ কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে হিলি ধুলার শহরে পরিণত হয়েছে।
কাজ শুরুর পর হঠাৎ বন্ধ কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (এনডিই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপাল চন্দ্র বলেন, ‘আর্থিক সংকটের পাশাপাশি সড়কের দুপাশের কিছু জমি অধিগ্রহণে সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান হলেই সড়কের কাজ আবার শুরু করা হবে।’
হাকিমপুর পৌরসভার মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজ শুরুর পর হঠাৎ বন্ধ করে দিয়ে উধাও হয়েছে। তাদের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যাচ্ছে না। আগামী বর্ষার মধ্যে কাজ শেষ করতে না পারলে ভারতীয় পণ্যবোঝায় ট্রাকের জন্য বেশ সমস্যা হবে।
এ বিষয়ে দিনাজপুর সওজের উপ-সহকারী প্রকৌশলী অনফ সরকার জাগো নিউজকে বলেন, আশা করছি খুব শিগগির আবার সড়কের কাজ শুরু হবে।
মাহাবুর রহমান/এসআর/এমএস