র্যাব হেফাজতে মৃত্যু
সুষ্ঠু-নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি বাসদের

র্যাব হেফাজতে মারা যাওয়া সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)।
মঙ্গলবার (২৮ মার্চ) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নওগাঁ পৌর শহরের মুক্তির মোড় শহীদ মিনারের সামনে এ মানববন্ধন করে তারা।
বাসদ জেলা শাখার আহ্বায়ক জয়নাল আবেদিন মুকুলের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও ছিলেন- বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফুর হক চৌধুরী আরব, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি কালিপদ সরকার এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সভাপতি মিজানুর রহমান।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফুর হক চৌধূরী আরব বলেন, এটার বিচার কি আছে? বিচার তো কিছুই নাই। তবে সরকারকে পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্র ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। সুলতানা জেসমিনকে নিয়ে যা হয়েছে তা একটা রাষ্ট্র সন্ত্রাসী। রাষ্ট্র প্রধান ছাড়া এটা হতে পারে না। এজন্য রাষ্ট্র প্রধানকে গদিচ্যুত করতে হবে। এজন্য আমাদের রাজপথে নেমে লড়াইয়ে জিততে হবে। এ লড়াইয়ে আমরা যদি জিততে না পারি তাহলে একটার পর একটা ঘটনা ঘটতে থাকবে। আর মানববন্ধন হতেই থাকবে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে জানিয়ে বাসদের জেলা সমন্বয়ক জয়নাল আবেদীন মুকুল বলেন, সুলতানা জেসমিন যদি অন্যায় করে থাকে আইনের ধারা অনুযায়ী তার বিচার হতো। শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে আটক করা হয়েছিল। আটকের পর তাকে কোনো থানা বা র্যাব ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়নি। আমরা তাকে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে পেয়েছি।
র্যাবের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ তুলে ধরে তিনি বলেন, সুলতানা জেসমিনের বিরুদ্ধে পরোয়ানা না থাকার পরও গ্রেফতার করা হয়েছিল। একজন আসামিকে গ্রেফতার করার জন্য উচ্চ আদালতে যে আইন আছে, নির্দেশনা আছে, সেই উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করেছে র্যাব। সুতরাং তারা আদালতকে অবমাননা করেছে। এর বাইরে দেশের যে প্রচলিত আইন আছে সেই আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে র্যাব সুলতানা জেসমিনকে নওগাঁ শহর থেকে তুলে নিয়ে গেছে। যা মানবাধিকার এবং গণতান্ত্রিক অধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। আইনের শাসনের প্রতি তারা বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে।
জয়নাল আবেদীন মুকুল আরও বলেন, এটা কোনো অস্বাভাবিক মৃত্যু না, তাকে হত্যা করা হয়েছে। আর এ ঘটনাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। যা সুষ্ঠু তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে। অনতিবিলম্বে এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাই। একইসঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
সুলতানা জেসমিন একজন ভূমি অফিসের অফিস সহকারী। তিনি নওগাঁ পৌরসভা ও চন্ডিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে কর্মরত ছিলেন। পৌর শহরের জনকল্যাণ মহল্লার ভাড়া বাসায় থাকতেন। এ বাসা থেকে নিয়মিত অফিস যাতায়াত করতেন। বুধবার সকালে অফিসে যাওয়ার পথে শহরের মুক্তির মোড় এলাকা থেকে আটক করে। ওইদিন দুপুর ১২টার পর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন সুলতানা নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়।
রামেকে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার সকালে তিনি মারা যান। ময়নাতদন্ত শেষে শনিবার বিকেলে নওগাঁ সরকারি কবরস্থানে মরদেহ দাফন হয়েছে। এরপরই র্যাবের বিরুদ্ধে জেসমিনকে হেফাজতে নিয়ে নির্যাতন করে মেরে ফেলার অভিযোগ তোলেন তার স্বজনরা।
এসজে/এমএস