এক মেলা নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের প্রচারণা, সংঘর্ষের শঙ্কা
বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় বারুণী মেলা বসানোকে কেন্দ্র করে স্থানীয় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দুপক্ষই মেলার প্রচারণা চালাচ্ছে। এরই মধ্যে এক পক্ষের প্রচার মাইক ভাঙচুর করেছেন আরেক পক্ষের নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে দেখা দিয়েছে চরম উত্তেজনা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রতিবছর হিন্দু ধর্মীয় পঞ্জিকা তিথি অনুযায়ী করতোয় নদী সংলগ্ন উপজেলার গাড়িদহ এলাকায় বারুণী মেলা বসে। সে অনুযায়ী রোজার প্রথম সপ্তাহে মেলাটি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রমজানের পবিত্রতা রক্ষায় এবার ওই মেলা বসানো হয়নি। তবে ঈদ পরবর্তী ওই নামেই মেলার আয়োজন চলছে।
বুধবার (২৬ এপ্রিল) উপজেলার গাড়ীদহ ইউনিয়নের গাড়িদহ এলাকায় দুদিনব্যাপী এ মেলা বসার কথা। গাড়ীদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের পশ্চিম শাখার সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি মেলা বসানোর অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। পাশাপাশি মাইকযোগে মেলার প্রচার-প্রচারণা চালানো শুরু করেন। কিন্তু এককভাবে এ আয়োজনে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন গাড়ীদহ ইউনিয়নের পূর্ব শাখার সভাপতি রুবেল আহম্মেদ ও তার অনুগত দলীয় নেতাকর্মীরা।
এরই জেরে মতির পক্ষে চলা মেলার প্রচার মাইক ভাঙচুর করেন তারা। এমনকি একইস্থানে পাল্টা মেলা বসানোর ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে মেলা বসানোর অনুমতি চেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত আবেদন দেন। উভয়পক্ষ মেলা বসানোর বিষয়ে অনড় অবস্থানে থাকায় এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, দুদিনব্যাপী মেলার আয়োজন করা হলেও চলে সপ্তাহ ব্যাপী। এরমধ্যে একদিন বসে বউ মেলা। এ মেলায় রকমারি খাবার দোকান, শিশু-কিশোরদের বিভিন্ন খেলনা সামগ্রীসহ লাখ লাখ টাকার কাঠের ফার্নিচার বেচা-বিক্রি হয়। সরকারিভাবে মেলাটি ইজারা দেওয়া হয় না। তাই খাজনা আদায়ের কোনো বৈধতা নেই। কিন্তু আয়োজক দাবিদাররা মেলায় আসা সব দোকান ও বিক্রি হওয়া ফার্নিচারগুলো থেকে খাজনার নামে লাখ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে থাকেন।
টাকার একটি অংশ সব মহলকে ম্যানেজ করতে ব্যয় করা হয়ে থাকে। তাই মেলায় আসা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে প্রকাশ্যেই খাজনার নামে চাঁদা আদায়ের ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রতিকার হয় না।
এ বিষয়ে গাড়ীদহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ পশ্চিম শাখার সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি বলেন, মেলাটি আমাদের এলাকার ঐতিহ্য। তাই মেলা বসানোর অনুমতি চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করেছি। অনুমতি পেলে বারুণী মেলা বসানো হবে। এতে কোনো শক্তিই মেলা ঠেকাতে পারবে না। যে কোনো মূল্যে মেলা বসানো হবে।
প্রচার মাইক ভাঙচুরের বিষয়ে এ আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ভাঙচুরের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। থানা-পুলিশের নিকট সঠিক বিচার পাবো বলে আশা করছি। অন্যথায় মাঠেই মোকাবিলা করা হবে।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের গাড়ীদহ ইউনিয়নের পূর্ব শাখার সভাপতি রুবেল আহম্মেদ বলেন, বুধবার সেখানে আমাদের মেলা বসবে। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আমাদের পক্ষ থেকে মাইকযোগে প্রচার-প্রচারণাও চালানো হচ্ছে। তাই কোনো অপশক্তি বারুণী মেলা ঠেকাতে পারবে না। এরপরও মেলা বন্ধে যদি কোনো ধরনের চেষ্টা করা হয়, তাহলে এলাকার লোকজনই প্রতিহত করবে।
এসব জানতে চাইলে শেরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতাউর রহমান খোন্দকার জাগো নিউজকে বলেন, কোনো পক্ষই এখনো মেলার অনুমতি পায়নি। তাই মেলা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এছাড়া বারুণী এলাকার ঐতিহ্যবাহী একটি মেলা। প্রতিবছরই হয়ে আসছে। এখানে গ্রপিং বা উত্তেজনা সৃষ্টির কোনো কারণ নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সানজিদা সুলতানা জাগো নিউজকে বলেন, আমার দপ্তর থেকে কোনো মেলার অনুমতি দেওয়া হয় না। তাই বিষয়টি আমার জানা নেই। এছাড়া দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনার বিষয়টিও জানি না।
এসজে/জেআইএম