হবিগঞ্জে ব্রোকারেজ হাউজ
কঠিন হয়ে পড়ছে টিকে থাকা
হবিগঞ্জে চরম দুর্দিন যাচ্ছে ব্রোকারেজ হাউজগুলোর। বাজারের ক্রমবর্ধমান পতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা উৎসাহ হারাচ্ছেন। যারা লেনদেন করেছেন তারাও লোকসানে পড়ে লেনদেন বন্ধ করে দিয়েছেন। ব্রোকারেজ হাউজে যাওয়াও ছেড়ে দিয়েছেন। অনেক বিনিয়োগকারীর পুঁজি এখন অর্ধেকে নেমে গেছে। এ অবস্থায় নতুন বিনিয়োগকারীরাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে ব্রোকারেজ হাউজগুলোকেও লোকসান টানতে হচ্ছে। এতে হবিগঞ্জে অবস্থিত ব্রোকারেজ হাউজগুলোর শাখা টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ছে।
সরেজমিন জানা যায়, জেলা শহরে বর্তমানে তিনটি ব্রোকারেজ হাউজ চলমান। একটি অনেক আগেই তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। চালুর অপেক্ষায় আরও একটি। চলমান ব্রোকারেজ হাউজগুলো হচ্ছে উইফাং সিকিউরিটিজ লিমিটেড, আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেড ও ফার্স্ট ক্যাপিটেল সিকিউরিটিজ লিমিটেড। এর মধ্যে প্রথম দুটি ব্যবসা করছে প্রায় ১৫ বছর ধরে। আর ফার্স্ট ক্যাপিটেল ব্যবসা শুরু করে গত বছরের মাঝামাঝি থেকে।
আরও পড়ুন: নতুন বছরে শেয়ারবাজারে বেড়েছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী
এক সময় একেকটি হাউজে দৈনিক যেখানে প্রায় কোটি টাকা লেনদেন হতো, সেখানে এখন দৈনিক কয়েক লাখ টাকাও লেনদেন হয় না। বিনিয়োগকারীর পদচারণায় যে হাউজগুলো দিনভর মেতে থাকতো, সেখানে এখন সারাদিনে একজন বিনিয়োগকারীও যান না। চেয়ারগুলোও ফাঁকা পড়ে থাকে। কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীই এখন সেগুলো মাতিয়ে রাখেন। সম্প্রতি শেয়ারবাজারের টানা দরপতনের ফলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বিনিয়োগকারীরা লোকসানের মুখে পড়েছেন। অনেকের পুঁজি আবার নেমেছে অর্ধেকে। তাই কেউই শেয়ার বিক্রি করতে পারছেন না। খুব বেশি প্রয়োজন না হলে কেউ এখন শেয়ার বিক্রি করেন না। বাজার কোন পথে যায় সে ভয়ে কেনেনও না।
ক্রয়-বিক্রয় না হওয়ার কারণে ব্রোকারেজ হাউজগুলো রীতিমতো খরচ তুলতেই হিমশিম খাচ্ছে। বাজারের এমন অবস্থার জন্য বিনিয়োগকারীরা দায়ী করছেন ফ্লোর প্রাইসকে। তারা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস দিয়েছে। পরে আবার তা তুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে শেয়ারের দাম টানা পতন হয়। যখন টাকা অর্ধেক হয়ে গেছে তখন আবারও ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয়েছে। এটি ঠিক হয়নি। ফ্লোর প্রাইস যদি দিতে হয় তবে যেখানে ছিল সেখানেই ফ্লোর প্রাইস দিলে হয়তো কিছু টাকা থাকতো। এখন তো রীতিমতো পুঁজিই শেষ হয়ে গেছে। এটি করে বিনিয়োগকারীদের
বিপাকে ফেলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রাস্তায় নামলেন বিনিয়োগকারীরা
ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী মাহবুবুল আলম চৌধুরী শিবলী জানান, তার পুঁজি ছিল ৫-৬ লাখ টাকা। কিন্তু বর্তমানে আছে ২ লাখ ৪৮ হাজার টাকা। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার কারণে এটি হয় বলে তিনি দাবি করেন।
