মাইকে ডেকে দুস্থদের খাওয়ানো হয় ইফতার
সময় তখন সন্ধ্যা ৬টা। ইফতারের সময় ঘনিয়ে এসেছে। ঠিক এসময় দেখা গেলো, রাস্তায় দাঁড়িয়ে এক তরুণ মাইকে রিকশাচালক, দিনমজুর, ভিক্ষুক ও অসহায় মানুষজনকে ডাকছেন ইফতারে শরিক হওয়ার জন্য।
ভেতরে গিয়ে দেখা যায়, একদল তরুণ-তরুণী খোলা আকাশের নিচে ইফতারি তৈরি করছেন। নানাজন নানাকাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ প্লেট পরিষ্কার করছেন, কেউ শরবত বানাচ্ছেন। কেউ আপেল কাটছেন আবার কেউ সারিবদ্ধভাবে রাখা প্লেটে মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি দিচ্ছেন। এটা তাদের প্রতিদিনের চিত্র। রমজানজুড়েই একাজ চলবে বলে জানিয়েছেন তারা।
শনিবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ শহরের জামতলা এলাকার কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। ‘মুক্ততরী’ নামের একটি সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে এ ইফতারের আয়োজন করা হচ্ছে। প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার ৭০-৮০ জনকে পেট ভরে ইফতার করাচ্ছেন তারা।
বিশেষ করে যারা কোনো কাজে বাসা থেকে বের হয়েছেন এবং ইফতারের সময় হয়ে গেছে তারাও এখানে এসে শরিক হচ্ছেন। পাশাপাশি যারা দুর্বল কিংবা চোখে দেখতে পান না তাদের হাত ধরে এনে ইফতারে বসানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে মুক্ততরীর প্রতিষ্ঠাতা জয় দত্ত জাগো নিউজকে বলেন, ‘রমজানজুড়েই আমাদের এ কার্যক্রম চলবে। আমরা বিকেল থেকেই সব প্রস্তুত করতে থাকি। ইফতারের আগে প্লেটগুলো সাজিয়ে মাইকিং করা হয়। এ মুক্ত ইফতারের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করছি যেসব রিকশাচালক বা হতদরিদ্র মানুষ কষ্ট করে রোজা রেখেছেন অথবা যেসব মানুষ রোজা রেখেও ইফতারের সময় তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেননি তাদের জন্য কিছু করতে।’
সাধারণ সম্পাদক শ্রীপণ রায় বলেন, ‘আমরা এখানে যারা কাজ করি কিংবা যারা এ সংগঠনের সদস্য সবাই ছাত্র। আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি।’
সদস্য পুষ্পিতা সাহা বলেন, ‘আমরা এখানে সবাই স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করি। আমাদের সঙ্গে যারা কাজ করেন তারা সবাই শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি যদি অসহায় মানুষের জন্য কিছু করা যায় সেটাই অনেক বড় পাওয়া।’
ইফতার করতে আসা রতন মিয়া বলেন, ‘আমি একজন পথচারী। রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম। এসময় আমাকে ডেকে এনে এখানে বসিয়েছে। বসার পর আমাকে পেটভর্তি ইফতার দিয়েছে। তাদের ইফতার খেয়ে আমি অনেক খুশি।’
আমেনা বেগম বলেন, ‘আমি ভিক্ষা করি। মানুষের কাছে সাহায্য-সহযোগিতা চেয়ে আমার জীবন চলে। এখান দিয়ে যাওয়ার সময় আমাকে ডেকে এনে এখানে বসিয়েছে। পেট ভরে ইফতার খেয়েছি। তাদের জন্য দোয়া করি।’
নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দনশীল জাগো নিউজকে বলেন, এটা খুবই ভালো উদ্যোগ। তাদের জন্য শুভ কামনা। আমি মনে করি, তাদের মতো শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে বেশিদিন লাগবে না।
মোবাশ্বির শ্রাবণ/এসআর/জেআইএম