দুস্থদের ঈদের চাল দুদিন পর বিতরণ!

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৫:২৫ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০২৩
ফাইল ছবি

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বগুড়ার শেরপুর পৌরসভায় দুস্থদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বিতরণের তালিকায় নয়-ছয়, ওজনে কম দেওয়া ছাড়াও নির্দিষ্ট সময়ে চাল বিতরণ না করে ঈদের দুদিন পর দেওয়া হয়েছে।

এমনকি নিজস্ব লোকজনের মধ্যে বিতরণ দেখিয়ে চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এতে উপকারভোগীদের পাশাপাশি খোদ পৌরসভার কাউন্সিলররা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সরকারিভাবে শেরপুর পৌরসভায় ৪ হাজার ৬২১ জন দুস্থ নারী-পুরুষের মধ্যে বিতরণের জন্য ভালনারেবল গ্রুপ ফিডিং (ভিজিএফ) কর্মসূচির আওতায় ৪৬ মেট্রিক টন ২২১ কেজি চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। চালগুলো ঈদের প্রায় সাতদিন আগে ১৩ এপ্রিলের মধ্যে গরিব, অসহায় ও দুস্থদের মধ্যে বিতরণ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু ওয়ার্ডভিত্তিক বিভাজন নিয়ে মেয়র-কাউন্সিলরদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। এতে ভিজিএফের চাল বিতরণ কার্যক্রম থেকে সরে যান একাধিক কাউন্সিলর। পরে তাদের বাদ রেখেই মেয়র এককভাবে ঈদের আগের দিন শুক্রবার থেকে চাল বিতরণ শুরু করেন। যা ঈদের দুদিন পর সোমবারও এ চাল বিতরণ করা হয়। আবার অনেকেই এ চাল পাননি বলে অভিযোগ উঠেছে।

শহরের পূর্বঘোষপাড়ার বাসিন্দা বেবি খাতুন ও মালেকা বিবি বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। সংসারে প্রচণ্ড অভাব। খুবই কষ্টে রোজা করেছি। তবে বিগত বছরে ঈদের সময় চাল পেলেও এবার কোনো চাল পাইনি।’

গোসাইপাড়ার গোপাল সাহা ও জগন্নাথ মোহন্ত অভিযোগ করে জাগো নিউজকে বলেন, ‘চাল বিতরণে এবার নয়-ছয় হয়েছে। প্রকৃত ব্যক্তিদের না দিয়ে নিজেদের লোকজনের মাধ্যমে চাল উত্তোলন দেখিয়ে বেশিরভাগ ভিজিএফের চাল আত্মসাৎ করা হয়েছে। ১০ কেজি করে চাল দেওয়ার কথা থাকলেও দেওয়া হয়েছে সাত কেজি করে।’

জানতে চাইলে সংশ্লিষ্ট ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নিমাই ঘোষ বলেন, ‘এবার ভিজিএফ চাল বিতরণ কার্যক্রমে আমি জড়িত ছিলাম না। তাই কারা চাল পেয়েছেন আর কারা পাননি তা বলতে পারবো না। তবে এবার ভিজিএফ চাল বিতরণে হ-য-ব-র-ল অবস্থা হয়েছে বলে শুনেছি।’

কেন এ কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর বলেন, ‘শেরপুর পৌরসভার মধ্যে দুস্থ মানুষের সংখ্যা ও অবস্থানের দিক দিয়ে আমার ওয়ার্ড দ্বিতীয়। তাই প্রতি বছর ৬০০ দরিদ্র মানুষকে এ চাল দেওয়া হয়। কিন্তু এবার হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়াই সেই তালিকায় পরিবর্তন আনা হয়। এমনকি ১০০ দুস্থ মানুষের নাম বাদ দেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে চাল বিতরণ এবার স্বচ্ছ হবে কি না, এমন শঙ্কা থেকেই এ কার্যক্রম থেকে নিজেকে দূরে রেখেছি।’

একই মন্তব্য করেন পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নাজমুল আলম খোকন।

সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শারমিন আক্তার বলেন, ‘বেশিরভাগ কাউন্সিলররা এবার ভিজিএফ চাল বিতরণে সম্পৃক্ত ছিলেন না। তাই এবার বিভিন্ন অনিয়ম হয়েছে। বিশেষ করে নির্দিষ্ট সময়ে চাল বিতরণ করা হয়নি। ঈদ উপলক্ষে চাল দেওয়া হলেও ঈদের পর বিতরণ করা হয়। ফলে সরকারের উদ্দেশ্যে ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি উপকারভোগীদের ঈদ আনন্দ ম্লান হয়ে গেছে।’

জানতে চাইলে ট্যাগ অফিসার উপজেলা উদ্ভিদ ও সংরক্ষণ কর্মকর্তা মাসুদ আলম বলেন, এবার নিয়ম মেনে পৌরসভায় চাল বিতরণ করা সম্ভব হয়নি। শুধু একটি ওয়ার্ড ছাড়া বাকি ওয়ার্ডগুলোতে কখন চাল বিতরণ করা হয়েছে তা আমাকে জানানো হয়নি। তাই এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না। তবে চাল বিতরণে নানা অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এ কর্মকর্তা।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সানজিদা সুলতানা বলেন, শেরপুর পৌরসভায় ভিজিএফের চাল বিতরণে অনিয়মের বিষয়ে শুনেছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শেরপুর পৌরসভার মেয়র জানে আলম খোকা বলেন, নিয়ম মেনেই এবার ভিজিএফের চাল বিতরণ করা হয়েছে। কোনো অনিয়ম হয়নি। এছাড়া ওয়ার্ডভিত্তিক ভিজিএফ কার্ডের বিভাজন নিয়ে কাউন্সিলরদের সঙ্গে মতবিরোধ হলেও সেটি সমাধান হয়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।

এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, ধর্ম, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।