তিনি বলেন, আমার কিছু শেয়ার কেনা ছিল ৫০-৫১ টাকা করে। ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়ার কারণে সেগুলো নেমে যায় ৩৭-৩৮ টাকায়। এখন আবার ফ্লোর দেওয়া হয়েছে। দেশে এখন সব কিছুরই দাম বাড়ছে। চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ছে। শুধু কমছে শেয়ারবাজারের বিনিয়োগকারীদের পুঁজি। অথচ আমরা এখান থেকেই ট্যাক্স দিচ্ছি। এ টাকা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
নূরুল আমিন নামে আরেক বিনিয়োগকারী জানান, ফ্লোর প্রাইসের কারণে তার সব পুঁজি এখন আটকে গেছে। তিনি বলেন, নতুন বিনিয়োগ করার সাহসও পাচ্ছি না। বাজারের অবস্থা খারাপ হওয়ায় এখন টাকাও বের করতে পারছি না। এ অবস্থায় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
বিনয় ভূষণ জানান, আসলে ফ্লোর প্রাইসের কোনো সুবিধা-অসুবিধাই বুঝলাম না। প্রথমে বলা হলো শেয়ারগুলো ফ্লোর প্রাইসের নিচে নামবে না। আর কেনা একটি কোম্পানির শেয়ার দীর্ঘ ৪ মাস ৪১.২০ টাকা ফ্লোর প্রাইসে ছিল। কিন্তু হঠাৎ ফ্লোর প্রাইস তোলার পর প্রতিদিন কমতে কমতে এখন ২৯.২০ টাকায় চলে আসে। এখানে আবারও ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হয়েছে। যদি আবারও দেওয়ারই ছিল তবে আগের জায়গায় নিয়ে দিলেই হতো। বাজারের এখন চরম খারাপ অবস্থা। আজ একটি শেয়ার কিনলে তিনদিন পর দেখা যায় ৫-৭ টাকা কমে গেছে। এ অবস্থায় মানুষের আস্থা নেই বললেই চলে। এখন বিনিয়োগকারীরা কেউ আর এখানে আসেন না। আমরা মাঝে মাঝে আসি।
আরও পড়ুন: নতুন বছরে শেয়ারবাজারে বেড়েছে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারী
আইল্যান্ড সিকিউরিটিজ লিমিটেড হবিগঞ্জ শাখার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা আদিলুর রহমান জানান, একে তো রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। অন্যদিকে ফ্লোর প্রাইসে আটকে থাকার কারণে বিনিয়োগকারীরা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারছেন না। এজন্যই মূলত হাউজে উপস্থিতি একেবারেই কম। যে দু-একজন ট্রেড করেন তারা ফোনেই করেন। হাউজে আসতে চাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, হাউজগুলো তো সাধারণত ট্রেডের ওপরই নির্ভরশীল। আমাদের তো একমাত্র আয়ই হচ্ছে কমিশন। যদি ট্রেড কম হয় তবে আমাদেরও আয় হয় না।
ফার্স্ট ক্যাপিটেল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের হবিগঞ্জ শাখার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, মার্কেটের বর্তমান অবস্থা খুব ভালো নয়। কয়েক মাস ধরে ফ্লোর প্রাইসের কারণে লেনদেন স্বাভাবিক পর্যায়ে নেই। লেনদেন না থাকার কারণে হাউজগুলোর অবস্থা ভালো নয়। বিনিয়োগকারীরাও কম আসেন।
উইফাং সিকিউরিটিজ লিমিটেডের অথরাইজড রিপ্রেজেনটেটিভ তানভীর আহমেদ তুহিন জানান, বর্তমান মার্কেট খুব ভালো নেই। লেনদেন একেবারেই কম হচ্ছে। এক সময় হাউজগুলো মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকতো। এখন কেউ আসে না। প্রতিদিনই লেনদেন কমছে। মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে।
এসএইচএস/এমএস