রাত ১২টা বাজার অপেক্ষায় জেলেরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি চাঁদপুর
প্রকাশিত: ০৬:৩৯ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

দুইমাস পর নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আজ মধ্যরাত থেকে শেষ হচ্ছে। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় মাছ শিকারে নামবেন জেলেরা। এ নিয়ে জেলেপাড়ায় চলছে উৎসবের আমেজ।

ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি ও জাটকার নিরাপদ বিচরণ নিশ্চিতে ২০০৬ সাল থেকে প্রতিবছর মার্চ-এপ্রিল এ দুই মাস দেশের পাঁচটি অভয়াশ্রমে জাটকা রক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে সরকার। কর্মসূচির আওতায় গত দুমাস চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরবৈরভী পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরায় ছিল নিষেধাজ্ঞা। এতে দুমাস অলস সময় কাটিয়েছেন চাঁদপুরের প্রায় অর্ধলাখ জেলে। তবে নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ায় খুশি জেলেরা। এরই মধ্যে তাদের নৌকা ও জাল মেরামতের কাজ শেষ করেছেন। এখন শুধু অপেক্ষার পালা।

মৎস্য বিভাগের দাবি, এবছর জাটকা রক্ষা কার্যক্রম সফল হয়েছে। এতে বাড়বে ইলিশের উৎপাদন। অভয়াশ্রম বাস্তবায়নে জেলা টাস্কফোর্সের সমন্বয়ে অভিযান পরিচালনা করে জেলা প্রশাসন, নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী।

jagonews24

চাঁদপুর জেলা মৎস্য বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, জাটকা রক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে এবছর ৭৩৭টি অভিযান ও ১৫৫টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতে বিভিন্ন সময় আটক হওয়া ৩৬৮ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। এছাড়া নিয়মিত অভিযানে আটক ৩১০ জেলের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করা হয়। দুমাসের অভিযানে ৮০ লাখ মিটার কারেন্ট জাল ও ৩৮ মেট্রিক টন জাটকা জব্দ করা হয়েছে।

নিষেধাজ্ঞার সময় যাতে জেলেরা নদীতে না নামেন সেজন্য নিবন্ধিত জেলেদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে চার কিস্তিতে ৪০ কেজি করে ১৬০ কেজি চাল খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে জেলেদের দাবি, শুধু চাল দিয়ে সংসার চলে না। এজন্য চালের সঙ্গে অন্যান্য সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন তারা।

সদর উপজেলার তরপুরচন্ডী ইউনিয়নের আনন্দবাজার এলাকার জেলে সুমন, জুয়েল, মাসুদ গাজীসহ বেশ কয়েকজন বলেন, শুধু চাল দিয়ে সংসার চলে না তাদের। সঙ্গে আনুষঙ্গিক যে খাদ্যদ্রব্য প্রয়োজন তা কিনতে তাদের অর্থের প্রয়োজন হয়। কিন্তু নদীতে না নামলে সে অর্থের জোগান দেওয়া তাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এতে বাধ্য হয়েই অনেক সময় জেলেরা নদীতে নামেন বলে দাবি করেন তারা।

তারপরও অপেক্ষার পালা শেষে নদীতে নামতে পারছেন, এ ভেবেই খুশি জেলেরা। অনেকেই এনজিও সংস্থা থেকে ঋণ নিয়ে জাল ও নৌকা মেরামতের কাজ শেষ করেছেন।

jagonews24

বহরিয়া এলাকার সাকুয়া গ্রামের জেলে হাসান বেপারী বলেন, ‘জাল ও নৌকা কিনতে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ হয়েছে। পুনরায় মেরামত করতে আরও ৬০ হাজার টাকা খরচ হলো। এখন আল্লাহই ভালো জানে নদীতে গিয়ে মাছ পাবো কি না।’

একই গ্রামের জয়নাল খান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমার নৌকায় ১০-১২ জন জেলে কাজ করেন। তাদের সবাইকে দাদন (সুদের ওপর ঋণ) দিতে হয়েছে ৭০-৮০ হাজার টাকা করে। সবমিলিয়ে ধারদেনা করে আমার প্রায় ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এখন নদীতে গিয়ে মাছ শিকার করে এসব দেনা পরিশোধ করতে পারবো কি না জানি না।’

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, আমরা আশা করছি, জাটকা সংরক্ষণে সফল হয়েছি। এবার ইলিশ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৬ লাখ মেট্রিক টন। তা অতিক্রম করবে বলে বিশ্বাস করি।

নজরুল ইসলাম আতিক/এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।